কিডনি আমাদের শরীরের বর্জ্য ফিল্টার করে, তরল এবং লবণের ভারসাম্য বজায় রাখে, হরমোন তৈরি করে এবং শরীরের রসায়নকে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখে। কিডনি রোগকে বলা হয় নীরব ঘাতক। এটি বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে কম নির্ণয় করা স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে একটি। এই রোগ বিরল নয়, বরং দৃষ্টির আড়ালে লুকিয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক নেফ্রোলজি সোসাইটি অনুসারে, কিডনি রোগ বিশ্বব্যাপী ৮৫০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে প্রভাবিত করে। এর মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ এবং তীব্র কিডনি আঘাত উভয়ই অন্তর্ভুক্ত। স্পষ্ট লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার আগেই কিডনির কার্যকারিতার ৯০% পর্যন্ত হারাতে পারে।
কিডনির রোগ অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ দৈনন্দিন অভ্যাসের কারণে ত্বরান্বিত হয়। যে অভ্যাসগুলো কিডনির স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে আমাদের বেশিরভাগের ধারণাও থাকে না। সেসব অভ্যাস সম্পর্কে জানা থাকলে কিডনি রোগ থেকে দূরে থাকা সহজ হয়। প্রতিদিনের কোন অভ্যাসগুলো কিডনির ক্ষতি করতে পারে-
দীর্ঘস্থায়ী ডিহাইড্রেশন
ডিহাইড্রেশন কিডনিকে প্রস্রাব ঘনীভূত করতে এবং বর্জ্য পরিষ্কার করতে কঠোর পরিশ্রম করতে বাধ্য করে। বারবার ডিহাইড্রেশন, বিশেষ করে গরম আবহাওয়ায় কিডনির ক্ষতি করতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী ডিহাইড্রেশন, এমনকী হালকা ডিহাইড্রেশনও ধীরে ধীরে ক্ষতি ত্বরান্বিত করতে পারে। যখন প্রস্রাব গাঢ় বা স্বল্প হয়, তখন এটি একটি সতর্কতা যে আপনার শরীর এবং কিডনির আরও তরল প্রয়োজন।
অতিরিক্ত লবণ (সোডিয়াম) গ্রহণ
খাবারে অতিরিক্ত লবণ রক্তচাপ বাড়ায়। উচ্চ রক্তচাপ দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের অন্যতম প্রধান কারণ। উচ্চ রক্তচাপ কিডনির ছোট রক্তনালীগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, এর ফিল্টারিং ক্ষমতা হ্রাস করে। প্রক্রিয়াজাত খাবার, প্যাকেটজাত খাবার, টিনজাত স্যুপ, আচার এবং ফাস্ট ফুড এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে।
অত্যধিক চিনি, সোডা বা ফ্রুক্টোজ সমৃদ্ধ পানীয়
বিশেষ করে সোডা বা মিষ্টিযুক্ত পানীয় থেকে অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা, ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা এবং বিপাকীয় চাপ বৃদ্ধি করে, যা পরোক্ষভাবে কিডনির ক্ষতি করে। সাম্প্রতিক একটি নিবন্ধে তুলে ধরা হয়েছে যে সোডিয়াম, চিনি, ফসফেট সমৃদ্ধ সোডা এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার কীভাবে নীরবে কিডনির ক্ষতি করছে।
অতিরিক্ত প্রোটিন বা উচ্চ-ফসফরাসযুক্ত খাবার
প্রোটিন অপরিহার্য হলেও, অতিরিক্ত গ্রহণ (বিশেষ করে প্রাণিজ প্রোটিন) কিডনিকে অতিরিক্ত বর্জ্য ফিল্টার করতে বাধ্য করে। একইভাবে, ফসফরাস সমৃদ্ধ খাবার (প্রক্রিয়াজাত মাংস, কোলা, প্যাকেজজাত খাবার) ক্ষতি ত্বরান্বিত করতে পারে, বিশেষ করে যদি কিডনির কার্যকারিতা ইতিমধ্যেই কমে গিয়ে থাকে।
ব্যথানাশক ওষুধের (ঘঝঅওউং) ঘন ঘন অতিরিক্ত ব্যবহার
ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগ (যেমন আইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রোক্সেন, অ্যাসপিরিন বা কিছু ওভার-দ্য-কাউন্টার ব্যথানাশক) কিডনিতে রক্ত প্রবাহ হ্রাস করে এবং খুব বেশি ব্যবহার করলে তীব্র বা দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। মানুষ প্রায়শই মাথাব্যথা বা ছোটখাটো ব্যথার জন্য এগুলো গ্রহণ করে, কিন্তু বারবার বা দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার ক্ষতিকারক হতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী চাপ এবং ঘুমের অভাব
ঘুম হলো সেই সময় যখন আমাদের শরীর মেরামতের কাজ করে। দীর্ঘস্থায়ী অপর্যাপ্ত ঘুম মানসিক চাপের সঙ্গে মিলিত হয়ে উচ্চ রক্তচাপ, বিপাকীয় চাপ এবং প্রদাহের সৃষ্টি করে। যা পরোক্ষভাবে কিডনির ক্ষতি করে। ধীরে ধীরে ব্যাহত সার্কাডিয়ান রিদম এবং হরমোনের ভারসাম্যহীনতা কিডনির ক্ষয়কে ত্বরান্বিত করতে পারে।
ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন
ধূমপান কিডনির রক্তনালীকে সংকুচিত করে এবং জারণ চাপ বাড়ায়। উচ্চ পরিমাণে অ্যালকোহল শরীরকে পানিশূন্য করে এবং রক্তচাপকে প্রভাবিত করে। এই অভ্যাস রক্তনালীগুলিকে সংকুচিত করে, জারণ ক্ষতিকে উৎসাহিত করে এবং ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়, যা কিডনি রোগের প্রধান কারণ।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh