প্রতীকী ছবি
কোনভাবেই নিয়ন্ত্রনে আসছে না শিক্ষক নির্যাতনের বিষয়টি। যদিও আজ থেকে পৌনে চারশ বছর আগে মোগল বাদশা আওরঙ্গযেব শিক্ষকের মর্যদা না দেওয়ায় স্বীয় সন্তানের প্রতি গোস্বা হয়েছিলেন। যদিও আওরঙ্গযেবের বিরুদ্ধে ভ্রাতৃহত্যা এমনকি বাবাকে নির্যাতনের অভিযোগ ছিল। কিন্তু সেই তিনি অন্য মানুষ যখন দেখেন স্বীয় সন্তানের কাছে শিক্ষক তার মর্যদা পাচ্ছেন না। তখনই তিনি আফসোস করেন, আমার সন্তান আপনার কাছ থেকে কেবলই গুরুজনে অবহেলা শিখেছে। নাহলে সেদিন সকালে যে দৃশ্য দেখলাম তাতে বুঝতে বাকি নেই, সন্তান আমার কোনভাবেই শিক্ষক তথা গুরু জনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শেখেনি। কাজী কাদের নেওয়াজের কবিতা থেকে আমরা মহান আওরঙ্গযেবের চরিত্রের এই দিকটা দেখতে পাই। বর্তমান সময়ে এসে হঠাৎ করেই আমাদের দেশে শিক্ষকদের অপমান আর অবমাননা স্পষ্ট হচ্ছে জাতি হিসেবে আমরা দিনকে দিন নীচের দিকেই নামতে শুরু করেছি। জানিনা এই পতনের শেষ কোথায়?
তেমনি একটি ঘটনা ঘটেছে নওগাঁর ধামইরহাটে । আমাদের মনে পড়ছে, এ ধরনের অন্যায় রোধ করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটা অফিস অর্ডার দেওয়া হয়েছিল। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার ব্যাপারে সেখানে ছিল সতর্কবার্তা। কিন্তু সুযোগসন্ধানীরা মাঝেমধ্যেই নিজেদের মতো করে লঙ্ঘন করে চলেছে সেই নির্দেশ।
রেড়িতলা একাডেমির প্রধান শিক্ষক ও তাঁর স্বামীকে একটি ক্লাসরুমে বেঁধে রেখে একজন সহকারী শিক্ষকের নেতৃত্বে কতিপয় শিক্ষার্থী ও অভিভাবক দিনভর নির্যাতন করে। নির্যাতনের কারণে তাঁদের দুজনের শরীরের বিভিন্ন জায়গা জখম হয়েছে। খবর পেয়ে সন্ধ্যার দিকে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একটি দল স্বামীসহ প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করে।
প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা দেখবে তদন্ত কমিটি। সে রকম একটি কমিটি গঠনও করা হয়েছে। খোদ ইউএনও বিষয়টি জানিয়েছেন। তদন্ত কমিটি তাদের কাজও করছে। তাহলে হঠাৎ করে প্রধান শিক্ষককে অপদস্থ করার কারণ কী? যারা নিজের হাতে আইন তুলে নিল, তাদের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তা-ও এখন জানা দরকার। শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে খবরটি পৌঁছে দেওয়া দরকার। যে সহকারী শিক্ষকের নেতৃত্বে এই অরাজকতা চলল, তিনি যদি আইনের কাঠগড়ায় না দাঁড়ান, তাহলে সবকিছুই তো মেকি বলে মনে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অমান্য করে যিনি নিজ হাতে শাস্তির ভার তুলে নিয়েছেন, তিনি যদি শাস্তি না পান, তাহলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ ধরনের অফিস অর্ডার দেওয়ার কোনো অর্থ থাকে কি?
সংস্কারের মাধ্যমে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করেছে অন্তর্র্বতী সরকার। গত বুধবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করেছেন তিনি। বলেছেন, ১ অক্টোবর থেকে কমিশনগুলো কাজ শুরু করবে। ঘুষ, দুর্নীতি, পেশিশক্তির অবসান ঘটবেএ রকম একটি স্বপ্ন আছে তাতে। কিন্তু গোড়ায় বা তৃণমূলে গলদ থাকলে সত্যিই একটি জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। যে পদ্ধতিতে সরকার পরিচালনায় ঘুষ, দুর্নীতিনির্ভর আমলাতন্ত্র গড়ে উঠেছে, তা থেকে বেরিয়ে আসা খুব কঠিন। বহুদিনের অভ্যাস পাল্টানো মুখের কথা নয়। কিন্তু দেশের জনগণ চায় শান্তিতে, নিরাপদে এ দেশে বসবাস করতে।
এ রকম একটি আশাজাগানিয়া স্বপ্ন নিয়ে কাজ করার সময় যদি বিভিন্নভাবে অরাজকতা চলতে থাকে, তাহলে তা আশাহত করে। বস্ত্রশ্রমিকদের সঙ্গে সমঝোতা হচ্ছে না। এখনো জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে কারখানা। কোটি কোটি টাকার কারখানা কেন পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার। এখনো যদি মব জাস্টিস চলতে থাকে, তাহলে সামনের দিনগুলোয় নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
ধামইরহাটের ওই সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে সরকার। বলতে পারে, আমরা ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করলাম।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh