ছবি:সংগৃহীত।
দূষিত বায়ু স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি বাড়ানোর জন্য সরাসরি সম্পৃক্ত। গাড়ির ধোঁয়া, বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও শিল্প কারখানার ধোঁয়া, কাঠ পোড়ানো বা নির্মাণ উপকরণ, সালফার ডাইঅক্সাইড ও নাইট্রোজেন অক্সাইডের মতো রাসায়নিকের জটিল বিক্রিয়া ফুসফুসের গভীরে ঢুকে শ্বসনতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। গবেষকরা বলেছেন, দূষণের শিকার ব্যক্তিদের স্মৃতিভ্রংশ জাতীয় রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ১৭ শতাংশ।
জনস্বাস্থ্যে গাড়ির এক্সহস্ট পাইপ নির্গত ধোঁয়া থেকে শুরু করে বাতাসে ভেসে বেড়ানো সুক্ষ্ম ধূলিকনার বিরূপ প্রতিক্রিয়া যতটা বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে তার চেয়েও অনেক বেশি। প্রায় ৩ কোটি মানুষের তথ্য নিয়ে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, জনসাধারণের মধ্যে স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে বায়ুদূষণ।
ল্যান্সেট প্ল্যানেটারি হেলথ জার্নালে জুলাইয়ের শেষদিকে নিবন্ধ আকারে গবেষণাটির ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইউনিভার্সিটি অব কেম্ব্রিজের অধীন মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের (এমআরসি) এপিডেমিয়োলজি ইউনিটের একদল বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে।
ধারণা করা হয়, বিশ্বব্যাপী প্রায় পৌনে ৬ কোটি মানুষ আলঝেইমারের মতো স্মৃতিভ্রংশের নানা রোগে আক্রান্ত। ২০৫০ সালের মধ্যে এ সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়ে সোয়া ১৫ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।
ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার দেশগুলোয় এখন স্মৃতিভ্রংশজনিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ এখন কমতির দিকে। এ থেকে জনসাধারণের মধ্যে নীতিগত পদক্ষেপের মাধ্যমে এ রোগের প্রাদুর্ভাবকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব বলে ইঙ্গিত পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও বিশ্বের অন্যান্য স্থানে এ চিত্র এতটা আশাব্যাঞ্জক নয়।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, করাচি বা দিল্লির মতো দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান নগরীগুলোর জনস্বাস্থ্যে ব্যাপক দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে বায়ু দূষণ। বিশেষ করে বিশ্বের সবচেয়ে ঘণবসতিপূর্ণ রাজধানী শহর ঢাকা প্রতিনিয়তই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নগরীর তালিকায় ওপরের দিকে উঠে আসছে। নতুন এ গবেষণার তথ্যে এসব নগরী বা সংশ্লিষ্ট দেশের জনস্বাস্থ্য খাতের সঙ্গে সম্পৃক্তদের বিষয়টি নিয়ে দ্রুত ও কার্যকর নীতিগত পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তাই উঠে এসেছে।
স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি বৃদ্ধির সঙ্গে বায়ুদূষণের সম্পর্কটি চিহ্নিত হয়েছে খুব বেশিদিন হয়নি। কয়েকটি গবেষণায় স্মৃতিভ্রংশের প্রভাবক হিসেবে বায়ুতে দূষণ ঘটানো বেশ কিছু উপাদানকে দায়ী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। নানা গবেষণায় এসব উপাদানের ভূমিকা এবং এ ধরনের রোগের সঙ্গে এর যোগসূত্রের জায়গাগুলো উদঘাটন হয়েছে বিভিন্ন মাত্রায়।
এমআরসির এপিডেমিয়োলজি ইউনিট পরিচালিত গবেষণাটির জন্য বিদ্যমান নানা গবেষণাপত্র ও বৈজ্ঞানিক পেপারের তথ্যকে পদ্ধতিগত পর্যালোচনা ও সমন্বিত পরিসংখ্যানের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা হয়। এর মধ্য দিয়ে এ সংক্রান্ত অতীতের সবগুলো গবেষণার ফলাফলগুলোকে সমন্বয়ের মাধ্যমে সার্বিক ও স্পষ্ট একটি চিত্র তুলে ধরা সম্ভব হয়। এজন্য মোট ৫১টি গবেষণার ফলাফলকে সমন্বয় করা হয়। এসব গবেষণায় মোট ২ কোটি ৯০ লাখ মানুষের তথ্য সমন্বিত ছিল।
গবেষকরা দেখতে পান দূষিত বায়ুর তিনটি উপাদান স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরাসরি সম্পৃক্ত। এগুলো হলো পিএম ২.৫ (আড়াই মাইক্রনের কম আয়তনের সুক্ষ্ম ধুলিকণা), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড এবং কালো ধোঁয়া (গাড়ি থেকে নির্গত বা কাঠ-কয়লা পোড়ানোর মাধ্যমে তৈরি)। এর মধ্যে পিএম ২.৫-এর উৎস হলো গাড়ির ধোঁয়া, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, শিল্প কারখানার ধোঁয়া, কাঠ পোড়ানো বা নির্মাণ উপকরণ, সালফার ডাইঅক্সাইড ও নাইট্রোজেন অক্সাইডের মতো রাসায়নিকের জটিল বিক্রিয়া ইত্যাদি। এ কণা ফুসফুসের গভীরে ঢুকে শ্বসনতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি করে। গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন প্রতি ঘনমিটার বাতাসে পিএম ২.৫-এর উপস্থিতি ১০ মাইক্রোগ্রাম হলে দূষণের শিকার ব্যক্তিদের স্মৃতিভ্রংশ জাতীয় রোগ হয়।
আরেক উপাদান নাইট্রোজেন-ডাই অক্সাইডের উৎস হলো জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে পাওয়া ধোঁয়া, বিশেষ করে ডিজেল, শিল্প ও গ্যাসচালিত চুলা-হিটার থেকে উৎপন্ন ধোঁয়ায় এর মাত্রা অনেক বেশি থাকে। শ্বাসের সঙ্গে উচ্চমাত্রায় প্রবেশ করলে এটি হাঁপানি ও ফুসফুসের দুর্বলতার কারণ হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ১০ মাইক্রোগ্রাম নাইট্রোজেন-ডাই অক্সাইডের উপস্থিতি দূষণের শিকারদের স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি বাড়ায় ৩ শতাংশ।
গাড়ির এক্সহস্ট পাইপ নির্গত বা কাঠ পুড়িয়ে পাওয়া কালো ধোঁয়া শ্বাসকষ্ট ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ানোর পাশাপাশি পরিবেশকেও দূষিত করে। প্রতি ঘনমিটার বাতাসে কালো ধোঁয়ার ঘনত্ব ১ মাইক্রোগ্রাম হলে স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি বাড়ে ১৩ শতাংশ।
এমআরসি এপিডেমিওলজি ইউনিটের গবেষক ড. হানিন খ্রেইস বলেন, ‘দীর্ঘ সময় বাইরের বায়ুদূষণের মধ্যে থাকলে সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদেরও স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি বাড়ে। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করলে স্বাস্থ্য, সমাজ, অর্থনীতি ও পরিবেশসহ সব ক্ষেত্রেই সুফল মিলবে।’
গবেষকরা বলছেন, মস্তিষ্কে প্রদাহ ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস (এক ধরনের রাসায়নিক প্রক্রিয়া, যা কোষ, প্রোটিন এবং ডিএনএকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে) তৈরির মাধ্যমে দূষিত বায়ু স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি বাড়ায়। মস্তিষ্কের প্রদাহ এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস-দুটিই স্মৃতিভ্রংশের কারণ হিসেবে অতীতেও চিহ্নিত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, দূষিত বায়ু সরাসরি মস্তিষ্কে প্রবেশ করে বা যেভাবে ফুসফুস ও হৃদরোগজনিত রোগ তৈরি করে, সে একই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ ধরনের প্রভাব সৃষ্টি করে। ফুসফুস থেকে বায়ুদূষণ রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে অন্যান্য অঙ্গেও ছড়িয়ে যেতে পারে, যার ফলে কোথাও ব্যাপক প্রদাহ শুরু হয়ে তা অন্যত্র ছড়িয়ে যেতে পারে।গবেষণাটি ইউরোপিয়ান রিসার্চ কাউন্সিল ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের গবেষণা কর্মসূচির অর্থায়নে পরিচালিত হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh