× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্য

ডেস্ক রিপোর্ট

০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪:১৯ পিএম

ছবি:সংগৃহীত।

কলাপাতায় ভাত খাওয়ার অভ্যাস এখন নেই বলেই চলে। একসময় গ্রামাঞ্চলে প্রায় সব অনুষ্ঠানে কলাপাতায় খাওয়া হতো। গ্রামের বিভিন্ন আয়োজনে কলাপাতায় খাবার পরিবেশন ছিল এক পরিচিত দৃশ্য। এর মাধ্যমে সমাজে গড়ে উঠত এক ধরনের পারস্পরিক বন্ধন। তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামীণ এই সংস্কৃতি।

একসময় বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলে কলাপাতায় ভাত খাওয়ার প্রচলন ছিল খুব। গ্রামবাংলার বিয়েবাড়ি, মজলিশ, শালিশ বৈঠক কিংবা পাড়ার কোনো উৎসব- এসব আয়োজন মানেই ছিল কলাপাতায় খাবার পরিবেশন। এটি শুধু খাওয়ার একটি মাধ্যম ছিল না, বরং ঐক্য, পরিশুদ্ধতা ও পরিবেশবান্ধবতার প্রতীক ছিল। খোলা মাঠে লম্বা করে ধানের খড় বিছিয়ে বসার ব্যবস্থা করা হতো। এরপরে শত শত মানুষ বসার পর দুই প্রস্থের কলাপাতা দেওয়া হতো, যাতে পাতার মাঝখানের মোটা শিরাটি দুই পাশে পড়ার সুযোগ থাকে। এতে ভাত পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। এর মধ্যে ভাত, ডাল এবং তরকারি পরিবেশন করা হতো। তবে জামালপুরসহ কিছু অঞ্চলে ভাতের সঙ্গে মিল্লি পরিবেশন করা হয়। এটি কলাপাতায় আরামে খাওয়া যায়।

শুধু অনুষ্ঠান নয়, কৃষি কাজে একসঙ্গে অনেক শ্রমিক খাওয়ানোর ক্ষেত্রেও কলাপাতা ব্যবহৃত হতো। কলাপাতায় ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত, ডাল ও আলু ভর্তা কিংবা অন্যান্য সবজি, মাছ পরিবেশন করা হতো। এই প্রাকৃতিক প্লেট শুধুই খাবার পরিবেশনের মাধ্যম ছিল না; এটি শুদ্ধতা, স্বাস্থ্য ও ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত হত। কিন্তু আজ তা শুধুই অতীত।

কলাপাতায় ভাত খাওয়া শুধু গ্রামীণ ঐতিহ্য নয়, এটি স্বাস্থ্যসম্মতও। গবেষণায় দেখা গেছে, কলাপাতার রসে থাকে সাইট্রিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং ট্যানিন। এই রস খাবারের সঙ্গে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে শরীরের নানা উপকার করে থাকে। ফলে অতিরিক্ত কোনো পরিশ্রম ছাড়াই শরীরকে সুস্থ রাখা সম্ভব হয়।

এছাড়া কলাপাতা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ও পরিবেশবান্ধব। এতে কোনো কৃত্রিম রং বা রাসায়নিক নেই এবং ব্যবহারের পর সহজেই প্রকৃতিতে মিলিয়ে যায়। কলাপাতায় ভাত খাওয়া শুধু খাওয়ার পদ্ধতি নয়; এটি এক জীবন্ত সংস্কৃতি, যা আমাদের মাটির গন্ধ, পরিবেশ সচেতনতা ও স্বাস্থ্যগত বোধের প্রতিফলন।

কিন্তু আজকাল গ্রামে কলাপাতায় খাবার পরিবেশনের দৃশ্য খুব একটা দেখা যায় না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সংস্কৃতি অনেকটাই হারিয়ে যেতে বসেছে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় জীবনধারায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। আগের মতো গ্রামে বাড়ির পাশে কলাগাছও আর তেমন দেখা যায় না।

কলাপাতা সংগ্রহ, ধোয়া এবং পরিষ্কার করে ব্যবহারযোগ্য করে তোলা সময়সাপেক্ষ। মানুষ এখন চায় সহজ ও দ্রুত সমাধান-যেমন সিরামিক, মেলামাইন প্লেট, যেগুলো বারবার ধুয়ে ব্যবহার করা যায়। বিয়ে বা বড় অনুষ্ঠানে এখন ‘ক্যাটারিং কালচার’ প্রচলিত, যেখানে তারাই খাবারের আয়োজন ও পরিবেশন করে দেয়।

এছাড়া বর্তমান বাজারে পেপার প্লেট, প্লাস্টিক প্লেট, থার্মোকল প্লেট সহজেই পাওয়া যায় এবং যা ব্যবহার শেষে ফেলে দেওয়া যায়। এতে বাড়তি ঝামেলা নেই। তাই আয়োজকরা ধীরে ধীরে কলাপাতার বদলে এসবের দিকে ঝুঁকছেন।

অন্যদিকে বর্তমান তরুণ প্রজন্ম প্রযুক্তিনির্ভর ও আন্তর্জাতিক সংস্কৃতির প্রতি বেশি আকৃষ্ট। শহুরে কিংবা আধা-শহুরে শিশু-কিশোররা জানেই না কলাপাতায় ভাত খাওয়ার স্বাদ কেমন। স্কুল, পরিবার বা সামাজিক পরিসরে এ ধরনের ঐতিহ্য নিয়ে আলোচনা বা চর্চা কম হওয়ায় তারা এই ঐতিহ্যের গুরুত্ব বোঝে না। এমনকি নাটক-সিনেমায়ও আর দেখা যায় না সেই দৃশ্য, যেখানে সবাই কলাপাতায় ভাত খাচ্ছে। ফলে এই ঐতিহ্য একদমই হারিয়ে যাচ্ছে।

আমরা চাইলে কিছু উদ্যোগের মাধ্যমে এটি নতুন রূপে ফিরিয়ে আনতে পারি। বিশেষ উৎসব বা পিঠা মেলায় কলাপাতায় খাবার পরিবেশন বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। পর্যটন খাতে ‘গ্রামীণ খাদ্য’ প্যাকেজে কলাপাতা ব্যবহারকে গুরুত্ব দেওয়া যেতে পারে। স্কুল পর্যায়ে সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে কলাপাতায় ভাত খাওয়ার আয়োজন ও আলোচনা করা যায়। সামাজিক মাধ্যমে কলাপাতায় খাবারের ছবি বা ভিডিও ছড়িয়ে দিলে নতুন প্রজন্মও আগ্রহী হবে।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.