প্রতীকী ছবি
প্রতিনিয়তই এই ধরনের সংবাদের সঙ্গে আমাদের পরিচয় ঘটে। কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতা চোখে পড়ে পত্রিকার পাতা খুললে। মাঝে মাঝে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিশোররাই বিশ্ব জয় করে। একটি সমাজ ও রাষ্ট্র তাদের কাঁধে ভর করে বহুদূর এগিয়ে যায়। কিন্তু সে আশা যেন গুড়ে বালি। কারণ স্মার্ট যুগের কিছিু কিশোর সুপথে না হেঁটে বিপথে পা বাড়িয়ে কিশোর গ্যাংয়ে জড়িয়ে পড়েছে। যা কারও জন্য সুখবর নয়। যে সমাজে ও রাষ্ট্রের কিশোররা বিপদগামী হয়ে উঠে, সে সমাজ ও রাষ্ট্র বেশি দূর এগোতে পারে না।
এবারের খবর এসেছে ঢাকার পাশের জেলা মুন্সীগঞ্জ থেকে। খবর থেকে জানা গেছে- শ্রীনগরে এসএসসি পরীক্ষার্থী নীরব হত্যার ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এদেরকে গ্রেফতার করে শ্রীনগর থানার পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলো উপজেলার বাঘড়ার মাগডাল এলাকার মনু মিয়ার ছেলে রাজিব (১৭), আক্কাস আলী মৃধার ছেলে তাহসান (১৬), একই এলাকার সুমির ছেলে রুদ্র (১৬) ও পশ্চিম কামারগাঁও এলাকার মো.রাশেদের ছেলে শাওন (১৭) সকলেই কিশোর। এর আগে শুক্রবার বিকেলে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় বখাটেরা ছুরিকাঘাত করে এসএসসি পরীক্ষার্থী নীরবকে হত্যা করে।
নিহত নীরব হোসেন (১৬) চাঁদপুর জেলার প্রয়াত দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। প্রায় এক যুগ আগে নিহত নিরবের বাবা মারা যায়। এরপর থেকে নিরব তার মা ও ছোট ভাইকে নিয়ে নানার বাড়ি শ্রীনগর উপজেলার মধ্য কামারগাঁও এলাকায় বসবাস করত। নিরব পাশ্ববর্তী লৌহজং মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলো।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার কাজী ফজলুল হক উচ্চবিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান ছিল। ওই দিন দুপুরে বিদ্যালয়ের ফটকের সামনে কয়েকজন কিশোর বখাটে দুজন স্কুল ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করে। এ ঘটনায় নিরব ও তার সহপাঠী কয়েকজন প্রতিবাদ করায় বখাটেরা তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। শুক্রবার বিকেলে কামারগাঁওয়ের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে বসে ছিলেন নীরব ও তার বন্ধু ওহিদুল। এ সময় ১০/১২ জন কিশোর বখাটে রামদা চাকু দিয়ে নির্দয়ভাবে কুপিয়ে নিরবকে গুরুতর আহত করে বীর দর্পে চলে যায়। স্থানীয় লোকজন মুমূর্ষ অবস্থায় নীরবকে উদ্ধার করে শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শ্রীনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওয়াহিদ পারভেজ বলেন ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তদের আটক করতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়। শুক্রবার দিবাগত রাতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত চারজন কে আমরা গ্রেফতার করি। এ ঘটনায় নিহতের মা দিলারা বেগম বাদি হয়ে মামলা করার প্রস্ততি নিচ্ছে।
গত বছরের মুন্সীগঞ্জ শ্রীনগর থানাধীন কিশোর গ্যাং এর আধিপত্ব বিস্তারকে কেন্দ্র করে ব্যাবসায়ী পাপ্পু সাহার ওপর হামলা চালিয়ে লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কিশোর গ্যাং এর বিরুদ্ধে। গত সোমবার (১২ জুন ২৩) বেলা সোয়া ১টার দিকে শ্রীনগর থানাধীন ও ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত এলাকায় খাহ্রা নগেন পালের বাড়ির পাকা সড়ক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপর শ্রীনগর থানা মামলা দায়ের চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে আদালতে ১৪ জুন ২৩ মামলা দায়ের করেন দাবি পার্থ সাহা (ক্ষতি গ্রস্তের ভাই)। আসামিরা হলেন - হামলার উস্কানিদাতা আনছার উদ্দিন খান(৬২), কিশোর গাং হাতুড়ি কায়েস খান (২৫), আয়ন সেখ (২৬), ফেরদৌস বেপারি (২০), ইমরান (২৪), শাহিন (২২)।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, (১২ জুন সোমবার ২৩) দুপুরে শ্রীনগর থানা খাহ্রা এলাকার নগেন পালের বাড়ির সামনে এলাকায় পাপ্পু সাহা ব্যবসায়িক কাজ শেষে বাড়িতে ফেরার পথে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ছেন দা, হাতুড়ি, কাঠের ডাসা ইত্যাদি নিয়ে উৎপাতি বসে থাকে কিশোর গাং সদস্যরা। এবং বেআইনিভাবে পথরোধ করে। হঠাৎ পিছনে থেকে এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি মারতে থাকে একসঙ্গে সবায়। ১নং আসামি হুমুক ২নং আসামি ছেন দা, দিয়ে পাপ্পুকে জীবননাশ করার উদ্দেশ্য মাথার পিছনের অংশে কোপ মারে এবং ৪নং আসামি তাহার হাতে থাকা হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি শরীরে আঘাত করতে থাকে। তখন পাপ্পু জীবন বাঁচাতে ডান হাত দিয়ে ফিরাতে গেলে কনুইয়ের নিম্নাংশে লেগে গুরুতর আহত হোন। অন্যান্য আসামি তার কাঠের ডাসা দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি পিটাইয়া নিলাফুলা জখম করে।
এসময় পাপ্পু সাহার সঙ্গে থাকা ব্যাগ থেকে স্বর্ণের দোকানে নগদ ২ লক্ষ টাকা ও তিনভরি ওজনের স্বর্ণালঙঙ্কার ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরে পাপ্পু সাহার ডাক চিৎকার শুনে স্থানীয়রা দ্রুত শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষ ঢাকা প্রাইভেট একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। পরে আসামিরা বাড়ি এসে কোন আইনের আশ্রয় নিলে দেশ ছাড়া করিবে বলে হুমকি প্রদান করে চলে যায়।
এর আগে ১নং আসামি আনছার উদ্দিন খাহ্রা আখড়াবাড়ি মন্দিরে বাঁশঝাড় থেকে ২/৩টি বাঁশ জোরপূর্বক কেটে নিলে তার বড় ভাই পলাশ বাঁধা দেন। পরেদিন দুপুরে উস্কানিদাতার হুকুমে কিশোর গাং পাপ্পু ওপর হামলা চালায়। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ি পাপ্পু সাহা বলেন, ‘খাহ্রা নগেন পালের বাড়ির উত্তর রাস্তা আনছান নেতৃত্বে কিশোর গাং পথরোধ করে কিল-ঘুষি, হাতুড়ি, কাঠের ডাসা দিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে শুরু করে। দোকানে থেকে নগদ ২ লক্ষ টাকা ও তিন ভরি স্বর্ণা লুটপাট করে নিয়ে যায়। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।
কিন্তু আইন হাতে তুলে নেয়ার লাইসেন্স রাষ্ট্র কাউকে দেয়নি। এটি অন্যায় ও এটিগুরুতর অপরাধ। কিশোর গ্যাং বন্ধে নৈতিক শিক্ষার প্রসার ও সামাজিক জনসচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। শুধুমাত্র পুলিশ দিয়ে কিশোর গ্যাং বন্ধ করা সম্ভব নয়। নৈতিকতার অবক্ষয় ঠেকাতে না পারলে কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি বন্ধ হবে না। সর্বোপরি সবার ঐক্য প্রচেষ্টা জনসচেতনা ও আইনের শাসন নিশ্চিতকরে কিশোর গ্যাং বন্ধ করা সম্ভব।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh