‘গোলদাতা’ শব্দটি মাথায় এলেই মুখে চলে আসবে কোনো স্ট্রাইকার, মাঝমাঠ কিংবা বড়জোর কোনো ডিফেন্ডারের নাম। কিন্তু গোলরক্ষক হয়েও যে গোল করা যায়। পাগলাটে পারফরমেন্সে বিশ্ববাসীকে চেনানো যায়। তারই প্রতিচ্ছবি যেনো কলম্বিয়ার এককালের জনপ্রিয় গোলরক্ষক ‘রেনে হিগুইতা’।
সুইপার কিপার বললেই সবার প্রথমেই মনে পড়ে ম্যানুয়েল নয়্যারের কথা। বক্সের বাইরে এসে বল ক্লিয়ার করা, ড্রিবল করা কিংবা আক্রমণে সহায়তা করা সবকিছুই যেন ডালভাত এই জার্মান কিপারের কাছে। অথচ আজ থেকে ৩০-৩৫ বছর আগে এমন ঘটনা ছিল অকল্পনীয়। গোলকিপার কেবল গোল বাঁচাবেন সেটাই ছিল সবার ধারণা। সবার এই ধারণাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রেনে হিগুইতা এটাকে রীতিমতো ছেলেখেলা বানিয়ে ফেলেছিলেন। আক্রমনে অংশ নেয়া, বল ক্লিয়ার করতে বক্সের বাইরে চলে যাওয়া, ফ্রি কিক নেয়া এসব ছিল হিগুইতার নিয়মিত ঘটনা। ভক্তরা তাই আদর করে তাঁকে ডাকতো ‘এল লোকো’ বা ‘পাগল’ নামে।
মেদেলিনের রাস্তায় খেলার দিনগুলোতে স্ট্রাইকার হিসেবেই মাঠে নামতেন হিগুইতা। প্রতিপক্ষের জালে বল জড়ানোতেই খুঁজে ফিরতেন নিজের আনন্দ। স্কুল ফুটবল কিংবা পাড়ার ফুটবল সবখানেই ছিলেন সর্বোচ্চ গোলদাতা। একবার কোনো এক ম্যাচে দলের গোলরক্ষক ইনজুরিতে পড়লে গোলবারের নিচে দাঁড়াতে হয়ে হিগুইতাকে। তখন কি ভেবেছিলেন গ্লাভস জোড়াই হবে তার সারাজীবনের সঙ্গী। সহজাত স্ট্রাইকারের মনোভাব আজীবনই বয়ে বেড়িয়েছেন তিনি, সেজন্যই বোধহয় গোলরক্ষক হয়েও বারবার ছুটে গেছেন গোলের নেশায়।
২৩ বছর বয়সেই অ্যাটলেটিকো ন্যাশিওনালকে জেতান ক্লাবের ইতিহাসের প্রথম কোপা লিবার্তাদোরেসের শিরোপা। ডিফেন্সে আন্দ্রেস এসকোবার, লিওনেল আলভারেজ এবং লুইস পেরেরাকে নিয়ে দুধর্ষ এক ব্যাকলাইন বানিয়েছিলেন হিগুইতা। দলের হয়ে নিয়মিতই ফ্রি কিক-পেনাল্টি নিতে দেখা যেত তাঁকে। ২৪ বছরের ক্যারিয়ারে করেছেন ৪১ গোল।
‘ভাগ্য সবসময় সাহসীদের পক্ষেই থাকে’ বাক্যটা সবসময় সঠিক হয় না। অন্তত রেনে হিগুইতার বেলায় খাটেনি। ১৯৯০ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় পৌঁছায় কলম্বিয়া, গোটা দেশবাসী তখন স্বপ্ন দেখছে শেষ আটে খেলার। কিন্তু ক্যামেরুনের বিপক্ষে ম্যাচটাতে গোলমাল পাকিয়ে ফেলেন হিগুইতা, বল ক্লিয়ার করতে বেরিয়ে এসেছিলেন বক্স থেকে। ক্যামেরুনিয়ান স্ট্রাইকার রজার মিলাকে দেখে ড্রিবল করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পারেননি। মিলা বল কেড়ে নেন এবং স্বভাবতই ফাঁকা জালে গোল করতে কোনো সমস্যাই হয়নি তার। ম্যাচটা কলম্বিয়া হেরে যায় ২-১ গোলে আর মুহূর্তের মাঝেই নায়ক থেকে খলনায়ক বনে যান হিগুইতা।
১৯৯৫ সাল। ওয়েম্বলিতে এক প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি স্বাগতিক ইংল্যান্ড আর লাতিনের দল কলম্বিয়া। আপাতনিরীহ অগুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচেই পুরো গ্যালারি সাক্ষী হয় অভূতপূর্ব এক ঘটনার। ইংরেজ মিডফিল্ডার জেমি রেডন্যাপ মাঝমাঠ থেকে হাওয়ায় বল ভাসিয়েছিলেন বক্সের ভেতরে। সবাই ভেবেছিলেন গোলরক্ষক বোধহয় বল গ্রিপ করবেন, হিগুইতা জন্ম দেন এক বিস্ময়ের। শরীরকে সামনের দিকে শূন্যে ভাসিয়ে পেছনের দিকে পা বাঁকিয়ে এমনভাবে বলটাকে ক্লিয়ার করেন পুরো গ্যালারি হতবাক হয়ে যায়। পরবর্তীতে এই ধরনের শটের নাম হয় ‘স্করপিয়ন কিক’...
বর্ণময় ক্যারিয়ার থাকলেও সংবাদমাধ্যমের হেডলাইনে থাকতে বোধহয় ভালোবাসতেন হিগুইতা। বারবার তাই জড়িয়ে পড়তেন অপরাধমূলক কার্যক্রমের সাথে। ২০০৪ সালে কোকেন নেয়ার দায়ে আবারো নিষিদ্ধ হন ছয় মাসের জন্য। হাতে থাকা এই সময়টাতে অবশ্য একদম অবসর কাটাননি, ‘সেলিব্রেটি টক শো’ নামে এক টিভি অনুষ্ঠান চালু করেন। সেখানে সতীর্থদের নিয়ে বিস্ফোরক সব মন্তব্য করে যথেষ্ট বির্তকের জন্ম দেন এই তারকা।
ডিবক্স থেকে ঝুঁকি নিয়ে বেরিয়ে এসে কখনও তিনি নায়ক হয়েছেন, আবার কখনও হারিয়েছেন সর্বস্ব। পাগলাটে, অপরাধী সবকিছু ছাপিয়ে রেনে হিগুইতা স্মরণীয় হয়ে থাকবেন তার বর্ণময় ক্যারিয়ারের জন্য।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh