ভাদ্র মাসের গরমে তাল পাকে- এ কথা আমাদের সবার জানা। তাল আমাদের পছন্দের হলেও গরম কিন্তু আমাদের পছন্দ নয়। গরমে জনজীবন প্রায় অতিষ্ঠ হওয়ার উপক্রম। গরম বা হিটওয়েভ শুধু অস্বস্তিই সৃষ্টি করছে না, এটি নীরবে মানুষের বার্ধক্য প্রক্রিয়াও ত্বরান্বিত করছে - সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য। খ্যাতনামা বৈজ্ঞানিক জার্নাল ন্যাচার ক্লাইমেট চেঞ্জে প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়েছে, দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত গরমে থাকার প্রভাব ধূমপান, মদ্যপান, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস কিংবা শারীরিক অনুশীলনের অভাবের মতো ক্ষতিকর হতে পারে।
তাইওয়ানের ২৫ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ওপর ১৫ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখেছেন, গরমের প্রভাবে মানুষের জৈবিক বয়স দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। এ গবেষণায় দেখা যায়, টানা দুই বছরে মাত্র চার দিন অতিরিক্ত হিটওয়েভের মুখোমুখি হলে একজন মানুষের জৈবিক বয়স প্রায় নয় দিন বেড়ে যায়। বিশেষ করে যারা বাইরে শ্রমমূলক কাজ করেন, তাদের ক্ষেত্রে এই প্রভাব আরও বেশি। এতে তাদের জৈবিক বয়স গড়ে ৩৩ দিন বৃদ্ধি পেয়েছে।
গবেষকরা জানান, এই প্রভাবের পেছনে ডিএনএ ক্ষতি, শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বৃদ্ধি, প্রদাহ এবং গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের উপর অতিরিক্ত চাপ কাজ করতে পারে। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ কিছুটা মানিয়ে নিতে পারে-যেমন ছায়ায় অবস্থান করা বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহার করা। তবুও ক্ষতিকর প্রভাব থেকে যায়।
গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, হিটওয়েভ কেবল তাৎক্ষণিক মৃত্যু বাড়ায় না, বরং নীরবে দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যের অবনতিও ঘটায়। বিশেষ করে প্রবীণ ব্যক্তি, নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠী এবং কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের মানুষের ক্ষেত্রে এর প্রভাব সবচেয়ে তীব্র।
গবেষকদের মতে, তীব্র গরম এখন আর কেবল একটি সাময়িক অসুবিধা নয়। এটি মানুষের দ্রুত বার্ধক্য ও জটিল স্বাস্থ্যঝুঁকির এক নীরব ঘাতক।