‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কী ভুলিতে পারি’ গানটি শহীদ মিনারের সামনে দাঁড়িয়ে গাইতে পারে না উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। মহান ভাষা আন্দোলনের ৭১বছর পেরিয়ে গেলেও লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই কোনো শহীদ মিনার বা স্মৃতিস্তম্ভ। উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে হয় সেসব প্রতিষ্ঠানকে।
গোটা বিশ্বে ভাষার জন্য জীবনদানের নজির একমাত্র বাংলাদেশের। শহীদ মিনার হলো ভাষাশহীদদের আত্মত্যাগের স্মৃতিচিহ্ন। ভাষা আন্দোলনের রক্তেরাঙা পথ ধরে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়। মাত্র নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয় তার অনুপ্রেরণা ছিল ভাষা আন্দোলন। শহীদ মিনার নেই এরকম কিছু প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কলাগাছ, কাপড় ও বাঁশের কঞ্চি দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার বানিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে। আর যেসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার আছে সেগুলোও প্রায় বছরজুড়ে অবহেলিত ও অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়ে থাকে। এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
১৯ ফেব্রুয়ারী সোমবার দুপুরে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। আর যেসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার আছে। কতৃপক্ষের উদাসীনতায় ও সংরক্ষণের অভাবে সেগুলোও প্রায় বছরজুড়ে অবহেলিত ও অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়ে আছে। এর মধ্যে রামগঞ্জ স্টেশন মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মজুপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য আংগারপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম কাজিরখীল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, রামগঞ্জ রাব্বানিয়া কামিল মাদ্রাসা, রামগঞ্জ মহিলা দাখিল মাদ্রাসা, অভিরামপুর উচ্চ বিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজসহ প্রায় শতাধীক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন পর্যন্ত শহীদ মিনার নির্মান করা হয়নি।
উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, এই উপজেলার মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৬১টি, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৫টি, মাদ্রাসার সংখ্যা ২৬টি, কলেজের সংখ্যা ৭টিসহ মোট ২২৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠন রয়েছে।
রামগঞ্জ মহিলা দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সুমাইয়া, আয়েশা, ইয়াছমিন, ফারজানা, সাদিয়াসহ অন্যানারা বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারির দিন আমাদের বড় ভাইয়েরা বাঁশ, কলা গাছ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে। আমরা ওখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাই।
অভিরামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সালমা, পারভীন, ইশা, সুমিসহ অন্যানারা বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে তারা ২১ ফেব্রুয়ারি পালন করে। আমাদের মাদ্রাসায় শহীদ মিনার না থাকায় দিনটি পালন করতে দীর্ঘ পথ পায়ে হেটে উপজেলা পরিষদের শহীদে মিনারে ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হয়।
কয়েকজন অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শহীদ মিনার না থাকায় ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদেরকে দূরবর্তী উপজেলা শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে অনেক সময় তারা অসুস্থ হয়ে পড়ে। মহান মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে উপজেলার প্রত্যেকটি স্কুলে বাধ্যতামূলক শহীদ মিনার নির্মাণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানান তারা।
রামগঞ্জ মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সুপার শামসুল ইসলাম জানান, শহীদ মিনার না থাকায় একুশে ফেব্রুয়ারী উপলক্ষ্যে ওই দিনে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে উপজেলা পরিষদের শহীদে মিনারে ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। শহীদ মিনার নির্মানে করতে কোন অর্থ বরাদ্দ পায়নি, তবে বরাদ্দ পেলে শহীদ মিনার নির্মান করবে তারা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সালেহ আহম্মেদ বলেন, স্কুল পর্যায় থেকে সকল শিক্ষার্থীদের মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযোদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মান করা জরুরী। সেসব প্রতিষ্টানে শহীদ মিনার নির্মান করা হয়েছে সেগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষন করতে হবে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আবদুল মোহাইমেন জানান, জায়গা সংকটের কারণে কিছু কিছু স্কুলে শহীদ মিনার নির্মাণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে আমরাও চাই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দ্রুত শহীদ মিনার নির্মাণ করা হোক। যাতে স্কুল পর্যায় থেকেই সকল শিক্ষার্থীরা মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারে। যে কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই সেগুলোতে খুব শীগ্রই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মোনাজের রশিদ বলেন, কিছু কিছু বিদ্যালয় শহীদ মিনার না থাকায় অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হয় শিক্ষার্থীদের। শীগ্রই প্রত্যকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ শারমিন ইসলাম জানান, যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই, সেগুলো চিহ্নিত করে এবং যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবহেলিত অবস্থায় আছে সেগুলোর বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য উপজেলার প্রত্যকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ শিক্ষা অফিসগুলোকে নির্দেশ দেয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh