ছবি: সংগৃহীত।
ঘরে প্রকৃতির ছোঁয়া রাখতে বেশ জনপ্রিয় ইনডোর প্ল্যান্ট। তবে ব্যস্ততার কারণে গাছকে সময় দিতে পারেন না অনেকেই। তখন তাদের এগুলো নিয়ে বেশ ঝামেলায় পড়তে হয়। প্রায়ই গাছ মরে যাওয়া, দুর্বল হয়ে পাতা ঝরে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। যারা নিয়মিত গাছের যত্ন নেন, তাদের কাছে এসব সমস্যা খুব বেশি না। গাছে কিন্তু শুধু পানি দিলেই তার যত্ন শেষ হয়ে যায় না। গাছের পাতায় ধুলো জমে। এতে গাছ মলিন দেখায়। তাই রুম টেম্পারেচার থাকা পানি নিয়ে পরিষ্কার নরম কাপড় বা ব্রাশ দিয়ে গাছের পাতা পরিষ্কার করে দিতে হবে। চলুন জেনে নেই কীভাবে ইনডোর প্ল্যান্টের যত্ন নিলে ভালো থাকবে-
নিয়মিত গাছে পানি দেওয়া
আমাদের ত্বকের মতো গাছেরও নিয়মিত ময়েশ্চারাইজেশন প্রয়োজন। এজন্য মাটিকে একদম শুকনো না রেখে কিছুটা ময়েশ্চারড রাখতে হবে। আবার একদম কম পানি এবং অতিরিক্ত পানিও গাছের ক্ষতি করে। ওয়াক্সি বা লেদার ধরণের পাতা আছে এমন গাছের চেয়ে পাতলা পাতা ও ঘন ঝোপের গাছে পানি বেশি লাগে। যদি মাটির উপরিভাগে অথবা গাছের গোড়ায় পানি জমে থাকে তবে বুঝতে হবে গাছে অতিরিক্ত পানি দেওয়া হয়েছে। এমন হলে গাছ মরে যেতে পারে। তাই পানি জমা দেখলেই বাড়তি পানিটুকু ফেলে দিতে হবে।
মাটির অবস্থা বোঝা
মাটির অবস্থা বোঝার জন্য একটি আঙুলের উপরিভাগ মাটির ভেতর আলতো করে ঢুকিয়ে দিন। যদি আঙুলে মাটির ময়েশ্চার বোঝা যায়, তাহলে গাছ ভালো আছে। কিন্তু যদি ড্রাই মনে হয় তাহলে বুঝতে হবে গাছে পানি প্রয়োজন।
একদম ঠান্ডা বা গরম পানির ব্যবহার নয়
অনেকেই ভাবেন, গরমের সময় গাছেরও ঠান্ডা বা শীতের সময় কিছুটা উষ্ণ পানি প্রয়োজন। এমন ভুল কখনো করবেন না। গাছের বেঁচে থাকার জন্য এ দুই ধরনের পানির প্রয়োজন হয় না। গাছের জন্য সব সময় রুম টেম্পারেচারের পানি ব্যবহার করতে হবে। বাড়তি গরম বা ঠান্ডা পানি গাছের ক্ষতি করতে পারে।
পর্যাপ্ত সূর্যের আলো
গাছের জন্য এমন জায়গা বেছে নিতে হবে যেখানে গাছ পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পায়। কারণ, ফটোসিন্থেসিসের মাধ্যমে গাছ খাবার তৈরি করে। তাই সূর্যের আলোর পরিমাণ, সময়, তীব্রতা গাছের বৃদ্ধির উপর প্রভাব ফেলে। তবে গাছ কখনো সরাসরি সূর্যের আলোতে রাখবেন না। ঘরেই এমন জায়গায় রাখুন যেখানে খুব কড়া নয়, তবে পর্যাপ্ত রোদের আলোটুকু আসে।
গাছ বারবার নড়াচড়া করা যাবে না
অনেকেই গাছ এক জায়গায় কিছুদিন ভালো না লাগলে আবার অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যান। এমন কাজ বারবার করা যাবে না। কারণ,নির্দিষ্ট পরিবেশে গাছও নিজেদেরকে মানিয়ে নেয়। বারবার জায়গা পরিবর্তনের কারণে গাছের বৃদ্ধি কমে যায়। নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে গাছের ও বেশ খানিকটা সময় লাগে।
গাছকে যদি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিতেই হয় সেক্ষেত্রে শুরুর দিকে কিছুদিন ঘন্টাখানেক তাকে নতুন জায়গায় রেখে আসুন। এভাবে সময় ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে। এডজাস্ট হয়ে গেলে এরপরই গাছ নতুন জায়গায় একবারে নিয়ে আসুন।
রুমের হিউমিডিটি বাড়িয়ে দিন
গাছের জন্য সব সময় পর্যাপ্ত আর্দ্রতার প্রয়োজন। ঘরে যদি পর্যাপ্ত আলোর বদলে একদম শুষ্ক বাতাস থাকে, তাহলে গাছের বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বড় বাধা হতে পারে। এমন হলে ঠান্ডা রাখতে ঘরের জন্য রুম হিউমিডিফায়ার প্রয়োজন। ঘরের এমন জায়গায় সেটি রাখুন যেন বাতাস থেকে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা নিতে পারে।
যদি হিউমিডিফায়ার কেনা সম্ভব না হয়, তাহলে নুড়ি পাথরও ব্যবহার করতে পারেন। একটি ট্রেতে বেশ কয়েকটি নুড়ি পাথর নিন। পানি দিয়ে নুড়িগুলো ভিজিয়ে রাখুন। এই পানি বাষ্পীভূত হয়ে ঘর আর্দ্র রাখবে।
এছাড়া একটি স্প্রে বোতলে বিশুদ্ধ পানি নিয়ে গাছে স্প্রে করে দিতে পারেন। এতেও গাছ ময়েশ্চার পাবে। কয়েকটি গাছ একসঙ্গে রাখলেও নিজেদের মধ্যে আর্দ্রতা ছড়াবে। এতে ভালো থাকবে গাছ।
মাটিতে দিন পর্যাপ্ত সার
বেশিরভাগ গাছে ১০-১০-১০ পরিমাণে সার প্রয়োজন হয়। ইনডোর প্ল্যান্টে মাটি ও সারের নির্দিষ্ট পরিমাণ রাখতে হয়। প্রথমে নাইট্রোজেন, এর উপর ফসফরাস, তার ওপর পটাশিয়াম দিয়ে নিতে হবে। সহজে মনে রাখার জন্য আপনি ঘ-চ-ক ফর্মুলাটি মনে রাখতে পারেন। ক্যাকটাস বা সাকুলেন্ট জাতীয় গাছ মরুভূমির মতো শুকনো বালি ও পাথুরে মাটি পছন্দ করে। তাদের জন্য প্রয়োজন আলাদা ধরনের ড্রেইনেজ সিস্টেমের পটিং। খেয়াল রাখতে হবে যেন পানি নিষ্কাশনের জন্য পটের নিচে ফুটো থাকে। না হলে গাছ অতিরিক্ত ময়েশ্চার ধরে রাখবে যা গাছের মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
গাছের অতিরিক্ত শাখা আর ঝোপ ছেটে দিন। এতে গাছে পোকার আক্রমণ হবে না। গাছে থাকা মরা পাতা ছিঁড়ে ফেলতে হবে যেন সেগুলো অন্য পাতা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
পাতা থেকে ধুলো পরিষ্কার
গাছে কিন্তু শুধু পানি দিলেই তার যত্ন শেষ হয়ে যায় না। গাছের পাতায় ধুলো জমে। এতে গাছ মলিন দেখায়। তাই রুম টেম্পারেচার থাকা পানি নিয়ে পরিষ্কার নরম কাপড় বা ব্রাশ দিয়ে গাছের পাতা পরিষ্কার করে দিতে হবে।
পোকা দূর করা
ঘরের গাছের আরও একটি বড় সমস্যা পোকার আক্রমণ। মিলিবাগের মতো ছোট ছোট সাদা পোকা বা অন্যান্য পোকার আক্রমণ হতে পারে গাছে। এমন হলে নার্সারিতে খোঁজ নিয়ে পোকা দূর করার ওষুধ এনে স্প্রে করতে হবে। অথবা পোকার আক্রমণ বুঝলে শুরুতেই ফার্মাসি থেকে রাবিং অ্যালকোহল নিয়ে আসুন। এবার সেটি কটন বল বা কাপড়ে লাগিয়ে পোকা ধরা ডাল বা পাতা মুঝে নিন। পোকা দূর হয়ে যাবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh