ঈদুল আযহার বাকি আর মাত্র সাতদিন।ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে এদিন পশু কোরবানি করবেন দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। এসব পশুর মাংস কাটতে দা, বটি, ছুরি, চাপাতি ইত্যাদি ধাতব হাতিয়ার অপরিহার্য। আর এসব হাতিয়ার তৈরিতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন নীলফামারী কামার শিল্পীরা। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে তাদের ব্যস্ততা।
দম ফেলার যেন ফুরসত নেই তাদের।পশু জবাইয়ের জন্য ছুরি-চাকু-বটি, চাপাতিসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি কিনতে শুরু করেছেন অনেকেই। আবার কেউ কেউ একটু আগেভাগে দা, বটি, ছুরিসহ মাংস কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম শান দিয়ে নিচ্ছেন।
সরেজমিন নীলফামারী সদরের বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে, হাতুড়ি আর লোহার টুংটাং শব্দে মুখরিত কামার পাড়া। কেউ হাঁপর টানছেন, সেই হাঁপরে পুড়ছে কয়লা, জ্বলছে লোহা। কেউ কেউ হাতুড়ি পিটিয়ে তৈরি করছেন দা, বটি, ছুরিসহ মাংস কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম। ঈদের দিন পর্যন্ত চলবে তাদের এমন ব্যস্ততা।তাই খাওয়া-দাওয়া ভুলে কাজ করছেন তারা। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে কাজ। সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কয়েকগুণ ব্যস্ততা বেড়ে যায় কামারদের। প্রতিবছর কোরবানির ঈদে তাদের জিনিসপত্রের কেনা-বেচা বেড়ে যায়। এ থেকে অর্জিত টাকায় সারা বছর চলে সংসার। বছরের বেশিরভাগ সময় কামার শিল্পীদের কাজ কম থাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। তাই তারা এ সময়টাকে কাজে লাগান।
নীলফামারী বড়বাজারের আমতলিতে বাপ-বেটা মিলে কামারের দোকান পরিচালনা করেন সুব্রত কর্মকার। বাপ লোহা ধরে আছেন, ছেলে হাতুড়ি নিয়ে পেটাচ্ছেন। তাতেই তৈরি হচ্ছে চকচকে দা, ছুরি, চাপাতি, বটি, চাকু।
সুব্রত কর্মকার বলেন, কোরবানির ঈদে কাজ বেশি হয়। যে কারণে ঈদের একমাস আগে থেকেই আমাদের কাজ বাড়তে থাকে। সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও ঈদে বিশ্রামের সময়ও পাই না। ঈদের অনেক আগে থেকেই নতুন সরঞ্জাম তৈরি করে রাখি। অনেকে বানানোর সময় না পেয়ে নতুন জিনিস কিনেন।
কামার শিল্পী সঞ্জয় কর্মকার বলেন, আমার দাদাও এ কাজ করতেন। বাবা ৩০ বছর ধরে করছেন। সবমিলিয়ে ৬০ বছরের পুরোনো ব্যবসা আমাদের। বছরের এই ঈদ মৌসুমটাই আমাদের মূল টার্গেট থাকে। তাই ভালো উপার্জনের আশায় দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। তবে বেচাকেনা এখনো জমে উঠেনি। আর মাত্র সাতদিন পর ঈদ। এ সময়ে জমে ওঠার কথা দা-বটির বাজার, অথচ এবার বিক্রিই নেই। পুরোনো সরঞ্জামে অনেকেই শান দিয়ে নিচ্ছেন।
সদরের খোকশাবাড়ী এলাকার কামার শিল্পী মো. হেলাল উদ্দিন জানান, পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা, দা ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা, বটি ২৫০ থেকে ৫০০, পশু জবাইয়ের ছুরি ৩০০ থেকে ১ হাজার টাকা ও চাপাতি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে কয়লার দাম ও শ্রমিকদের মজুরি বেড়ে গেছে। তবে এখন হাতে কাজ অনেক। কাজের চাপে কখন খাওয়ার সময় চলে যাচ্ছে আমরা টেরও পাই না। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে বিক্রি তত বাড়ছে। স্থানীয় কসাইদের চাহিদা মিটিয়ে বাইরের এলাকা থেকেও অর্ডার নেওয়া হচ্ছে। সারা বছর কাজের চাপ থাকে না। যা লাভ এই ঈদে, তাই ঈদে সামান্য একটু বেশি নিয়ে থাকি।
কোরবানির সরঞ্জাম কিনতে আসা পুলিশ লাইন্স এলাকার বাসিন্দা রুবেল মিয়া বলেন, এবার গরু একটু আগেভাগেই কিনেছি। কোরবানির জন্য প্রয়োজন চাকু ও ছুরি। সে কারণে বাজারে এসেছি দা, বটি ও ছুরি কিনতে।
অপরদিকে ক্রেতা ফিরোজ ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ঈদ উপলক্ষে দা, চাপাতি ও ছুরির দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে। ছুরি শান দেওয়ার জন্য ১০০ টাকা থেকে শুরু করে কাজের গুণাগুণের ওপর ভিত্তি করে ৩০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে।