× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

আন্দ্রেস এসকোবার: জীবন দিয়ে মিটিয়েছিলেন আত্মঘাতী গোলের মূল্য

মশিউর অর্ণব

০৯ ডিসেম্বর ২০২২, ০৭:৩৬ এএম

কলম্বিয়া এমন একটি এক দেশ, যেখানে মাদক চালান ও খুন একদম নৈমত্তিক ব্যাপার। কলম্বিয়াকে ফুটবল প্রেমীরা চেনেন ‘সাদা গুলিট’-এর দেশ হিসেবে। ফুটবল ভক্তদের হৃদয়ে স্থান পেয়েছেন দুরন্ত বিচ্ছু গোলরক্ষক রেনে হিগুইতা, কার্লোস ভালদেরামা। এদের সঙ্গেই উচ্চারিত হয় আন্দ্রেস এসকোবারের নাম৷ তার নামের সঙ্গেই যে জড়িয়ে আছে রক্তাক্ত যন্ত্রণা। তেমনই স্মৃতি নিয়ে রাশিয়ায় আবারও হাজির হচ্ছে কলম্বিয়া।

রক্তাক্ত ফুটবলারের ছবিটা এখনও দাগ কেটে যায়। গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিলেন কলম্বিয়ার ফুটবলার এসকোবারের দেহ। আকস্মিক এই ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে পড়েছিল পুরো বিশ্ব। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলম্বিয়া বরাবরই শক্তিশালী ফুটবল দল। তাদের দেশেরই এক ছিমছাম খেলোয়াড়কে আত্মঘাতী গোলের জন্য ক্ষমা করেনি পেশাদার খুনিরা। 

কলম্বিয়ায় কার্লোস ভালদেরামার মত এতটা হয়তো জনপ্রিয় ছিলেন না। তবে অ্যাটলেটিকো ন্যাসিওনেলে খেলার কারণে তুমুল জনপ্রিয় ক্লাবটির একজন জনপ্রিয় ফুটবলার ছিলেন আন্দ্রেস এসকোবার সালদারিয়াগা। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে কোচের বাছাই করা ২৩ জনের দলে ঠাঁই মিলে গিয়েছিল এসকোবারের। একজন ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন তো তিনি দেখতেই পারেন; কিন্তু ঘূর্ণাক্ষরেও কী এসকোবার ভেবেছিলেন, বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েই তার মৃত্যু পরোয়ানা লিখে নিয়ে দেশে ফিরবেন!

বিশ্ব ফুটবলের রোমাঞ্চকর মুহূর্তগুলির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন ফুটবলপ্রেমীরা। রাশিয়ার মাটিতে মরণ কামড় দিতে তৈরি হচ্ছে হামেশ রদ্রিগেজ আর রাদামেল ফ্যালকাওয়েল কলম্বিয়া। দেশটির কথা সামনে আসলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে লম্বা ঝাঁকা চুলের এক ফুটবলারের কথা। কার্লোস ভালদেরামা। আরেকটি ট্র্যাজেডির কথা। আন্দ্রেস এসকোবার। যিনি নিজের জীবন দিয়ে কলম্বিয়া ফুটবলে অক্ষয় হয়ে রয়েছেন। 

১৯৯৪ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপে ‘এ’ গ্রুপেই পড়েছিল কলম্বিয়া। প্রতিপক্ষ রোমানিয়া, স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র এবং সুইজারল্যান্ড। প্রথম ম্যাচে রোমানিয়ার কাছে ৩-১ গোলে হেরে গিয়েছিল কলম্বিয়া। তবে, দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে হলে দ্বিতীয় ম্যাচেই ঘুরে দাঁড়াতে হবে। এই ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্র।

