হঠাৎ ট্রেন বা বাস বা ট্রাকের ধাক্কায় বন্যপ্রাণীর মৃত্যুর ঘটনা গত দেড় বছরে সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কে। এমনকি সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে যাওয়া বিদ্যুতের ৩৩ কেভি জাতীয় গ্রিড লাইনে কারণেও অনেক সময় বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হচ্ছে। এ কারণে বিরল প্রজাতির অনেক বানর, হনুমান, উল্লুক, বাদুর, অজগর এমন অসংখ্য বন্যপ্রাণী বিলুপ্তির পথে রয়েছে।
এক কথায় বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্ক এখন বনের প্রাণীকুলের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, বন্যপ্রাণী অ্যাক্ট ১৯৭৪ এর ধারা ২ ও ৩ মতে ১৯৯৬ সালের ৭ জুলাই দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার মধ্যবর্তী পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ১ হাজার ২শ ৫০ হেক্টর এলাকা জাতীয় উদ্যান তথা ন্যাশনাল পার্ক (প্রকৃতির জন্য সংরক্ষিত এলাকা) ঘোষণা করে সরকার। রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ১ শ ৭১ কিলোমিটার দূরের এই বনে ফেব্রুয়ারি মাসে সর্বোচ্চ ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং জুনে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিদ্যমান থাকে । এখানের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণের লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছিলো সেই উদ্যোগ।
বন বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে জানুয়ারি ২১ থেকে গত ১৬ মাসে ১৮ টি বন্যপ্রাণী এভাবে মারা যায়। এগুলোর মধ্যে বানর ৪ টি, মুখপোড়া হনুমান ৪ টি, অজগর একটি, চশমাপরা হনুমান ২ টি,, লজ্জাবতী বানর একটি, উল্টো লেজি বানর ১ টি, চিতা বিড়াল ১ টি, গন্ধগোকুল ( খাটাশ) ১ টি, বন্য শুকর ১ টি ধোড়া সাপ ১ টি ও দাঁড়াশ সাপ ১ টি। এতগুলো প্রাণীর অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না পরিবেশ বিদেরা। তাদের দাবি, লাউয়াছড়ায় ভিতর দিয়ে যাওয়া ৭ কিলোমিটার পাকা সড়ক সরিয়ে নেওয়া ও ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণ। পাশাপাশি বিদ্যুতের তার ফাইবার অপটিক্যাল দিয়ে মুড়িয়ে নেওয়া। এই দাবির সাথে একমত বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগও। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় গত দেড় বছর ধরে এ ধরণের একটি প্রকল্পের ফাইল মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে।
বনবিভাগ জানায়, লাউয়াছড়ায় ৪ শ' ৬০ প্রজাতির জীব বৈচিত্র্য রয়েছে। ২শ ৪৬ প্রজাতির পাখি, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৪ প্রজাতির উভচর প্রাণীর বিচরণ এই বনে। এছাড়া এই ক'বছরে বন বিভাগ ১ শ' ৬৭ প্রজাতির বন্যপ্রাণী এই বনে অবমুক্ত করেছে ।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভিতর দিয়ে যাওয়া ৭ কিলোমিটার রেলপথ ও পাকা সড়ক প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের জেলা সভাপতি নুরুল মোহামিন মিল্টন সংবাদ সারাবেলাকে বলেন, বনের ভিতর দিয়ে রেলপথ ও বিদ্যুৎ লাইন থাকায় ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে অনেক বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী। বাস ট্রাকে চাপা পড়ে ও ট্রেনে কাটা পড়ে মরছেও একমাত্র রেল বিদ্যুৎ ও পাকা সড়ক হয় সরানো না হয় ফ্লাই ওভার করে বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান কো -ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোসাদ্দেক আহমেদ মানিক বলেন, বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তার জন্য আমরা বনের ভেতর বাস ট্রাক ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণে নানা কর্মসূচি শুরু করেছি।আমরা চাই লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে এলাকায় বাস ট্রেনের গতি কোন অবস্থায় ২০ কিলোমিটার এর বেশি হবে না এবং আমরা তা নিশ্চিত করতে চাই।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ
বিভাগ মৌলভীবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী সংবাদ সারাবেলাকে বলেন, দুই বছর আগে বনের ভেতর থেকে আঞ্চলিক মহাসড়কটি সরিয়ে বাইপাস সড়ক নির্মাণের জন্য একটি প্রস্তাব দিলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান তা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। কিন্তু প্রস্তাবটি এখন কোন পর্যায়ে আছে তা জানি না। বর্তমানে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাছে এ ব্যাপার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য একটি চিঠি দিয়েছি।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh