পানামার এক ছোট্ট পাহাড়ি শহর বোকে। এখানে কফি শুধু পানীয় নয়- এক ধরনের শিল্প এবং বিলাসিতার মিশ্রণ। এখানে উৎপাদিত হয় সবচেয়ে দামি কফি- গেইশা। যার প্রতি কেজি দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৬ লাখ টাকা। এ বছর আন্তর্জাতিক ‘বেস্ট অব পানামা’ নিলামে বোকেতের গেইশা কফি বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৩০ হাজার ২০৪ ডলারে। এটি আগের বছরের রেকর্ডের তিন গুণের বেশি।
পানামা কখনো বড় কফি উৎপাদক দেশ ছিল না। চাষের এলাকা ছোট, খরচ বেশি। ১৯৮৯ সালে কয়েকজন সাহসী কফিচাষি স্পেশালিটি কফি অ্যাসোসিয়েশন অব পানামা প্রতিষ্ঠা করেন এবং কফিকে সাধারণ পণ্য হিসেবে নয়, বিলাসবহুল দ্রব্য হিসেবে বাজারজাতকরণের উদ্যোগ নেন। তখন পানামার কফি খুব পরিচিত ছিল না। কিন্তু হাওয়াই ও জ্যামাইকার মতো তারা প্রতিযোগিতা ও নিলামের ধারণা চালু করল। সবকিছুর মোড় ঘুরে যায় ২০০৪ সালে। সে বছর এসমেরালদা পরিবার প্রথমবার গেইশা জাতের কফি বাজারে আনে। সূক্ষ্ম, ফুলের মতো সুবাস আর মসৃণ স্বাদ বিশ্বজুড়ে কফিপ্রেমীদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এরপর থেকে প্রতিবছর নিলামে কফির দাম নতুন রেকর্ড গড়ে।
বর্তমানে বোকেতে যাওয়া মানেই শুধু কফির স্বাদ নেওয়া নয়, এর সঙ্গে ভ্রমণের দারুণ অভিজ্ঞতাও পাওয়া যায়। শহরটি চিরিকুই প্রদেশের উত্তর-পশ্চিমে। কোস্টারিকার সীমান্ত থেকে মাত্র ৪০ মাইল দূরে। এখানে আছে বারু আগ্নেয়গিরি জাতীয় উদ্যান এবং লস কেতসালেস ট্রেইল, যেখানে দেখা যায় বিরল কেতসাল পাখি। পাহাড়ি ঝরনা, সবুজ বন আর শান্ত পরিবেশ ভ্রমণকারীদের মুগ্ধ করে।
যারা সত্যিকারের কফিপ্রেমী, তাদের একবার হলেও বোকেতে ভ্রমণ করা উচিত। পানামার বোকেতে এলাকার বিখ্যাত কফি খামার হ্যাসিয়েন্ডা লা এসমেরালদা সাধারণত পর্যটকদের জন্য খোলা থাকে না। তবে প্রতিবছর লা কোসেচা উৎসবে কয়েক দিনের জন্য খোলা হয়। সেখানে টেস্টিং, শিক্ষা কার্যক্রম ও আন্তর্জাতিক শেফদের পপ-আপ রেস্টুরেন্ট থাকে। আরও রয়েছে এলিদা কফি খামার ও আভেনচুরা কফি খামার।
এলিদা কফি খামার চার প্রজন্ম ধরে কফি চাষ করছে। এখানে ভ্রমণকারীরা গাইডেড ট্যুর ও কফি টেস্টিং করতে পারেন। আভেনচুরা কফি খামার কফি টেস্টিং, হাইকিং এবং স্পেশালিটি কফি বার অফার করে। শহরের অন্যান্য কফি শপ ও খামারও পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত আছে।
বোকেতে কফি যতই দামি হোক, শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দারুণ। পাহাড়ি ঝরনা, সবুজ চারা, শান্ত নদী- সব মিলিয়ে কফিপ্রেমী এবং পর্যটকের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
বোকেতে কফির সঙ্গে ভ্রমণ বেশ জুড়ে যায়; বিশেষ করে যারা কফিপ্রেমী তাদের। বর্তমানে বোকেতে ঘুরতে যাওয়া মানেই একসঙ্গে প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখা, স্থানীয় ঐতিহ্য উপভোগ করা এবং বিশ্বের সেরা কফির স্বাদ নেওয়া।