‘কেউ নাই আমরা খুব অসহায়। ঝড় বৃষ্টি আসলে আল্লাহকে ডাকি। সারাদিন ভয়ে ভয়ে থাকি। এখানে কোন মত থেকে জীবনযাপন করতেছি। খুব অভাবের সংসার খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। খেতেই পারি না জমি কিনব কিভাবে, আর বাড়ি বানাব কিভাবে ! অনেক চেষ্টা করেও সরকারের আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর পাইনি। এখন ক্যানেলের পাশে ঝুপড়ি করে কোনমতে আছি।’
সংবাদ সারাবেলা প্রতিবেদকের সাথে আলাপচারিতায় এমন কথা বলছিলেন শেফালী-ছোড়াব দম্পতি।
শেফালী ছোড়াব-দম্পতি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে ছিট রাজীব এলাকার তিস্তা সেচ ক্যানলের পাশে একটি ঝুপড়ি তৈরি করে বসবাস করছেন।
মঙ্গলবার ( ২৯ মে) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ,নিজের জমি না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে ক্যানেলের পাশে ঝুপড়ি ঘর করে বসবাস করছেন তারা। অভাবের সংসারে ছোড়াব মিয়া বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ায় শারীরিক ভাবে অক্ষম। এতে শেফলী বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তবে অন্যের বাড়িতে কাজ করে কেন মতে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করেন তারা। কিছুদিন আগে ঝড়ে একটি ঝুপড়ির (চালা) ছাদ উঠে গেলেও অর্থের অভাবে মেরামত করতে পারেনি। অন্যের সহায়তায় সামান্য কয়টা টিন দিয়ে ঘিরে রেখেছেন ঘর। এতেই করেন বসবাস। দিনের বেলায় সূর্যের আলো থাকলেও রাতে টর্চ লাইটের আলো বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়না।
শেফালী-ছোড়াব দম্পতি আরও বলেন, 'আমাদের কেউ দেখে না। আমরা না খেয়ে আছি। সরকার যখন ঘর দেয় আমি দুইবার আবেদন করেছিলাম কিন্তু ঘর পাইনি। এখানে অসুখ হলেও দেখার মত কেউ নেই। অনেক রাত আমরা পানি খেয়ে কাটিয়েছি। সরকারের একটি পাকা ঘরের আশায় অনেক জনের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছি তবুও ঘর পাইনি। আমরা সরকারের একটা ঘর চাই। আমাদের একটা ঘর দিলে আমরা খুব ভালো থাকব।'
সদর ইউপি চেয়ারম্যান হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গ্রেনেট বাবু বলেন, 'আমি এবিষয়ে গত ইউএনও বলেছিলাম। সুযোগ না থাকার কারণে তাদের ঘর দিতে পারেনি। তারা ওখানে খুব কষ্টে জীবনযাপন করছেন। আমি ইউএনওকে আবার বলবো তাদের ঘর দেওয়ার কথা।'
এবিষয়ে কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম আশিক রেজার মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, এ উপজেলায় ১ম পর্যায়ে ১৪ টি, ২য় পর্যায়ে ১৭০টি, ৩য় পর্যায়ে ২২৭টি, ৪র্থ পর্যায়ে ৪৫টি মোট ৫৮২ গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে গৃহ ও ২ শতাংশ করে জমি দেয়া হয়েছে। এ ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৩ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা। ২০২৩ সালের ২২মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের ৭টি জেলা ও ১৫৯টি উপজেলাসহ কিশোরগঞ্জকে গৃহহীন ও ভূমিহীন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।