জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়ক নুরুল হাসানের একটি সিদ্ধান্তে হয়তো অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বোলিং ওপেন করতে তিনি বল তুলে দেন মোসাদ্দেক হোসেনের হাতে! চারজন বিশেষজ্ঞ বোলার নিয়ে নেমে কেন একজন অলরাউন্ডারের হাতে ইনিংস ওপেন করার জন্য বল দিলেন নুরুল হাসান? তাও আবার যাঁর আসল কাজ ব্যাটিং।
নুরুল হাসানের এই সিদ্ধান্ত যদি কাউকে অবাক করে থাকে, মোসাদ্দেক যা করেছেন, সেটা দেখে হয়তো আরও বেশি অবাক হয়েছেন সবাই! শুরুতে টানা ৫ উইকেট নিয়ে তিনি বিপর্যস্ত করে দেন জিম্বাবুয়ের ইনিংস।
নুরুল হাসানের সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করে প্রথম বলেই রেজিস চাকাভাকে ফেরান মোসাদ্দেক। প্রথম ওভারে তিনি উইকেট নেন আরও একটি, ষষ্ঠ বলে লিটন দাসের ক্যাচে পরিণত করেন ওয়েসলি মাধেভেরেকে। পরের তিন ওভারে একটি করে উইকেট নেন মোসাদ্দেক। নিজের দ্বিতীয় ওভারে এসে তুলে নেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ক্রেগ আরভিনকে। এরপর ফেরান শন উইলিয়ামস ও মিল্টন শুম্বাকে।
জিম্বাবুয়ের ৫ উইকেটে নিতে ২০ রান দিয়েছেন মোসাদ্দেক। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তো বটেই, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই এটা তাঁর সেরা বোলিং। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে যৌথভাবে এটা দ্বিতীয় সেরা বোলিং। তবে একটা জায়গা তিনি সবার চেয়ে এগিয়ে। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে প্রতিপক্ষের প্রথম পাঁচ উইকেট নেওয়া একমাত্র বোলার তিনিই।
৩১ রানে ৫ উইকেট হারিয়েও জিম্বাবুয়ের সংগ্রহটা মন্দ হয়নি। সেটি সিকান্দার রাজার কল্যাণেই। কালকের মতো আজও সিকান্দার দারুণ ব্যাটিংয়ে (৫৩ বলে ৬২) দলের সংগ্রহটা ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৩৬–এ নিয়ে যান। মোসাদ্দেকের ৫ উইকেট যেমন জিম্বাবুয়েকে বড় সংগ্রহের স্বপ্ন দেখতে দেয়নি, ঠিক তেমনি রান তাড়ায় বাংলাদেশকে পথ দেখিয়েছেন লিটন দাস, ৩৩ বলে ৫৬ রান করে।
ম্যাচ শেষে অধিনায়ক নুরুলও এ দুজনের নামই নিলেন, ‘বোলিংয়ে সুরটা ঠিক করে দিয়েছে মোসাদ্দেক, ব্যাটিংয়ে ঠিক তেমননি লিটন। সব মিলিয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স।’
এই ম্যাচের আগে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মোসাদ্দেকের উইকেট ছিল ৭টি। অনেকটা অনিয়মিত বোলার হিসেবেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যবহৃত হন তিনি। তবে নিজেকে ‘অনিয়মিত বোলার’ মানতে আপত্তি আছে মোসাদ্দেকের। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে সেটিই বললেন, ‘আমি যখন বোলিং করি, তখন কখনোই ভাবি না যে আমি অনিয়মিত বোলার। বোলিংয়ে আমি সব সময় নিয়মিত বোলারের দায়িত্বটাই নেওয়ার চেষ্টা করি।’
যেকোনো সাফল্যের পেছনেই পরিকল্পনা থাকে। আজ বোলিংয়ের আগে নিজেদের পরিকল্পনাটাও জানিয়েছেন মোসাদ্দেক, ‘উইকেটটা যদি দেখেন, বোলারদের জন্য খুব যে সহায়ক ছিল, সেটা বলব না। অবশ্যই উইকেট খুব ভালো ছিল। অধিনায়ক আমাকে বল দিয়ে বলেছিলেন রান আটকানোর কথা।’
সেই রান আটকানোর বোলিং করতে গিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় সেরা বোলিং করে ফেলেছেন। শুধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই নয়, স্বীকৃত ক্রিকেটেই এই প্রথম ৫ উইকেট মোসাদ্দেকের। যদিও এটাকেও বড় করে দেখাতে চাইলেন না তিনি, ‘আমি কোনো কিছু মাথায় নিয়ে বোলিং করিনি। ভালো জায়গায় বল ফেলেছি, সে জন্য হয়তো সফল হয়েছি।’
মোসাদ্দেক অনেকটাই এগিয়ে রেখেছিলেন কাজ, তারপরও তা শেষ করতে হতো। নুরুল হাসানের মতো মোসাদ্দেকও সফল রান তাড়ার মূল কৃতিত্বটা অনুমিতভাবেই দিলেন লিটনকে, ‘প্রথম ম্যাচ কিংবা এই ম্যাচে, লিটন কিন্তু প্রতিদিনই আমাদের জন্য সুন্দর একটা শুরু করে দিচ্ছে। আমাদের দলের জন্য এটা খুবই ভালো, একটা ম্যাচে রান তাড়া করতে যা করা দরকার, সেটা লিটন আমাদের জন্য করছে। শেষের দিকে শান্ত (নাজমুল হোসেন) এবং আফিফ (আফিফ হোসেন) নিজেদের ম্যাচুরিটি দেখিয়েছে।’
দারুণ এই জয়টি যে শেষ ম্যাচের জন্য টনিক, সেটাও ফুটে উঠল মোসাদ্দেকের কথায়, ‘এই ম্যাচে আমরা যা যা করেছি, সেগুলো ঠিকঠাক রাখতে পারলে আমরা শেষ ম্যাচেও জিতব।’
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh