বাংলাদেশ
ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অষ্টম অংশীদারিত্ব সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকায়, ২০ মার্চ-২০২২
সালে। অষ্টম শব্দটি শুনলে ধারণা হতে পারে যে, এই সংলাপ একটি
ধারাবাহিক সংলাপ। বস্তুত তাই। অংশীদারিত্ব সংলাপ একটি বার্ষিক সংলাপ। প্রতি বছর উভয়পক্ষের জন্য সুবিধাজনক একটা সময়ে এই বার্ষিক সংলাপ
অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
কথা
কেন? কারণ ২০১২-এর মে মাসে
তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন যখন ঢাকা সফরে এসেছিলেন তখন দুই দেশ প্রতি বছর অংশীদারিত্ব সংলাপ সংঘটনের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। উদ্যোগটি আসে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। এই নিয়মিত সংলাপের
উদ্যোগ নেওয়া এবং তাকে একটি কাঠামোয় সজ্জিত করার কৃতিত্ব হিলারি ক্লিনটন প্রশাসনের। কেবল বাংলাদেশের সঙ্গে নয়, সমসাময়িক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশের সঙ্গেও বার্ষিক কাঠামোবদ্ধ সংলাপ অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেয়।
দু’দেশের মধ্যে বার্ষিক বা দ্বিবার্ষিক সংলাপ
নতুন কিছু নয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে এই ধরনের দ্বিপক্ষীয়
সংলাপ অনুষ্ঠান হাল আমলের কূটনীতির একটা চলমান অনুশীলন মাত্র। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে নিয়মিত ‘ফরেন অফিস কনসাল্টেশন’ আয়োজন করে থাকে। এসব কনসাল্টেশন বা বৈঠক সাধারণত
পররাষ্ট্র সচিব বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে অনুষ্ঠিত
হয়। কোন পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে তা দিয়ে দুই
দেশের সম্পর্কের মাত্রা অনুমান করা যায়। কোন কোন ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের বাইরে দুই দেশের সরকারের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়মিত বৈঠক হয়। যেমন যৌথ ইকনমিক কমিশন চুক্তির আওতায় কোন কোন দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অর্থ বা পরিকল্পনা মন্ত্রী,
কিংবা অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারিত্ব সংলাপ মূলতঃ দু’দেশের মধ্যকার
ফরেন অফিস কনসাল্টেশন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের মাত্রা বহুমুখী ও নিবিড় হওয়ায়
এই সংলাপ বাংলাদেশে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় এবং যুক্তরাষ্ট্রে পররাষ্ট্র দপ্তরের নেতৃত্বে সংগঠিত হলেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রচনায় দু’দেশের অন্যান্য
যে সমস্ত মন্ত্রনালয়, বিভাগ বা প্রতিষ্ঠানের হিস্যা
আছে তারাও সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। এই সংলাপকে অর্থবহ
করতে পৃথকভাবে দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা সংলাপ; বানিজ্য সংলাপ, এবং এখন বানিজ্য সংলাপও অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
প্রথম
বছর, অর্থাৎ ২০১২ সনে, উভয় পক্ষ সম্মত হওয়ার চার মাসের মাথায়, ১৯-২০ সেপ্টেম্বর
ওয়াশিংটন ডিসি’তে প্রথম বাংলাদেশ
যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারিত্ব সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। আজ থেকে প্রায়
সাড়ে ন’ বছর আগের
কথা। বহু কারনে সে সংলাপ এখন
দু’দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক।
আমি
সৌভাগ্যবান। পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের এমেরিকাজ উইংয়ের মহাপরিচালক হিশাবে ২০১২ থেকে ২০১৫, এই চার বছরে
আমি প্রথম চারটি অংশীদারিত্ব সম্মেলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলাম। আজ কেবল প্রথম
সম্মেলনটির উপর আলোকপাত করবো।
মিজারুল
কায়েস তখন আমাদের পররাষ্ট্র সচিব। তিনি প্রথম অংশীদারিত্ব সম্মেলনে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেন। যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের তৎকালিন আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেইট ফর
পলিটিক্যাল এফেয়ার্স মিজ ওয়েন্ডি শেরম্যান। দু’দিনব্যাপী আয়োজিত
এই সম্মেলনের প্রথম দিনটি নির্ধারিত ছিল তিনটি পৃথক বিষয়ভিত্তিক আলোচনার জন্য। ডেভলপমেন্ট ও গভর্নেস; ট্রেইড
ও ইনভেস্টমেন্ট; এবং সিকিউরিটি কো-অপারেশন। এই
তিনটি আলোচনা পরিচালনা করেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিন ও মধ্য এশিয়া
ব্যুরো’র এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি
অব স্টেইট রবার্ট ব্লেইক। বাংলাদেশ দলের আলোচনা পরিচালনা করেন তৎকালিন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ
বিভাগের সচিব মেসবাহউদ্দিন আহমেদ।
প্রথম
বিষয়ভিত্তিক বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ‘নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গসমতা’ নিয়ে আলোচনা
করেন উম্যান ইস্যুজের অ্যাম্বাস্যাডর-এট-লার্জ মেলানি
ভারভির; ‘সিভিল সোসাইটি ও গভর্নেন্স’ নিয়ে
আলোচনা করেন ডেমোক্র্যাসি, রাইটস এন্ড লেবার ব্যুরোর এম্বাস্যাডার মাইকেল কোজাক; এবং ‘দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন সহায়তা’ নিয়ে আলোচনা করেন ইউএস-এআইডি’র ডেনিস রোলিন্স।
বাংলাদেশের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আরাসতু খান ‘উন্নয়ন সহায়তা’র উপর আলোচনা
করেন এবং ওয়াশিংটনে নিযুক্ত ডেপুটি হেড অব মিশন মোহাম্মদ
মুহিত ‘সামাজিক উন্নয়ন নীতি’ নিয়ে বক্তব্য রাখেন। প্রথম দু’জন বক্তা
গ্রামীন ব্যাংক নিয়ে তাঁদের শঙ্কা ব্যক্ত করেন। মিজ রোলিন্স বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ‘জয়িতা’ কার্যক্রমের আওতা বাড়াতে ইউএস-এআইডি’র সদিচ্ছা ব্যক্ত
করেন। এম্বাস্যাডার কোজাক বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ফরেন ডোনেশন্স রেগুলেশন অর্ডন্যান্স পরিবর্তনে শঙ্কা ব্যক্ত করে বলেন যে এই পরিবর্তন
বিদেশি দাতাদের অনুৎসাহিত করবে। আরাসতু খান জানান যে যেহেতু বাংলাদেশ
যুক্তরাষ্ট্রের মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ কর্পোরেশন ঘোষিত স্কোরকার্ডে শতকরা পঞ্চাশ ভাগ স্কোর অর্জন করেছে সেহেতু বাংলাদেশ মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ কর্পোরেশন হতে আর্থিক সহায়তা আশা করে।
দ্বিতীয়
বিষয়ভিত্তিক বৈঠক ‘বাণিজ্য ও বিনিয়োগ’ এ
আলোচনার সময় ইন্টারন্যাশনাল লেবার এফেয়ার্সের বিশেষ প্রতিনিধি বারবারা শেইলর জানান ২০০৭ থেকে মার্কিন কংগ্রেস জিএসপি সুবিধার সঙ্গে নানানো শর্ত জুড়ে দেওয়া শুরু করেছে যার মধ্যে শ্রম অধিকার অন্যতম। তিনি বাংলাদেশে শ্রম অধিকার বলবৎ নেই বলে সতর্ক করেন। এই প্রসঙ্গে তিনি
শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম হত্যাকান্ডের সুবিচার না হওয়ার উদাহরন
উল্লেখ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের বানিজ্য দপ্তরের ডেপুটি প্রতিনিধি মারা বার ‘দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা
কাঠামো চুক্তি - টিকফা’ স্বাক্ষরে বাংলাদেশের সম্মত না হওয়ায় গভীর
হতাশা ব্যক্ত করেন। তিনি জানান এই চুক্তি নিয়ে
দশ বছর দর কষাকষি চললেও
শেষ পর্যন্ত তাতে সমঝোতা না হওয়া খুবই
দুঃখজনক। এনার্জি রিসোর্স ব্যুরো’র ডেপুটি এসিস্ট্যান্ট
সেক্রেটারি আমোস হোখস্টিন বাংলাদেশের সঙ্গে জ্বালানি সম্পর্ক জোরদার করতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে একাধিক প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করবে বলে জানান। রবার্ট ব্লেইক জ্বালানি খাতে শেভরন ও জেনারেল ইলেকট্রিকের
আগ্রহের কথা উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের পক্ষে জ্বালানি সচিব মেসবাহউদ্দিন আহমেদ, রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরন এলাকার নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল শহিদুল ইসলাম, বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী সদস্য খায়রুল আনাম জ্বালানি খাতে মার্কিন বিনিয়োগকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশে সম্ভাব্য সুযোগসুবিধা সম্পর্কে ধারনা দেন। শ্রম মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব ফয়জুর রহমান শ্রমিক হত্যার বিষয়টি এড়িয়ে শ্রম অধিকার রক্ষায় সরকারের কর্মসূচী সমূহের বিবরন দেন। বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের যুগ্মসচিব অমিতাভ চক্রবর্তি টিকফা বিষয়টি এড়িয়ে শুল্ক ও কোটামুক্ত বানিজ্য
সুবিধার প্রসঙ্গ নিয়ে এলে রবার্ট ব্লেইক টিকফা চুক্তিতে সম্মত না হওয়ায় পুনরায়
হতাশা ব্যক্ত করেন।
‘নিরাপত্তা
সহযোগিতা’ নিয়ে তৃতীয় বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় পলিটিক্যাল ও মিলিটারি ব্যুরোর
এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এন্ড্রু শাপিরো ‘এক্সেস মিলিটারি আর্টিকল’, ‘ফরেন মিলিটারি এসিস্ট্যান্স’ ও ‘ফরেন মিলিটারি
সেলস’ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশকে মার্কিন সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। ডেপুটি এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া হল্ট জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় ভূমিকার প্রশংসা করেন। ওয়াশিংটন ডিসি’তে নিযুক্ত বাংলাদেশের
প্রতিরক্ষা এটাশে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মইন আহমেদ বাংলাদেশে একটা ফরেনসিক পরীক্ষাগার স্থাপনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চান। আমি বেসামরিক নিরাপত্তা ইস্যুর উপর বক্তব্য রাখি। সেক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও মেরিটাইম খাতের
উপর জোর দেই এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্ভাব্য সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করি।
পরদিন
প্লেনারি আলোচনায় মিজারুল কায়েস এবং ওয়েন্ডি শেরম্যান প্রথমে বিষয়ভিত্তিক আলোচনার সারমর্ম শোনেন। তারপর একে একে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক, চীনের সম্পর্ক, জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের অংশগ্রহন এবং ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক নির্মাণ, শরণার্থী সমস্যা এবং আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যান। এই সমস্ত আলোচনায়
ওয়েন্ডি শেরম্যানের অবস্থানের সঙ্গে মিজারুল কায়েসের বক্তব্যের যথেষ্ট ফারাক থাকলেও কায়েস তাঁর স্বভাবসুলভ হাস্যরস, ভাষা ব্যবহারের মুন্সিয়ানা এবং বিষয়বস্তুর স্বচ্ছ ধারনার সাবলিল উপস্থাপনায় সবাইকে চমৎকৃত করেন।
মিজারুল
কায়েস দ্বিধাহীন ভাবে বলেন যে চীনের সঙ্গে
বাংলাদেশের সম্পর্কের যে অর্থনৈতিক ভিত্তি
তা অর্থনীতির মেরিট অনুযায়ী নির্ধারিত। ওয়েন্ডি শেরম্যান যেহেতু ইরানের সঙ্গে পারমানবিক ইস্যু নিয়ে আলোচনায় যুক্ত সেহেতু তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা জানালে কায়েস স্পষ্ট করেন যে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার
জোরে বাংলাদেশ পারমানবিক অস্ত্রবিস্তার রোধে ‘এনপিটি’ এবং ‘সিটিবিটি’Ñ দুই চুক্তিরই সমর্থক ও স্বাক্ষরকারী এবং
সীমিত নিরস্ত্রিকরনের বিপরীতে বাংলাদেশ চূড়ান্ত নিরস্ত্রিকরনে অটল। তিনি জানান যে জোট নিরপেক্ষ
আন্দোলনের শীর্ষ সম্মেলন আন্দোলনের স্পিরিটকে অক্ষুন্ন রেখেছে এবং স্বাগতিক দেশ হিশাবে ইরান তার নিজস্ব এজেন্ডা চাপিয়ে দেয়নি। তিনি ভারত মহাসাগর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহকে আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে স্বাগত জানান।
ফেরার
পথে পররাষ্ট্র সচিব আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ডিজি মহোদয়, সংলাপ কেমন হলো?’ আমি বললাম, ‘স্যার, কূটনীতি শিখলাম।’
‘কেমন?’
‘ছুরি
চালাতে হলে কেমন করে চিনি মাখাতে হয় তা শিখলাম।’
‘তাই?
ছুরি চালিয়েছে তারা?’
‘শুধু
তারা না, আপনার ডেলিবারেশনের মধ্যেও সেরকম কিছু কিছু ছিলো।’
‘আপনি
তো ডিজি। রিপোর্ট তো লিখতে হবে
আপনাকে। তখনও কি এইসব লিখবেন?’
‘লিখবো
স্যার।‘
‘কেমন?’
‘পার্টনারশিপ
ডায়লগে এসে আমি অনুভব করেছি যে যুক্তরাষ্ট্রের ডেলিগেশন
সদস্যদের মধ্যে পার্টনারশিপের স্পিরিট সচল ছিলো। দেড় বছর ধরে প্রফেসর ইউনুস নিয়ে আমাদের মাথা ভারি করে ফেললেও এবারে তা ছিলো না।
এই ডায়লগে দু’জন বক্তা
গ্রামীন ব্যাংক নিয়ে কথা বললেও একবারের জন্যও প্রফেসর ইউনুসের নাম নেয়নি।’
‘তো?
প্রফেসর সাহেবকে বিসর্জন দিয়েছে?’
‘না।
তা হয়তো দেয়নি। কিন্তু তাঁর নাম নিয়ে আলোচনাকে তিক্ত করতে চায়নি। সেজন্যই বললাম, কূটনীতি শিখলাম।’
‘আর
টিকফা?’
‘স্যার।
শুল্ক ও কোটা মুক্ত
বানিজ্য সুবিধার কথা বলি, এঁরা উত্তর দেয়, টিকফা। মেরিটাইম সহায়তার কথা বলি, এঁরা বলে টিকফা। বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা বলি, এঁরা বলে টিকফা। জিএসপি সুবিধা বাড়ানোর দাবি জানাই, এঁরা বলে টিকফা। মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ কর্পোরেশনের অর্থ সহায়তা এও টিকফা। তো
এই টিকফা স্বাক্ষর করলেই তো ল্যাঠা চুকে।‘
‘সময়
হোক। টিকফা স্বাক্ষর হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গলেও আমাদের ধৈর্যের কমতি নেই। ইট ইজ ইজিয়ার
ট্যু ফাইন্ড এ ম্যান হু
উইল ভলান্টিয়ার ট্যু ডাই, দ্যান ট্যু ফাইন্ড দৌজ হু আর উইলিং
ট্যু এন্ডিউর পেইন উইথ পেইশেন্স। কে বলেছে?‘
‘মিজারুল
কায়েস!’
‘জুলিয়াস
সিজার।’
‘আমিনুল
ইসলামের মৃত্যু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ধৈর্য দেখাচ্ছে।’
‘ধৈর্য
না। কনসিস্ট্যান্সি। শ্রম অধিকার আর জিএসপি ইস্যু
এইজন্য বারবার সামনে আনছে। তবে এখন পার পেলেও এএফএল-সিআইও’র সঙ্গে মিটিং
এ বিষয়টি এত সহজ হবে
না আমাদের জন্য। যাহোক, চীন নিয়ে তাদের আগ্রহ কেমন দেখলে?’
‘সে
তো প্লেনারিতে, আপনার সামনেই দেখালো। রোহিঙ্গা নিয়ে তাদের অতি উৎসাহের পেছনেও চীন চীন গন্ধ আছে।’
‘অবশ্যই।‘
‘স্যার।
আমার মনে হয় মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ
কর্পোরেশন ক্রমান্বয়ে ইউএস-এআইডি’র জায়গা নিবে।
আমাদের এখনই উদ্যোগ নেওয়া উচিত এমসিসি’র আনুকুল্যের জন্য।’
‘কি
করতে হবে?’
‘আমি
স্টাডি করে দেখি। প্রথমত স্কোরকার্ডে উন্নতি করতে হবে। আমি খোঁজ নিয়ে দেখি কিভাবে স্কোরিংটা হয়। তারপর একটা কৌশল বের করা যাবে। মুশকিল হলো, ইআরডি বিষয়টা দেখে। তথ্য চাইলে দেয়না।’
‘এইটা
কোন কথা না। এম্বাসি আছে। স্টেইট ডিপার্টমেন্ট আছে। এমসিসি’র সঙ্গে আমরাই
যোগাযোগ করতে পারি। যেমন, এনজিও অর্ডন্যান্স; ডিজাস্টার মেনেজমেন্ট সেন্টার; আইএলও বেটার ওয়ার্ক প্রোগ্রাম, রোহিঙ্গা, কাউন্টার-টেরোরিজম আমাদের হোমওয়ার্ক আমাদের করতে হবে। প্রথম দিনের আলোচনা কেমন হয়েছে? মেসবাহ সাহেব কেমন ছিলেন?’
‘স্যার
তো খুব সুন্দরভাবে সভা মডারেট করেছেন। বিশেষ করে গভর্নেস ইস্যুতে ফ্যাক্টগুলো গুছিয়ে তুলে ধরেছেন। এনার্জি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি আগ্রহ ছিলো। সেগুলোও এড্রেস করতে পেরেছেন।’
‘আমি
জানি। তিনি নিয়মিত ক্যাবিনেট সভায় যোগ দেন। এইসব ইস্যু নিয়ে তাঁর ধারনা পরিষ্কার। সুতরাং ডিজি মহোদয়, আপনি দ্রুত রিপোর্ট তৈরি করে ফেলেন। সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রনালয় ও
বিভাগে পাঠিয়ে দেন। আমাদের আশু করনীয় কি কি তার
তালিকা করেন। পরবর্তি সংলাপে যেন আমরা নতুন নতুন বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারি। আমাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলো সামনে আনতে পারি। মনে রাখবেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নেতৃত্ব দিতে গেলে যেমন সক্রিয় হতে হবে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গতিপ্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলেও তেমন সক্রিয় হতে হবে।’
আমি
বিনীত হয়ে বললাম, ‘স্যার, আমার মাইকেলএঞ্জেলো’র একটা উক্তি
মনে পড়েছে।’
মিজারুল
কায়েস সোৎসাহে বললেন, ‘মাইকেলএঞ্জেলো!’
‘স্যার।
তিনি বলেছেন, জিনিয়াস ইজ ইটারনাল পেইশেন্স।’
‘হুম।
গুড। এ না হলে
আমার ডিজি এমেরিকা!’
মিজারুল
কায়েসকে আমরা অকালে হারিয়েছি। কিন্তু তার হাতে শুরু হওয়া অংশীদারিত্ব সংলাপ ঘিরে এখন আমাদের আশাভরসা পল্লবিত হচ্ছে।
লেখক:
অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব ও সাবেক রাষ্ট্রদূত
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh