কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় বেড়িবাঁধের বাহিরে জেগে ওঠা চর ও প্যারাবন উজাড় করে লবণের মাঠ তৈরি করছে স্থানীয় এক প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। সম্প্রতি এ ঘটনায় স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের নীরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনমনে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের পূর্ব চর ধুরুং ও আকবর বলী পাড়া সিমান্তবর্তী বেড়িবাঁধের বাহিরে সমুদ্রের চর ও প্যারাবন ধ্বংসাবশেষ প্রায় ৩০ একর জায়গায় বেশ কিছু সংখ্যক শ্রমিক জোরেশোরে লবণের মাঠ তৈরিতে নিয়োজিত।
স্থানীয়রা জানান, এর আগে স্কেবেটরের মাধ্যমে বালু উত্তোলন ও উপকূলীয় বন বিভাগের গড়ে তোলা প্যারাবনের সহস্রাধিক ঝাউগাছ কেটে সুকৌশলে লবণ চাষের উপযোগী করে নিয়েছে ওই প্রভাবশালী চক্র।
এদিকে গেল মাসখানেক পূর্বে স্থানীয়দের সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে ঘটনার সত্যতায় দুই লবণ শ্রমিককে আটক করে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)। পরে ফের একই ঘটনায় জড়িত না হওয়ার শর্তে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। তবে সম্প্রতি সমুদ্রের বালিয়াড়ি ধ্বংস ও ফের স্কেবেটরের মাধ্যমে বাঁধ দিয়ে চর দখল করে লবণের মাঠ তৈরির মহোৎসব চলছে। সচেতন মহলের দাবি, এ ঘটনায় বারংবার অবগত করা হলেও কোনো এক অদৃশ্য কারণে সাড়া দেয়নি স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে সরকারি জায়গায় লবণের মাঠ তৈরি অব্যাহত রেখেছেন এবং প্রভাবশালী ওই সিন্ডিকেটের সাথে প্রশাসনের তিন স্তরের কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।
স্থানীয়রা জানান, উপকূলীয় এ দ্বীপ সুরক্ষার প্রহরী হিসেবে স্থানীয় বন বিভাগ ওই জায়গায় প্যারাবন সৃজন করে। সৃজিত এই বনের কারণে তথায় জেগে উঠেছে বিশাল একটি চর। চলতি লবণ উৎপাদন মৌসুমের আগে প্যারাবন সমৃদ্ধ সরকারি ওই জায়গার উপর প্রলোভ পড়ে স্থানীয় ১০/১২ জনের একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের। সম্প্রতি এসব চর ও প্যারাবন ধ্বংসের কারণে বর্ষার জলোচ্ছ্বাসে হুমকির মুখে প্রায় ৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। দ্রুত এর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে অতীতের ন্যায় সমুদ্র বেষ্টিত এ দ্বীপ বেড়িবাঁধ ভাঙ্গনে ক্রমান্বয়ে আরো সংকীর্ণ হয়ে যাবে।
এদিকে প্যারাবন কেটে লবণের মাঠ তৈরি করলেও নীরব সংশ্লিষ্টরা। এমনকি ওই এলাকায় বনবিভাগের সৃজিত কি পরিমাণ প্যারাবন রয়েছে সে বিষয়েও মুখ খুলতে রাজি হয়নি স্থানীয় রেঞ্জ কর্মকর্তা শামীম রেজা।
কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাশেদুল ইসলাম পূর্বকোণকে জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শনপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সরেজমিনে সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে পাঠানো হবে।
এছাড়া লবণ মাঠ তৈরির অনুমতি সাপেক্ষে প্রশাসনের নামে কেউ টাকা নেয়ার অভিযোগ পেলে দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।