ঘরের মাটিতে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। লাতিনের দেশ কলম্বিয়াও কম যায় না। ফলে দেখা দিয়েছে টানটান উত্তেজনা। ২২ জুন ছিল খেলার দিন। দুই দেশের সমর্থকদের ভিড় উপচে পড়েছিল প্যাসাডেনার রোজ বোল স্টেডিয়ামে। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। খেলা শুরু হতেই কলম্বিয়া আক্রমণ শুরু করে। পাল্টা আক্রমণে খেলা তুমুল জমে উঠেছিল। এমন সময় ছন্দপতন। খেলার তখন ৩৩ মিনিট চলছিল। হঠাৎ মার্কিন ফুটবলারদের আক্রমণ রুখতে গিয়েই আত্মঘাতি গোলটি করে বসেন ডিফেন্ডার এসকোবার। 

সেই মুহূর্তে গ্যালারির জুড়ে উল্লাস আমেরিকানদের। ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন কলম্বিয়ান সমর্থকরা। হতাশায় মুষড়ে পড়ছিলেন এসকোবার। সতীর্থরা ছুটে এলেন। তাকে সান্ত্বনা জানালেন। খেলায় তো এমন হয়ই! শুরু হল পিছিয়ে থেকে কলম্বিয়ার নতুন লড়াই। তীব্র আক্রমণ আছড়ে পড়ছিল যুক্তরাষ্ট্রের গোলবক্সে; কিন্তু গোল হচ্ছিল না। সেদিন ভাগ্য ভর করেছিল মার্কিনীদের উপরেই।

৫২ মিনিটে ইয়ার্নি স্টুয়ার্টের গোলে ব্যবধান দ্বিগুণ করে স্বাগতিকরা। শেষ মিনিটে অবশ্য অ্যাডলফো ভ্যালেন্সিয়ার কল্যাণে ব্যবধান কমাতে সমর্থ হয়েছিল কলম্বিয়া। তবে সেটি তাদের পরাজয় এবং বিদায় ঠেকানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না। ম্যাচটি ২-১ গোলে জিতে নেয় স্বাগতিকরা। এই পরাজয়েই টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়ে কলম্বিয়া।

এসকোবার হয়তো জানতেন না। ওই আত্মঘাতি গোলের পরই তার ওপর রিভলবারের নল তাক করা হয়ে গিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সেই নল তার পিছন পিছন চলে এসেছিলো নিজের দেশ কলম্বিয়ায়। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ওই ম্যাচের দশদিন পরের ঘটনা। বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলেও জমজমাট মেডেলিন শহর চলেছে নিজের ছন্দে। বিশ্বকাপের তখন মাত্র দ্বিতীয় রাউন্ডের খেলা চলছিল। 

দেশে ফিরে মেডেলিন শহরে একান্তে একটি রেস্তোঁরায় বসেছিলেন এসকোবার। কে জানত তার নিয়তি এখানেই অলক্ষ্যে দাঁড়িয়ে আছে। ভগ্ন হৃদয়ে বসেছিলেন তিনি। ওই সময়ই তাকে লক্ষ্য করে পরপর গুলি করা হল। মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। প্রত্যক্ষদর্শীরা পরে বলেছিলেন, ‘এসকোবারকে প্রতিবার গুলি করার সময় সেই লোকটা ‘গোল’ বলে চেঁচিয়ে উঠেছিল। নিশ্চিন্তে খুন করে আততায়ী একটি গাড়িতে করে পালিয়ে যায়। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিল।’

কলম্বিয়ার বিশ্বকাপ ব্যর্থতা মেনে নেয়নি কেউই। কিন্তু ব্যর্থতার মূল্যটা যে এসকোবারকে এভাবে চুকাতে হবে, সেটা আর কে ভেবেছিল। মিডফিল্ডার গ্যাব্রিয়েল গোমেজও মৃত্যুর হুমকি পেয়েছিলেন। কিন্তু এসকোবারকে গুলি করে হত্যা করেই নিজেদের ক্ষোভ মেটাতে চেয়েছিল উগ্র ফুটবলপ্রেমীরা।

‘তোমার আত্মঘাতী গোলের জন্য ধন্যবাদ।’ ফুটবল কল্পকাহিনিতে স্থায়ী জায়গা পেয়ে গেছে খুনী হামবার্তো কাস্ত্রো মুনোজের এই একটি লাইন। এসকোবারকে গুলি করার ঠিক আগমুহূর্তে এটিই বলেছিল সেই খুনী।


Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.