× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

মেসিদের উল্লাস দিয়ে সফল বিশ্বকাপের পরিসমাপ্তি

মশিউর অর্ণব

১৯ ডিসেম্বর ২০২২, ০৬:৫৪ এএম । আপডেটঃ ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৩৪ এএম

এবারের বিশ্বকাপ নিয়ে দুটি প্রশ্ন ছিল মোটামুটি সবার মুখে। প্রথমটি, এবারের বিশ্বকাপ কি মেসির হবে? সেটির উত্তর মিলেছে। ফুটবল যেন তার ঋণ শোধ করে দিয়েছে এই মহাতারকার হাতে বিশ্বকাপ ট্রফি তুলে দিয়ে। তাতে ঘুচেছে আর্জেন্টিনার ৩৬ বছরের হাহাকার। দ্বিতীয়টি ছিল, মরুভূমির প্রথম বিশ্বকাপ কেমন হবে? এ প্রশ্নে ইতিবাচক উত্তরই মিলবে বেশি। বিশ্বকাপ চলাকালীন তিনজন গণমাধ্যমকর্মী এবং একজন শ্রমিকের স্টেডিয়াম থেকে পড়ে মৃত্যু, মিস ক্রোয়েশিয়া ইভান নলের সঙ্গে নিরাপত্তাকর্মীদের বাহাস, সমর্থকদের বিক্ষিপ্ত কিছু হাতাহাতির বাইরে তেমন কোনো দুর্ঘটনার খবর আসেনি। বরং গণমাধ্যমে এবারের আসর পেয়েছে নারীদের জন্য ‘নিরাপদ বিশ্বকাপ’-এর মর্যাদা।

প্রতিবারই এমন হয়। কেউ হাসেন বিজয়ের উল্লাসে, কেউ ডোবেন হতাশার চোরাবালিতে। হাসি-কান্নার এই লুকোচুরি খেলা শুরু হয়েছিল ২০ নভেম্বর, শেষ হলো ১৮ ডিসেম্বর লুসাইল স্টেডিয়ামের ফাইনাল দিয়ে। জাদুকর লিওনেল মেসির হাসি দিয়ে ভাঙল কাতার বিশ্বকাপের মিলন মেলা। ফুটবলপ্রেমীদেরও শুরু হলো পরের বিশ্বকাপের জন্য দীর্ঘ চার কিংবা বলা যায় সাড়ে তিন বছরের অপেক্ষা।

যদি শুধু ফাইনালের কথা ধরা হয়, তাহলে একাধিক বিশ্বকাপ কাভার করা গণমাধ্যম কর্মীদের দৃষ্টিতে এবারেরটি ধুন্ধুমার, অবিশ্বাস্য ফাইনাল। যদিও ৮০ মিনিট পর্যন্ত আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স ম্যাচ ছিল একপেশে। মেসি-দি মারিয়ারা ছিলেন চালকের আসনে, কিলিয়ান এমবাপে-অঁতোয়ান গ্রিজমানরা কোণঠাসা। এমন ম্যাচে এমবাপে উত্তাপ ফেরান ৯০ সেকেন্ডে দুই গোল করে!

নির্ধারিত নব্বই মিনিটের খেলায় আলাদা করা যায়নি তৃতীয় বিশ্বকাপের স্বপ্ন নিয়ে নামা দুটি দলকে। অতিরিক্ত সময়েও রোমাঞ্চ, নাটকীয়তার ছড়াছড়ি। বিশ্বকাপের ২২তম ট্রফিটি নিয়ে রীতিমতো দুই দলের টানাটানি। ১০৮ মিনিটে মেসি গোল করে লিওনেল স্কালোনির মুখে হাসি ফেরান, তো দশ মিনিট পর এমবাপে হ্যাটট্রিক পূরণ করলে নেচে ওঠেন দিদিয়ে দেশম।

শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে নিষ্পত্তি শিরোপার। উগো লরিস পারেননি। ম্যাচ জুড়ে কয়েকটি দারুণ সেভ করা এই ফরাসি গোলরক্ষক পরাস্ত হয়েছেন মেসি, পাওলো দিবালা, লেয়ান্দ্রো পারেদেস ও গনসালো মনতিয়েলের শটে। কোয়ার্টার-ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে টাইব্রেকারে ঝলক দেখানো এমিলিয়ানো মার্তিনেস ফাইনালেও আঁকলেন সাফল্যের ছবি।

এমবাপের কাছে নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময় মিলিয়ে তিনবার পরাস্ত হওয়া মার্তিনেস টাইব্রেকারে ফরাসি তারকার কাছে হার মানলেন আবারও। যদিও বলের লাইনে ঝাঁপিয়েছিলেন, কিন্তু বুলেট গতিতে ছোটা বলের নাগাল পাননি। কিন্তু পরে ঠিকই ঠেকালেন কিংসলে কোমানের শট। এরপর অহেলিয়া চুয়ামেনি মেরে বসলেন পোস্টের বাইরে। টানা দ্বিতীয় শিরোপার স্বপ্ন গুঁড়িয়ে গেল ফ্রান্সের। ৩৬ বছরের খরা কাটিয়ে বিশ্ব জয়ের আনন্দ ফিরে পেল আলবিসেলেস্তেরা।

কেবল ফাইনাল নয়, সেই গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিল রোমাঞ্চকর বিশ্বকাপের ইঙ্গিত। শুরুটা করেছিল সৌদি আরব। পিছিয়ে পড়ার পর ‘চ্যাম্পিয়ন’ আর্জেন্টিনাকে পাঁচ মিনিটের ঝড়ে ২-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল তারা। চারবারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে একই ব্যবধানে হারিয়ে চমক উপহার দিয়েছিল এশিয়ার আরেক দল জাপান। শেষ পর্যন্ত গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেওয়ার হতাশায় ডোবে হান্স ফ্লিকের জার্মানি।

এশিয়ার দলগুলো শেষ ষোলো থেকে ঝরে গেলেও ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার দলগুলোর ভিড়ে প্রবল প্রতাপে টিকে ছিল মরক্কো। উত্তর আফ্রিকার এই দেশটি রীতিমতো মাতিয়ে রেখেছিল এবারের আসর। গত আসরের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়া ও বেলজিয়ামের মতো শক্তিশালী দলকে পেছনে রেখে গ্রুপ সেরা হয়ে নকআউট পর্বে আসে তারা।

এরপর একে একে তারা ‘আউট’ করতে থাকে বড় দলগুলোকে। শেষ ষোলোয় ২০১০ সালের চ্যাম্পিয়ন স্পেনের পথচলা থামানোর পর কোয়ার্টার-ফাইনালে আশরাফ হাকিমি-হাকিম জিয়াশরা বিদায় করে দেয় পর্তুগালকে। তাতে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর আর নিজেকে মেলে ধরা হয় না। বরং নানা বিতর্ক ও ব্যর্থতা নিয়ে শেষ হয় এই তারকার বিশ্বকাপ।

গ্রুপ পর্বে ক্যামেরুনের বিপক্ষে বেঞ্চের শক্তি পরীক্ষা করতে নেমেছিলেন ব্রাজিল কোচ তিতে। ১-০ গোলে হারের তিক্ত অভিজ্ঞতা হয় ‘প্রফেসর’ নামে পরিচিত এই কোচের। শেষ ষোলোয় ভয়ঙ্কর সুন্দর ফুটবল খেলে দক্ষিণ কোরিয়াকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে আসার পর কোয়ার্টার-ফাইনালে থামে সেলেসাওদের পথচলা। ক্রোয়েশিয়ার কাছে টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নেয় রেকর্ড পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। ব্রাজিল কোচ হিসেবে তিতের শেষও হয় তিক্ততায়।

আরও একবার বিশ্বকাপ থেকে খালি হাতে ফেরার কান্না সঙ্গী হয় সময়ের সেরা তারকা ফরোয়ার্ডদের একজন নেইমারের। এবার তার সঙ্গে ভিনিসিউস জুনিয়র, রিশার্লিসনদের কাঁধে চড়ে ‘হেক্সা’ পূরণের স্বপ্ন নিয়ে দোহায় নোঙর ফেলেছিল ব্রাজিল। দক্ষিণ কোরিয়া ম্যাচে জেগো বনিতোর সুর-ছন্দের দেখা মিলল, কিন্তু দ্রুত মিলিয়েও গেল চোরাবালিতে!

সেরা আটেই উপভোগ্য ম্যাচ উপহার দিয়েছিল ইংল্যান্ড-ফ্রান্স। হ্যারি কেইন দুই পেনাল্টির একটি কাজে লাগাতে পারেন, অন্যটি উড়িয়ে মেরে নষ্ট করেন। তাতে ১৯৬৬ সালের পর ইংলিশদের আরেকটি বিশ্বকাপের আশা উড়ে যায় কর্পুরের মতো। গতবার গোল্ডেন বুট জেতা কেইন এবারও ছিলেন বাজির দরে এগিয়ে, কিন্তু এই ইংলিশ ফরোয়ার্ড থাকলেন বড্ড মলিন।

দুই সেমি-ফাইনালের স্বাদ দুই রকম। গত বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠার পথে আর্জেন্টিনাকে ৩-০ গোলে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। নভগোরোদের সেই ম্যাচের উল্টো পুনরাবৃত্তি যেন লুসাইলে। এবার ক্রোয়াটরা মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারেনি। ৩-০ গোলে মধুর প্রতিশোধ নিয়ে ফাইনালের মঞ্চে অনায়াসে উঠে যায় দুইবারের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। তাতে মদ্রিচ নামের মাঝমাঠের এক নির্ভরযোগ্য যোদ্ধার বিশ্বকাপ শেষ হয় সেরা হতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে।

দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে থামে মরক্কো রূপকথা। যদিও ২-০ স্কোরলাইনে জিতে ফ্রান্স, কিন্তু মরক্কোর ঝাঁকুনিতে বারবার কেঁপেছে ফরাসিরা। তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচেও ক্রোয়েশিয়ার কাছে হারে তারা। তবে আফ্রিকার প্রথম দল হিসেবে সেরা সাফল্যের গল্প লিখে, আফ্রিকা-আরব-মধ্যপ্রাচ্য মাতিয়ে মাথা উঁচু করে বিদায় নেওয়ার তৃপ্তি সঙ্গী মরক্কো।    

এরপর সেই ধুন্ধুমার ফাইনাল। এমবাপের হ্যাটট্রিকও যেখানে যথেষ্ঠ হয় না ফ্রান্সের জন্য। ৮ গোল ও ২টি অ্যাসিস্ট নিয়ে গোল্ডেন বুট জিতলেও সোনালি হাসিটুকু ফুটে ওঠে না ২৩ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ডের মুখে। চোটের কারণে করিম বেনজেমার অনুপস্থিতিতে দলের আক্রমণভাগ অলিভিয়ে জিরুদের সঙ্গে টেনেছিলেন তিনি, কিন্তু শেষ লড়াইয়ে সঙ্গী পেলেন না কাউকে।

ভিনিসিউস, রিশার্লিসন, জুড বেলিংহ্যাম, জামাল মুশিয়ালা, রুবেন দিয়াস আরও কত তরুণের নাম ছিল আসর শুরুর আগে সম্ভাবনাময়দের তালিকায়। একটু-আধটু ঝলক দেখিয়ে হারিয়ে গেলেন তারা। সেভাবে আলোচনায় ছিলেন না এনসো ফের্নান্দেস। ২১ বছর বয়সী এই আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডারই এবার জিতে নিয়েছেন উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কার।


Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.