× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ব্যাটের যাত্রা শুরু

ক্রীড়া ডেস্ক

০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩:৫৪ পিএম

নিজের পছন্দমতো একটি ব্যাট কিনতে ২০১৮ সালে ভারত গিয়েছিলেন ইমরুল কায়েস। কিন্তু ব্যাটের কারখানায় ভালোমানের অনেক ব্যাট থাকলেও কিনতে পারেননি। বিষয়টি নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা কাটাকাটিও হয় তার। এক পর্যায়ে ইমরুল চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে আসেন, ‘আমি নিজেই ব্যাটের কারাখানা দেবো।’ 

সাত বছর পর সেই স্বপ্নের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ইমরুল। কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে ইমরুল, মিরাজ, শাহীনের ব্যাট প্রস্তুতিকারী প্রতিষ্ঠান এমকেএস এখন বাস্তব। 

ইমরুলদের এখন লক্ষ্য দেশ ছাড়িয়ে নিজেদের প্রস্ততকৃত ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ব্যাট বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দেওয়া। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাট তৈরির প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইতোমধ্যে আইসিসির অনুমোদনও পেয়ে গেছে এমকেএস স্পোর্টস।

ব্যাটের কারখানা তৈরির স্বপ্নটা রাজশাহীর ছেলে হুসাইন মোহাম্মদ আফতাব শাহীনের হলেও সেটা ডানা মেলেছে ইমরুল কায়েস ও মেহেদী হাসান মিরাজের হাত ধরে। এই দুজন ক্রিকেটার শাহীনের স্বপ্ন পূরণের সারথি হন। এই তিনজনের নামের অদ্যাক্ষর দিয়েই ব্যাটের নামকরণ করা হয়েছে ‘এমকেএস’। কারখানা থেকে শুরু করে পারিপার্শ্বিক অনেক কিছুর কাজ চলছে গত দুই বছর ধরেই। অবশেষে সোমবার রাতে রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে দেশি ক্রিকেটারদের হাত ধরে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ খ্যাত এমকেএস ব্যাটের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে। ইমরুল-মিরাজদের স্বপ্ন পূরণের দিনে সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহসহ অনেক তরুণ ক্রিকেটার উপস্থিত হয়েছিলেন। ছিলেন বিসিবির দুই পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন ও জালাল ইউনুস। এছাড়া প্রধান অতিথি ছিলেন বিসিবি সভাপতি ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী ও বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।

সাত বছর আগে ভারতের একটি ব্যাট কারখানার স্টাফদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে আসা ইমরুল খুঁজছিলেন এমন কাউকে, যার এ বিষয়ে সম্পর্কে বিস্তর ধারণা আছে। ওই সময় তিনি জানতে পারেন শাহীনের কথা। দেশের অনেক ক্রিকেটারই তার কাছ থেকে ব্যাট তৈরি করে নিয়ে গেছেন। শুধু দেশ নয়, বিদেশের অনেক ক্রিকেটারও তার কাছ থেকে ব্যাট তৈরি করাসহ ‘মডিফিকেশন’ বা ‘কাস্টমাইজ’ করে আসছেন। শাহীন ও ইমরুলের চাওয়া এক বিন্দুতে মিলে যাওয়াতে স্বপ্ন পূরণের রাস্তাটা সহজেই তৈরি হয়ে যায় তার পর। শাহীন ও ইমরুলের এই আলোচনার বিষয়বস্তু একদিন মিরাজের কানে যায়। তার পর মিরাজও আবদার করে বসেন তাদের সঙ্গে থাকার। এরপর শুরু হয় তাদের ব্যাটের কারখানা তৈরির মিশন। রাজশাহী নগরীর বাররাস্তার মোড় এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে এমকেএস স্পোর্টসের ক্রিকেট ব্যাট তৈরির কারখানা। ব্যাট তৈরির মূল উপাদান কাঠ ইংলিশ উইলো নিয়মিত আমদানি করা হচ্ছে এখন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল চমক। যুব বিশ্বকাপজয়ী একঝাঁক তরুণ এমকেএস ব্যাট নিয়ে করেন র‌্যাম্প শো। আকবর আলী, মাহমুদুল হাসান জয়, পারভেজ হোসেন ইমন, রাকিবুল হাসান, শাহাদাত হোসেন ও রিশাদ হোসেন ছিলেন সেই শোতে। ইতোমধ্যেই ‘এমকেএস’ ব্যাটের শুভচ্ছোদূত করা হয়েছে প্রতিভাবান এই ক্রিকেটারদের। ২০২০ যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের অধিনায়ক ছিলেন আকবর। বাকি পাঁচ ক্রিকেটার এর মধ্যেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলে ফেলেছেন।

উদ্বোধনী বক্তব্যে ইমরুল বলেছেন, ‘দুই-আড়াই বছরের পরিকল্পা বাস্তবে রূপ দিতে পেরেছি। চেষ্টা করবো যে এমকেএস ব্যাট ৬৪ জেলায় ছড়িয়ে দিতে। সব ক্রিকেটারের ঘরে ঘরে এই ব্যাট থাকবে। এক সময় আমরা দেশের বাইরেও ব্যাটের জোগান দেবো। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো দেশের ভেতরে অনূর্ধ্ব-১৭, অনূর্ধ্ব-১৯, হাই পারফরম্যান্স, মেয়েদের দল, লিগে যারা খেলে এবং জাতীয় দল; সবার পাশে থাকার চেষ্টা করবো এবং সেরা মানের ব্যাট ওদের দেওয়ার চেষ্টা করবো।’

ইংলিশ উইলো কাঠের বিভিন্ন গ্রেড থাকে। একদম শীর্ষ গ্রেডের কাঠ খুব বেশি পাওয়া যায় না বলেই এই গ্রেডের ব্যাটগুলি সাধারণত বিশ্বের সেরা ক্রিকেটারদেরই দেয় ব্যাট কোম্পানিগুলো। ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে ভালো মানের কিছু ব্যাট পেয়ে থাকেন তামিম ইকবাল। বামহাতি ওপেনার জানেন কাড়ি কাড়ি পয়সা খরচ করেও ভালো মানের ব্যাট পাওয়া সম্ভব হয় না অনেকসময়। এই কারণে ইমরুল-মিরাজদের ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ব্যাটের আনুষ্ঠানিক যাত্রায় উচ্ছ্বসিত তামিম। ব্যাট সম্পর্কে নানারকম তথ্য নির্ভর বক্তব্য দেন এই ওপেনার।

দীর্ঘ বক্তব্যের শুরুতেই তামিম বলেছেন, ‘আমি সত্যিই খুব গর্বিত যে অবশেষে বাংলাদেশের একটি কোম্পানির ব্যাট আসছে। আপনার কাছে যত টাকাই থাকুক, অনেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার, বিশেষ করে বাংলাদেশের ক্রিকেটার, তারা ভালো মানের ব্যাট পায় না। আমার মনে আছে, একটা সময় আমরা প্রতিপক্ষের ড্রেসিং রুমে গিয়ে বড় তারকাদের কাছে কাতর হয়ে ব্যাট চাইতাম। অনেক সময় ওরা মুখের ওপর না করে দিতো। এমন নয় যে, ওদের ব্যাট থেকে আমাদের লোভ হতো। আমরা চাইতাম কারণ ওই মানের ব্যাট পেতাম না। আমাদের আগের যুগেও হয়েছে, আমাদের সময়েও হয়েছে। এখনও অনেকে দিল্লিতে গিয়ে সেখান থেকে ড্রাইভ করে মিরাটে গিয়ে নিজের পছন্দমতো ব্যাট আনতে যায়। কিন্তু খুব ভালো ব্যবহার পায় না। সবদিক বিবেচনায় আমি খুবই খুশি ও গর্বিত যে আমাদের একটি কোম্পানি হচ্ছে।’

সাকিব মনে করেন, বিদেশি ক্রিকেটাররা মাঠ মাতাবেন এমকেএসের ব্যাট দিয়ে, ‘খুবই ভালো উদ্যোগ যে দেশে এরকম একটা ব্যাট প্রস্তুতকারী কোম্পানি হচ্ছে। আমাদের জন্য খুবই গর্বের। মিরাজ ও ইমরুলকে অনেক শুভ কামনা জানাচ্ছি। আশা করি এই ব্র্যান্ড শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও অনেক নাম করবে ও দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে।’

ইংল্যান্ড থেকে উঁচু মানের উইলো কাঠ এনে ব্যাটগুলো তৈরি করা হচ্ছে এবং সামনেও এভাবেই হবে। ব্যাট তৈরির মূল দায়িত্ব আফতাব শাহীনের। শচীন টেন্ডুলকার-বিরাট কোহলিদের ব্যাট কাস্টমাইজড করা শাহীন বলেছেন, ‘অনেক বিদেশি ক্রিকেটারের ব্যাট নিয়ে কাজ করেছি আমি। শচীন টেন্ডুলকার, বিরাট কোহলিদের ব্যাট কাস্টমাইজ করার সময় মনে হতো, আমাদের দেশের ক্রিকেটারদের যদি এই মানের ব্যাট দিতে পারতাম। আশা করি এমকেএস ব্যাট দিয়ে এই স্বপ্ন আমরা পূরণ করতে পারবো।’

শুধু ক্রিকেটাররা নয়, ক্রীড়ামন্ত্রী, বিসিবির দুই পরিচালকসহ যারা উপস্থিত ছিলেন, সবাই ইমরুল, মিরাজদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। মেইড ইন বাংলাদেশ বলেই তাদের এই উচ্ছ্বাস। তারা সবাই স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশের ব্যাট একদিন বিদেশে পৌঁছে যাবে, দেশ পাবে বৈদেশিক মুদ্রা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এমকেএস স্পোর্টেসের ওয়েবসাইটও উদ্বোধন করেন ক্রীড়ামন্ত্রী ও বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ক্রেতারা ঘরে বসে ব্যাটের অর্ডার করতে পারবেন। এখনো কোন আউটলেট না হলেও আগামী ছয় মাসের মধ্যে ধানমন্ডিতে একটি আউটলেট করার ইচ্ছের কথা জানিয়েছেন ইমরুল কায়েস।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । সম্পাদক: 01703-137775 । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.