বছর পাঁচেক আগেও নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার আলতাদিঘির টলমল পানিতে ফুটত গোলাপি পদ্মফুল। বিশাল দিঘির চারপাশে ছিল হাজারো গাছপালা। গাছের ছায়ায় ঢেকে থাকা দিঘিটির শান্ত পানির দিকে তাকিয়ে চোখ জুড়িয়েছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।
কিন্তু কয়েক বছরেই বদলে গেছে আলতাদিঘির রূপ। এটা যেন এখন খেলার মাঠ। চার-পাঁচ বছর ধরে শুষ্ক মৌসুমে সেখানে পানি থাকে না। দিঘির চারপাশের গাছগুলোও আর নেই। ‘আলতাদিঘি পুনর্খননের মাধ্যমে আলতাদিঘি জাতীয় উদ্যানের জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ’ প্রকল্পের জন্য সব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।
এতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উঠেছে প্রতিবাদের ঝড়। অনেকে বলছেন, নাম জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ প্রকল্প। কিন্তু চারপাশ ফাঁকা করে দিয়ে, দিঘি ও বনের পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট করে এ কেমন জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ।
বন বিভাগ বলছে, দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় আলতাদিঘির গভীরতা কমে যায়। এ ছাড়া চারপাশের পাড় ভেঙে যাওয়ায় দিঘিটি পুনর্খনন জরুরি হয়ে পড়ে। এ জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কাটা হয়েছে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি গাছ। সেখানে দেশীয় প্রজাতির গাছ রোপণ করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের পর দিঘি, এর চারপাশ আরও সুন্দর হবে।
৪৩ একর আয়তনের আলতাদিঘিকে ‘আলতাদিঘি জাতীয় উদ্যান’ ঘোষণা করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া ২০১৬ সালে জাতীয় উদ্যানের পাশের ১৭ দশমিক ৩৪ হেক্টর বনভূমিকে ‘বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ’ এলাকা ঘোষণা করে বন অধিদপ্তর। এখন জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে ৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বন অধিদপ্তর বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের কাজ চলছে। ২০২৩ সালের ১৭ জুন আলতাদিঘি জাতীয় উদ্যানের দিঘি পুনর্খনন কাজের উদ্বোধন করা হয়। এই উন্নয়নকাজের জন্য দিঘির চারপাশের কয়েক হাজার গাছ কাটার অভিযোগ করেছেন পরিবেশকর্মীরা।
তবে উদ্যানের উন্নয়নকাজে গঠিত কমিটির সদস্য কায়েস উদ্দিনের দাবি, গাছ কাটার সিদ্ধান্ত ছিল না। হঠাৎ আলতাদিঘিতে এসে দেখি, সব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।
গত রোববার সেখানে ঘুরতে আসা জয়পুরহাট সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সাদমান সাকিব ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দিঘিটি সংস্কার জরুরি। তাই বলে এভাবে চতুর্দিকের সব গাছ কেটে ফেলতে হবে? একে আর দিঘি বলা যায় না। এ যেন এক ছোট্ট মরুভূমি!
ধামইরহাটের বন বিট কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, সামাজিক বনায়নের আওতায় স্বল্পমেয়াদি সৃজিত মেয়াদোত্তীর্ণ বাগান করতে গাছগুলো রোপণ করা হয়েছিল। এসব গাছ ১০ থেকে ১২ বছর পর কাটা যায়। সেখানে এখন নতুন বনায়ন হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নওগাঁ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, আধুনিক নকশায় গাছ রেখেই সুন্দর পরিকল্পনা করা সম্ভব।
রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রফিকুজ্জামান শাহ সংবাদ সারাবেলাকে জানান, খনন করা মাটি দিয়ে নিচু স্থান ও পাড় সংস্কারের জন্য দিঘির চারপাশের ৫৪৬টি ইউক্যালিপটাস ও ৪৫৬টি আকাশমণি গাছ কাটা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রকল্পের কাজ আগামী ডিসেম্বরে শেষ হলে পুরো আলতাদিঘি এলাকা আবারও সবুজে পরিণত হতে শুরু করবে। পাশাপাশি পরিবেশের উন্নয়ন, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচন এবং ইকো ট্যুরিজমের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh