ঢাকায় ভ্যান চালাতেন আর্থিক টানাপড়েনে লেখাপড়াও বেশি দূর করতে পারেননি। ছিল না কোনো কাজের অভিজ্ঞতাও ঢাকায় ভ্যান চালাতে চালাতে হাঁস-মুরগি গরুর খামার দেখে বেড়াতেন। খামার দেখতে দেখতে একদিন মনস্থ করে ফেললেন তিনিও খামার দিবে।
ঢাকা থেকে বাড়ি চলে এসে ছোট্ট একটি হাঁসের খামার তৈরি করেন। প্রথমে ৩৩ টাকা করে ৪০০টি হাঁসের বাচ্চা ক্রয় করে বাড়ির পাশে একটি খামার তৈরি করেন। ৪০০টি হাঁসের ১০০টি হাঁসের বাচ্চা মারা যায় ৩০০টি হাঁসের বাচ্চাগুলো বড় করেন। ৩শ টি হাস প্রতিদিন ডিম দিলে ১৫ টাকা পিস দরে বাজার বিক্রি করতেন। দুই বছর হাঁসগুলো রাখার পর তিনশোটি হাঁস প্রায় এক লাখ চল্লিশ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন।
কিছু দিন পরে আবারো হাঁসের বাচ্চা কিনেন ১০০০টি। ১০০০টি হাঁসের বাচ্চার মধ্যে ৩০০টি হাঁসের বাচ্চা অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার পরও বর্তমানে তার খামারে ৭০০ টি হাঁস রয়েছে। শীতের আগে প্রতিদিন ৪শ ডিম পেয়েছিল। সেই ডিম বাজারে বিক্রি করতেন ১৫ টাকা পিস দরে। প্রতিদিন গরে তার আয় ছিল ৬ হাজার টাকা। এই হাঁসের খামার জীবনের বদলাতে থাকে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের চম্পাতলী স্কুল পাড়া গ্রামের মহুবার আলীর। তবে শীত আসায় হাঁসগুলো আর ডিম দিচ্ছে না জানান তিনি। প্রতিদিন হাঁসগুলোকে খাওয়াতে খরচ হয় ২৪শ টাকা থেকে ২৫শ টাকা। হাঁসগুলো ডিম না দেওয়ায় বিপদে পড়েছেন মহুবার আলী। সরকারি অনুদান পেলে খামারটি আরও বড় করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
মহুবব আলী আরও জানান, অর্থনৈতিক সংকট থাকলেও পরিচর্যা চালিয়ে যান খামারের। তবে এখন বাড়িতে খাবার দেওয়া সহ হাঁস গুলোকে নদীর পাড়ে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেই। সারাদিন নদীতে খাওয়ানোর পর বিকেলে আবার নিয়ে আসি খামারে।
হাঁসের খামারটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে। সেখানে গিয়ে খামার ঘুরে দেখার পর মন ভেসে যায় তার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পে। স্ত্রী মরিয়ম ছেলে মিজানুর রহমান এই পর্যায়ে আনতে সহায়তা করেছেন বলে জানান মহুয়ার আলী।
তিনি আরো বলেন, দুই বছর ধরে হাঁস পালন করছি। নিজে না খেয়ে থাকলেও হাঁসগুলোকে দেখভাল করেছি সন্তানের মতো। আল্লাহ মুখ তুলেছেন, তাই অভাবের সংসারে সচ্ছলতা এসেছে পার করতে পেরেছি অভাবের দিনগুলো।
বাড়ির পাশে সারাদিন হাঁসের ঝাঁক নিয়ে থাকেন মহুবার। হাঁস বাড়িতে পৌঁছানোর পর তাদের পরিচর্যার দায়িত্ব পড়ে মা আর স্ত্রীর ওপর। আর হাঁসের ওষুধ, খাবার কেনা ও ডিম বিক্রির বিষয়টা দেখেন বাবা। এটা তাদের নিত্যদিনের কাজ।
কথার বলার এক পর্যায়ে অতীত স্মরণ মনে করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন মহুবার আলী বলেন, শুরুটা সহজ ছিল না, ধৈর্য আর কঠোর পরিশ্রমের ফল এই খামার। নিজে তো পড়াশুনা করতে পারি নাই। তাই খামার থেকে যা আয় করি তা দিয়ে পরিবারের চাহিদা পূরণ করি।
স্বল্প পুঁজি নিয়েও হাঁসের খামার করা যেতে পারে বলে জানালেন এ খামার মালিক। বিশেষ করে পুকুর, ডোবা অথবা খাল-বিলের পাশে খামার গড়ে তোলা উচিত। কিন্তু অনেকে হাঁসের রোগবালাই নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন।সঠিক সময়ে চিকিৎসা করলে হাঁসের রোগ নির্মূল করা সম্ভব বলে জানান তিনি।
বর্তমানে মহুবের খামারে ৭০০টি হাঁস রয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে এই হাঁসগুলোর প্রতিটি টাকা দরে বদরগঞ্জ থেকে কেনেন। খামারে আনার পর হাঁসের বাচ্চা গুলোকে বড় করার পর থেকে হাঁসগুলো ডিম দেওয়া শুরু করে। তিন মাস বিরতিহীনভাবে প্রতিদিন হাঁসগুলো গড়ে ৪০০ থেকে ৪২০টি ডিম দেয়।
প্রতিটি ডিম ১৫ টাকা হিসাবে পাইকারি বিক্রি হয় জানিয়ে মহুবার আলী বলেন, সকল খরচা বাদ দিয়ে তিন মাসে লাভ হয়েছে ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। একটি হাঁস তিন মাস একাধারে ডিম দিয়ে থাকে। ১৫-২০ দিন বিরতি দিয়ে আবারও ডিম দেয়। হাঁসের বয়স ১৭ মাস হলে ওরা ডিম কম দেয়, তখন ওগুলো বিক্রি করে দেই।
প্রতিদিনই আশপাশের এলাকা থেকে অনেকে মহুবর আলীর হাঁসের খামার দেখতে আসেন পরামর্শ নেন। এছাড়া তার সফলতা দেখে এলাকার অনেক তরুণ স্বল্প পরিসরে হাঁসের খামার গড়ে তুলেছেন বলে জানান মহুবার।
মহুবর আলীর হাঁসের খামার সত্যিই অনুকরণীয় বলছেন বদরগঞ্জ উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আবু বকর সিদ্দিক।
তিনি বলেন, হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী হয়ে সংসারের অভাব দূর করেছেন। তার এই সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে আরও অনেকে হাঁসের খামার তৈরি করছে, এতে এলাকার বেকারত্ব দূর হচ্ছে।
বদরগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আজমল হুদা তপন বলেন, বদরগঞ্জে অনেকেই নিজ উদ্যোগে খামার গড়ে যেমন স্বাবলম্বী হচ্ছেন তেমনি ডিম ও মাংসের চাহিদা মেটাচ্ছেন। আমরা প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকেও সব সময় পরামর্শ ও সহায়তা দিচ্ছি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh