ফর্মহীনতা এবং বিতর্কের মুখে বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেটের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম ৫০ ওভারের এই সংস্করণকে বিদায় বলে দিলেন। টি–টোয়েন্টি থেকে বিদায় নিয়েছেন আগেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে এখন মুশির’র বাকি দিন গুলো সাদা পোশাকে কাটবে।
সাবেক এই অধিনায়ক তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২৭৪ ম্যাচ খেলে ৩৬.৪২ গড়ে করেছেন ৭৭৯৫ রান। ৯টি সেঞ্চুরির সঙ্গে রয়েছে ৪৯টি অর্ধশতক। আরেকটা হলেই ফিফটির ফিফটি টা হয়ে যেত। উইকেটের পেছনে-সামনে ২৪৩ ক্যাচের সঙ্গে রয়েছে ৫৬ টি স্টাম্পিং। হাঁকিয়েছেন ১০০টি ছক্কা। এরমধ্যে হাঁটু গেড়ে তাঁর সিগনেচার স্টাইলের আয়েশি ভঙ্গিতে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে মারা ছক্কাগুলো বংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা দীর্ঘদিন মনে রাখবে।
বুধবার (৫ মার্চ) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে তার দীর্ঘ ১৯ বছরের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘোষণা করে লেখেন, "আজ থেকে আমি একদিনের আন্তর্জাতিক (ODI) ক্রিকেট ফরম্যাট থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছি।
আলহামদুলিল্লাহ সবকিছুর জন্য। যদিও আমাদের সাফল্য বিশ্ব মঞ্চে সীমিত ছিল, তবে একটি বিষয় পরিষ্কার: আমি যখনই আমার দেশের জন্য মাঠে পা রেখেছি, আমি ১০০% বেশি দিয়ে সততা এবং নিবেদনসহ খেলেছি।
সাম্প্রতিক কিছু সপ্তাহ আমার জন্য খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল, এবং আমি বুঝতে পেরেছি যে এটি আমার নিয়তি। আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন: “ وَتُعِزُّ مَن تَشَاءُ وَتُذِلُّ مَن تَشَاءُ ” - "এবং তিনি যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন, এবং যাকে ইচ্ছা অবমানিত করেন।" (3:26)
আল্লাহ আমাদের সবাইকে ক্ষমা করুন এবং সঠিক ঈমান দান করুন।
শেষে, আমি আমার পরিবার, বন্ধু এবং আমার ভক্তদের গভীরভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই, যাদের জন্য আমি গত ১৯ বছর ধরে ক্রিকেট খেলেছি।
জাজাকাল্লাহ খাইর।"
বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসে এক বিস্ময়কর তারকা হিসেবে পরিচিত মুশফিকুর প্রথম তার কিরকেটপ্রেমীদের নজর কাড়েন ২০০৭ বিশ্বকাপে, যখন তাকে অভিজ্ঞ খালেদ মাসুদকে বাদ দিয়ে দলে জায়গা দেওয়া হয়। নির্বাচকদের বিশ্বাসের প্রতিদান দিয়ে তিনি ত্রিনিদাদে ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের ম্যাচে ফিফটি করেছিলেন। মুশফিক দ্রুত মধ্য-অর্ডারের এক অমূল্য সদস্য হয়ে ওঠেন, এবং ২০০৮ সালে একটি বিরতির সময় তার জায়গা হারানো ছাড়া, প্রায় দুই দশক ধরে তিনি বাংলাদেশ দলের নিয়মিত সদস্য ছিলেন।
তিনি হলেন ঐ পাঁচজন উইকেটকিপারদের মধ্যে একজন, যারা ২৫০টিরও বেশি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন, এবং উইকেটকিপার হিসেবে তার ৭টি সেঞ্চুরি হলো চতুর্থ সর্বাধিক, শুধুমাত্র কুমার সাঙ্গাকারা, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট এবং এমএস ধোনির পিছনে।
সাম্প্রতিক সময়ে তার ফর্মহীনতা এবং নতুন খেলোয়াড়দের জায়গা করে দিতে তাই তার এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ক্রিকেটবোদ্ধারা।