× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

সীতাকুণ্ডে ত্রিপুরা আদিবাসীর ৩৫০ পরিবার পেল না স্থায়ী ঠিকানা

সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) সীতাকুণ্ড

০৪ জুন ২০২৪, ২০:৩১ পিএম

সীতাকুণ্ডে পাহাড়ে ১১টি ত্রিপুরা পাড়ার ৩৫০টি আদিবাসী পরিবার বসবাস করে আসছে। তবে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার হয়ে গেলেও এখনো পেলনা তারা স্থায়ী ঠিকানাও। অর্থাৎ নিজস্ব ভূমি পায়নি ত্রিপুরা পরিবারের ২ হাজার সদস্য। অন্যের করুনায় তাদের ব্যক্তিগত পাহাড়ে যুগের পর যুগ ধরে বসবাস করলেও উচ্ছেদের আতংকে দিন কাটে আদিবাসী ত্রিপুরাদের। 

শুধু তাই নয়, এসব পাহাড়ে সরকারিভাবে বিদ্যুৎ, পানীয় জলসহ অন্যান্য কোন রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধাও দেয়া হয়নি। ফলে একটি স্বাধীন দেশের মানুষ হয়েও পরাধীন জীবন নিয়ে অতিষ্ঠ তারা। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন ইউনিয়নের পাহাড়ে রয়েছে ১১টি ত্রিপুরা আদিবাসী পাড়া। এর মধ্যে বারৈয়াঢালা পাহাড়ে রয়েছে ২টি, পৌরসদরে ২টি, বাঁশবাড়িয়ায় ১টি, কুমিরায় ৩টি এবং সোনাইছড়িতে ৩টি পাড়া আছে। এসব পাড়ায় বসবাস করে ৩৫০টি আদিবাসী পরিবার। প্রত্যেক পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫-৭ জন। সে হিসেবে ত্রিপুরা আদিবাসীর মোট জনসংখ্যা প্রায় ২ হাজার। এদিকে এসব পরিবার স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময় থেকে পাহাড়গুলোতে অস্থায়ীভাবে বসবাস করে আসলেও তাদের নিজস্ব কোন জমি নেই। ফলে তারা উৎখাতের আতংকের মধ্যেই বসবাস করছে যুগ যুগ ধরে। 

এদিকে সরেজমিনে উপজেলার সোনাইছড়ি ত্রিপুরা পাড়া, কুমিরা,পৌরসদরের মহাদেবপুর পাহাড়সহ বিভিন্ন পাহাড়ে ঘুরে ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দুঃখে কষ্টে কাটছে তাদের দিনরাত। সোনাইছড়ি ত্রিপুরা পাড়ার  বাসিন্দা প্রাক্তন ত্রিপুরা সর্দার কাঞ্চন ত্রিপুরা জানান, স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময় থেকে বংশানুক্রমে তারা এই পাহাড়ে বসবাস করছেন। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে এখানে দুই ত্রিপুরা পিতা-পুত্রকে নৃশংসভাবে হত্যা করে রাজাকারের দল। পরে দেশ স্বাধীন হলে ত্রিপুরা বাসিন্দারা আশায় ছিলেন সরকার নিশ্চয়ই তাদের স্থায়ী জায়গা দিয়ে নিজস্ব ঠিকানা দেবে। কিন্তু তা হয়নি। সেই থেকে ৫৩ বছর পেরিয়ে গেল। ত্রিপুরা পাড়ার অনেক বৃদ্ধ জায়গার আশায় থেকে থেকে মারা গেল। এদিকে জায়গাটি নিজস্ব না হওয়ায় বহুবার ধর্ণা দিয়েও বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া যায়নি। হয়নি কোন বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা। পাহাড়ী ছড়া দিয়ে বসে আসা নোংরা ও কারখানার বর্জ্যবাহী পানিতেই চলে ধোয়া, স্নান ইত্যাদি। কখনো কখনো খেতেও হয়। কাঞ্চন ত্রিপুরা বলেন, নাগরিক কোন সুবিধার স্পর্শ লাগেনি এখানে। বহু দেনদরবার করে পাড়ার শিশুদের জন্য সমতলে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু এই বিদ্যালয়টি প্রায়ই বন্ধ থাকে, দেখার কেউ নেই। অসচেতনতার কারণে এ পাড়ায় কয়েক বছর আগে এক ভয়াবহ মহামারীতে ৯ শিশু মারা যায়। কিন্তু ত্রিপুরাদের দিন বদলায়নি। 

কাঞ্চন ত্রিপুরা এবং পাড়ার প্রবীন বৃদ্ধ করমদন ত্রিপুরা বলেন, আমরা এখন যে পাহাড়ে বসবাস করছি তা এক ব্যক্তির ব্যক্তিগত সম্পদ ছিলো। বেশ কয়েক বছর আগে বর্তমান সাংসদ আলহাজ্ব এস.এম আল মামুন মহোদয় পাহাড়টি কিনে নিয়েছেন। কিন্তু তাদেরকে তিনি উচ্ছেদ করেননি, তবে  কোন সময় জায়গাটি তাঁর প্রয়োজন হলে তারা কোথায় যাবেন ? তারা অন্যের জায়গায় থাকতে চান না জানিয়ে সরকারের কাছে স্থায়ী ভূমি দাবী করেন। ত্রিপুরা পরিবারগুলো খুবই খারাপ অবস্থায় বসবাস করছে বলে জানান কুমিরা ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দা বিশ্ব ত্রিপুরা । 

তিনি বলেন, এই পাহাড়টিও ব্যক্তিগত সম্পত্তি। যার সম্পত্তি তারা এখান থেকে ত্রিপুরাদের চলে যাবার জন্য বেশ কয়েকবার চাপ দিয়েছে। এখানে একটি ত্রিপুরা স্কুল ছিলো। কৌশলে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান সেই স্কুলটি সরিয়ে দিয়ে অনেক দূরে নামমাত্র বিকল্প ব্যবস্থা করলেও বর্তমানে সে স্কুলও বন্ধ। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কুমিরার ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মোর্শেদুল আলম চৌধুরী বলেন, ত্রিপুরা পরিবারগুলোর জন্য আসলেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্থায়ী ভূমির প্রয়োজন রয়েছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে.এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ত্রিপুরা পাড়ার এতগুলো পরিবারকে বসবাসের সুযোগ করে দেয়া অনেক কঠিন। তার পরেও আমি বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনবো।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । সম্পাদক: 01703-137775 । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.