ছবি: সংগৃহীত।
ব্যস্ততা আর কাজের চাপ বেড়ে গেলে অনেক সময় আমরা সবকিছু ভুলে যায়। কথা বলার সময় খেই হারিয়ে যায়, সাধারণ কাজেও মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে যায়। এই ধরনের মানসিক ঝাপসাভাবকে অনেকেই ব্রেইন ফগ বলে। এটা আসলে কোনো আলাদা রোগ নয়, বরং কয়েকটা উপসর্গের সমষ্টি- যেমন মনোযোগ ধরে রাখতে সমস্যা, ভুলে যাওয়া, কিংবা চিন্তাভাবনায় ধীরগতি। কখনো মাথায় একসাথে অনেক চিন্তা থাকলেও এ ধরনের সমস্যা তৈরি হয়।
এই সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়ার উপায়-
নিজের প্রতি সদয় হোন
ব্রেইন ফগ যেকোনো মানুষের হতে পারে। এটা কোনো ব্যক্তিগত দুর্বলতা নয়, কিংবা আপনি কিছু সামলাতে পারছেন না, এমনও নয়। অনেক সময় এটা আসলে মস্তিষ্কের জানানোর একটা উপায় যে, সে ক্লান্ত, চাপের মধ্যে আছে বা অতিরিক্ত কাজে জর্জরিত।
নিজেকে মনে করিয়ে দিন যে ব্রেইন ফগ সাধারণত সাময়িক। তাই একটু ধীরে চলা, কিছু কাজ ভাগ করে দেওয়া বা প্রয়োজনে সাহায্য চাওয়া একেবারেই স্বাভাবিক।
তবে যদি মনে হয় বিষয়টি উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো, তাহলে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।
রুটিন তৈরি করুন
প্রতিদিন কী করবেন তা ভেবে ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা অনেকসময় ক্লান্তিকর। তাই দিনের জন্য একটি নির্দিষ্ট রুটিন বানিয়ে নিন। পরিচিত কাঠামো আপনার মস্তিষ্কের চাপ কমিয়ে দেয়। পরের ধাপে কী করতে হবে আগে থেকেই জানা থাকলে মস্তিষ্ক আর বারবার জিজ্ঞেস করে না, “আজকে কী করব?”
সকালের ও রাতের একটি নির্দিষ্ট রুটিন বানানো ভালো। এমনকি জামা আগে থেকে গুছিয়ে রাখা বা নাশতা তৈরি করে রাখা-এমন ছোটখাটো অভ্যাসও মস্তিষ্ককে বারবার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঝামেলা থেকে মুক্ত রাখে।
বিরতি নিন
আমরা অনেক সময় দেখি, আমাদের সময়সূচি ভরে থাকে একটার পর একটা কাজ দিয়ে- মিটিং, সামাজিক অনুষ্ঠান, বাজার-সদাই আর নিত্যদিনের কাজ-কোনো ফাঁকা সময়ই থাকে না।
কিন্তু এক কাজ থেকে আরেক কাজে লাফিয়ে লাফিয়ে গেলে মস্তিষ্ক পরের কাজের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ পায়না। ফলে ব্রেইন ফগ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
তাই সচেতনভাবে প্রতিটি কাজের মাঝে ছোট ছোট বিরতি রাখুন। এমনকি মাত্র ৫-১০ মিনিট হলেও চলবে- হালকা স্ট্রেচিং করা, একটু পানি খাওয়া, বাইরে গিয়ে দাঁড়ানো বা চুপচাপ বসে থাকা - এগুলোকে ‘মেন্টাল বাফার’ ভাবতে পারেন। এতে মস্তিষ্কের সুযোগ হয় আগের কাজটা প্রসেস করার, জমে থাকা চাপ ছেড়ে দেওয়ার এবং পরের কাজের জন্য প্রস্তুত হওয়ার।
ক্যালেন্ডার আর রিমাইন্ডার ব্যবহার করুন
সব অ্যাপয়েন্টমেন্ট, কাজ বা মনে করে রাখার মত বিষয়গুলো শুধু মাথায় ধরে রাখার চেষ্টা করলে খুব দ্রুতই মানসিক অগোছালোভাব আর ভুলে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়।
তাই মনে রাখার দায়িত্ব প্রযুক্তিকে দিন- ক্যালেন্ডার আর রিমাইন্ডার ব্যবহার করলে মস্তিষ্ক অনেকটা হালকা থাকে।
যে কাজগুলো নিয়মিত করতে হয় সেগুলো শিডিউল করে রাখুন, যাতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মনে করিয়ে দেয়। যেমন প্রতিদিন দুপুরের খাবারের সময় ডায়েরিতে ব্লক করে রাখা, অথবা প্রতি সপ্তাহে বিল পরিশোধ ও ঘরের কাজের জন্য রিমাইন্ডার সেট করা।
এভাবে আপনার মাথায় সারাক্ষণ ঘুরবে না-এরপর কী মনে রাখতে হবে?”
প্রতিদিনের ব্যবহারিক কৌশলগুলোর পাশাপাশি, মস্তিষ্কের যত্ন নেওয়া ও মনোযোগ বাড়ানোর জন্য কয়েকটি বিশেষ অভ্যাস রয়েছে। যাদের সংক্ষিপ্তভাবে বলে ঝডঅঘঝ। প্রতিটি অক্ষর এমন একটি অভ্যাসকে বোঝায়, যা মানসিক ঝাপসাভাব দূর করতে ও মস্তিষ্ককে সেরা অবস্থায় রাখতে সাহায্য করে।
এগুলোর নিয়মিত চর্চা করলে ব্রেইন ফগ কাটাতে অনেকটা সহায়তা করতে পারে।
ঘুম: ঘুম অপরিহার্য। এটি মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দেয় এবং স্মৃতিকে দৃঢ় করে। প্রতিদিন রাতে ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
পানি: আমাদের শরীরের প্রায় ৬০% পানি। সামান্য পানিশূন্যতাও মনোযোগ কমিয়ে দেয়। তাই সবসময় কাছে পানি রাখুন এবং নিয়মিত পান করুন।
শরীরচর্চা: শরীর নড়াচড়া করলে মস্তিষ্কে রক্ত ও অক্সিজেন প্রবাহ বেড়ে যায়, ফলে চিন্তাভাবনা পরিষ্কার হয়। হালকা হাঁটা, দৌড় বা নিয়মিত স্ট্রেচিং করতে পারেন।
পুষ্টি: প্রক্রিয়াজাত খাবারের বদলে আসল ও প্রাকৃতিক খাবার খান। কোলিন নামক এক বিশেষ উপাদান মস্তিষ্কের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ডিম, মাছ আর বাদামের মতো খাবার কোলিন সমৃদ্ধ, যা মনোযোগ ও একাগ্রতা বাড়ায়।
চাপ: দীর্ঘদিনের চাপ শরীরে কর্টিসল নামক হরমোন বাড়িয়ে দেয়, যা চিন্তাভাবনাকে অস্পষ্ট করে। চাপ কমাতে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, মাইন্ডফুলনেস আর শখের কাজগুলো কাজে লাগাতে পারেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh