ছাদে বা বারান্দায় বাগান করলে গাছের যত্ন নেওয়ার দরকার হয়- যেন ভালো ফল বা ফুল পায়। বাজার থেকে নানা ধরনের সার কিনে ব্যবহার করলেও, ঘরেই পাওয়া যায় এমন কিছু জিনিস দিয়ে গাছের খেয়াল রাখা যায় একেবারে সহজে। অনেকেই হয়তো জানেন না, ডিমের খোসা গাছের জন্য দারুণ উপকারী। এই খোসা শুধু গাছকে পুষ্টি দেয় না, পোকামাকড় দূর করতেও সাহায্য করে। আর ভালো বিষয় হলো, এটা একেবারে প্রাকৃতিক ও সাশ্রয়ী উপায়।
গাছের পুষ্টি বাড়ায়
ডিমের খোসায় থাকে প্রচুর ক্যালসিয়াম, যা গাছের গঠন শক্ত করতে সাহায্য করে। খোসা ধুয়ে শুকিয়ে হালকা ভেঙে একটা জালি থলে ভরে গাছে ঝুলিয়ে দিলে সেখান থেকে আস্তে আস্তে খোসাগুলো মাটিতে মিশে যায়। এতে গাছ প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম পায়, যা তার স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
পোকামাকড় তাড়াতে সাহায্য করে
বাজারের রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার না করেও ডিমের খোসা দিয়ে প্রাকৃতিকভাবে পোকা দমন করা যায়। শুকনো খোসা গুঁড়া করে গাছের চারপাশে ছড়িয়ে দিলে তার ধারালো অংশগুলো ছোট নরম শরীরের পোকামাকড়ের জন্য বাধা তৈরি করে। এতে পোকার উপদ্রব কমে যায়।
কম্পোস্ট সার তৈরিতে
যদি আপনি নিজেই কম্পোস্ট সার বানান, তাহলে তাতে ডিমের খোসা মিশিয়ে দিন। এতে সার আরও বেশি পুষ্টিকর হয়, কারণ খোসার ক্যালসিয়াম মাটিতে ভালোভাবে কাজ করে এবং গাছকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।
পিএইচ ব্যালেন্স ঠিক রাখে
গাছ ভালোভাবে বেড়ে ওঠার জন্য মাটির অম্লতা ও ক্ষারত্বের (ঢ়ঐ) ভারসাম্য ঠিক রাখা জরুরি। ডিমের খোসায় থাকা ক্যালসিয়াম কার্বোনেট মাটির অতিরিক্ত অম্লতা কমিয়ে এনে ভারসাম্য বজায় রাখে, ফলে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়।
অপচয় কমে ও পরিবেশের উপকার হয়
ডিম তো প্রায়ই খাওয়া হয়। খোসা ফেলনা না বানিয়ে কাজে লাগালে একদিকে যেমন অপচয় কমে, অন্যদিকে আপনি পরিবেশবান্ধব একটি অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। এটা টেকসই জীবনের জন্য এক দারুণ পদক্ষেপ।
পাখিদের আকর্ষণ করে
বাগানে পাখি এলে তারা পরাগায়নে সাহায্য করে এবং ক্ষতিকর পোকা খেয়ে নেয়। পাখিদের ডিম পাড়ার সময় ক্যালসিয়ামের দরকার হয়, তাই তারা ডিমের খোসা খোঁজে। এতে বাগানের স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় থাকে।
মাটির উর্বরতা বাড়ায়
ডিমের খোসা মাটিতে মিশে প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান সরবরাহ করে। এতে মাটির গুণমান উন্নত হয় এবং গাছ ভালোভাবে বেড়ে ওঠে।
ডিম খাওয়ার পর খোসাগুলো ভালো করে ধুয়ে নিন যেন গন্ধ না থাকে। এরপর রোদে শুকিয়ে নিন। খোসাগুলো শুকিয়ে গেলে একটু চটকে নিন। এবার একটা হাওয়াযুক্ত জালি ব্যাগে ভরে বাগানে ঝুলিয়ে দিন। গাছের ডালে বা কোনো কাঠি গেঁথে থলেটি ঝুলিয়ে দিতে পারেন- যেখানে বেশি পুষ্টির দরকার।
সুতরাং, প্রতিদিন খাওয়ার পর যে ডিমের খোসা আপনি ফেলে দিতেন, সেটাই এখন হতে পারে আপনার গাছের প্রাকৃতিক পুষ্টি ও সুরক্ষার এক দুর্দান্ত উপাদান।