বরিশালের
বানারীপাড়ায় পাঁচ জীবনসংগ্রামী নারী সব বিপন্নতা ও প্রতিকূলতা
জয় করে পরিবার ও সমাজে অবস্থান
তৈরি করে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন। অর্জন করেছেন জয়িতা পুরস্কার।
পুরস্কার
জয়ী পাঁচ নারী হলেন- উপজেলার সলিয়াবাকপুর
গ্রামের প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী সফল জননী জয়িতা মোসা. রুমা বেগম, বানারীপাড়া পৌরসভার এক নাম্বার ওয়ার্ডের
মো. আলম খানের স্ত্রী ফিরোজা বেগম, উপজেলার ইলুহার ইউনিয়নের মলুহার গ্রামের জুয়েল তালুকদারের স্ত্রী নাজমিন, উপজেলার লবণসাড়া গ্রামের আ. রহিম হাওলাদারের
স্ত্রী জাকিয়া পারভীন ও উপজেলার মলুহার গ্রামের আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী লাইজু।
উপজেলা
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তাদেরকে দেওয়া হয় সংবর্ধনা ।
রুমা
বেগমের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে।
সবাই প্রতিষ্ঠিত। বড় ছেলে আবু
জাফর রিপন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উপ সচিব হিসেবে
স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে
কর্মরত রয়েছেন। ছোট ছেলে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। দুই মেয়েও সুশিক্ষিত ও সমাজে প্রতিষ্ঠিত
হয়েছে। শত প্রতিকূলতা ও
আর্থিক অস্বচ্ছলতাকে পরাজিত করে আজ রুমা বেগম
সফল “জননী” জয়িতা।
ফিরোজা
বেগম অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জন করে জয়িতা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তার পোস্টমাস্টার বাবা অবসরে যাওয়ার পরে বানারীপাড়া বন্দর বাজারে একটি কাপড়ের দোকান দেন। এছাড়া নিজেদের
আরো দুইটি দোকান ভাড়ায় দেয়া ছিল। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তাদের দোকান ও বাড়িঘর পাক
হানাদার বাহিনী আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এতে তার বাবা নিঃস্ব হয়ে যান। জীবন যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ফিরোজা বেগম গাভী ও হাঁস-মুরগী পালন শুরু করেন । এছাড়া স্বামীকে একটি খেলাধুলার পণ্য সামগ্রী বিক্রয়ের দোকান করে দেন। এ দোকানের আয়
থেকে সংসার খরচের পাশাপাশি তার চার সন্তান স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। আজ
তিনি অর্থনৈতিকভাবে বেশ স্বাবলম্বী। তিনি অসহায় নারীদের পাশে থেকে শালিসের মাধ্যমে পারিবারিক সমস্যা মিটিয়ে সবার আপনজন হয়ে উঠেছেন। নাগরিক উদ্যোগের তৃণমূল নারীনেত্রী নেটওয়ার্কের কমিটির নির্বাচনে তিনি এ পর্যন্ত তিনবার
উপজেলা সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
নাজমিন
পারিবারিক নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন সাঁজিয়েছেন। পেয়েছেন সফল জয়িতা নারীর পুরস্কার । শশুর বাড়ির
যৌতুকের দাবি তার দরিদ্র বাবা মিটাতে পারেননি বলে তাকে একসময় অকথ্য অত্যাচার ও নির্যাতন
সহ্য করতে হয়েছে। তিনি ৫০০ টাকা বেতনে একটি অফিসে যোগদান করেন। পরে ধীরে ধীরে তার বেতন বাড়তে থাকে। তিনটি ছেলের মধ্যে বড় ছেলে কৃতিত্বের
সঙ্গে এ
বছর বিজ্ঞান বিভাগে এইচ. এস. সি পাশ
করেছে। মেজ ছেলে কুরআনের হাফেজ ও ছোট ছেলে
নূরানী দ্বিতীয় জামাতের শিক্ষার্থী।
জাকিয়া
পারভীন সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান ক্যাটাগরীতে সফল জয়িতা নারী। তিনি সাতটি আইনের বিষয়ে মহিলাদের প্রশিক্ষণ দেন ও মহিলা সমিতি
গঠন করেন। এলাকার মহিলারা ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে হাঁস-মুরগী ও গবাদি পশু
পালন করে স্বাবলম্বী হওয়ার পিছনে তার রয়েছে অসামান্য অবদান। যে সকল ছেলে মেয়েরা দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীতে
পড়াশুনা করার পর আর স্কুলে
যেতে পারত না তাদেরকে তিনি
লবনসাড়া রশিদ চৌকিদারের বাড়ির পাঠশালায় ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত
বিনা পয়সায় পড়িয়েছেন। ৫ম শ্রেণী পাস
করার পর যে সকল
ঝড়ে পড়া ছেলে মেয়েরা স্কুলে যেতে পারত না তাদের তিনি
বই,খাতা, কলম, জামা-কাপড় যাবতীয় খরচ বহন করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই উচ্চশিক্ষা
অর্জন করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। বাল্যবিবাহ বন্ধে লবনসাড়া গ্রামে তার বিশেষ
ভূমিকা অব্যাহত রয়েছে। মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে এবং দুস্থ ছেলে মেয়েরা যাতে মাদকের সাথে জড়িয়ে না পড়ে সেজন্য
তাদের বল, ক্রিকেট ব্যাটসহ খেলার প্রয়োজনীয় সামগ্রী
দিয়ে সহযোগিতা করে আসছেন তিনি।
উপজেলার
মলুহার গ্রামের আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী লাইজু শিক্ষা ও চাকুরীর ক্ষেত্রে
সাফল্য অর্জনকারী নারী ক্যাটাগরীতে জয়ীতা পুরস্কার পেয়েছেন। অতি অল্প বয়সে তার বিয়ে হয়ে যায়। তিনি বিয়ের পর অনেক কষ্ট
করে এসএসসি ও এইচএসসি পাস
করে ঢাকায় একটি কিন্ডার গার্টেন চাকুরী নেন। পরে তার স্বাস্থ্য বিভাগে চাকুরি হয়। চাকুরির সুবাদে এখন আধুনিক স্বচ্ছল জীবনযাপন করছেন লাইজু। অর্জন করেছেন জয়িতা পুরস্কার।
এ প্রসঙ্গে বানারীপাড়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা দিপীকা রাণী সেন বলেন, বিপন্নতা কাটিয়ে জীবন যুদ্ধে জয়ী হয়ে এই পাঁচ নারী জয়িতা পুরস্কার পেয়ে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh