ছবি: সংগৃহীত
২৭ জুলাই। ফুটবলের জন্য বিখ্যাত বৈরুতের কাসকাস মাঠ। ফুটবলের জায়গা দখল করল ক্রিকেটের উন্মাদনা। মাঠের মাঝখানে ২২ গজের পিচ সাজানো। বাউন্ডারি টানা হয়েছে গোলপোস্ট দিয়ে। এই বিশেষ মুহূর্ত দিয়েই লেবাননের ক্রিকেটে প্রথম সরকারি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের যাত্রা শুরু হলো।
ক্রিকেট পশ্চিম এশিয়ায় এখনো অপরিচিত। অবসরে প্রবাসী শ্রমিকেরা পার্কিং লটে খেললেও। আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে সাদা লেদারের বল দিয়ে পূর্ণ আয়োজনের দৃষ্টান্ত আগে ছিল না। তিনটি দল খেলল। একটি শ্রীলঙ্কান শ্রমিকদের, আরেকটি ভারত ও পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের সমন্বয়ে। তবে সবচেয়ে আলোচিত ছিল সিরীয় শরণার্থীদের দল। যারা প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক কোনো টুর্নামেন্টে অংশ নিল।
এই কিশোরদের অধিকাংশই আলসামা প্রজেক্টের শিক্ষার্থী। ২০১৮ সালে রিচার্ড ভেরিটি, মেইকে জিয়েরভোগেল, কাদরিয়া হুসেইন ও মোহাম্মদ খায়ের মিলে এই এনজিও গড়ে তোলেন। শুরু থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রিকেটকে যুক্ত করা হয়। কিংবদন্তি ইংলিশ স্পিনার হেডলি ভেরিটির আত্মীয় রিচার্ড ভেরিটি প্রথম ক্রিকেট পরিচিত করান বৈরুতের শাতিলা শরণার্থী শিবিরে। আরবি জানতেন না বলে ক্রিকেটই হয়ে ওঠে শিশুদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম। ভেরিটি নিয়ম করেছিলেন। আলসামার ছাত্রদের সাপ্তাহিক ছুটিতে ক্রিকেট খেলতে হবে।
১৮ বছর বয়সে সিরীয় দলের প্রতীক লুয়াই আল কাদরো। ফাস্ট-বোলিং অলরাউন্ডার এই তরুণ অধিনায়কত্বের পাশাপাশি দলের অন্য সদস্যদেরও ক্রিকেট শেখান। কিন্তু শৈশবের দিনগুলো ছিল কষ্টময়। সাত বছর বয়সে দেখেছেন পরিচিত কারো ফাঁসি। রাক্কার যুদ্ধজীবনই ছিল তার শৈশব। ২০১৭ সালে পরিবারসহ আশ্রয় নেন বৈরুত। একদিন কৌতূহলবশত মাঠে গিয়ে ক্রিকেটের সঙ্গে পরিচয় হয়। শুরুর দিকে ক্রিকেট ছিল অজানা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি তাঁর প্রিয় খেলা হয়ে ওঠে। আজ এটি শুধু খেলা নয়। বরং আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা।দলগত সহযোগিতা এবং কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার শিক্ষা।
আলসামার মেয়েদের গল্প প্রেরণামূলক। মারাম আল খোদর ও উইসসাল আল জাবের আজ ক্রিকেটার ও কোচ। শুরুতে তাঁরা গোপনে মাঠে যেতেন। লম্বা পোশাক পরে জার্সি বদলে খেলতেন। মারাম বলেন, ‘মেয়েদের আমাদের সমাজে খুব কম গুরুত্ব দেওয়া হয়। ক্রিকেট মাঠে প্রথমবার শুনতে পেয়ে ‘ভালো বল, মারাম’ আমি বুঝতে পারলাম। এটাই আমার জায়গা। উইসসাল বলেন “ক্রিকেট এমন খেলা যেখানে ছেলে-মেয়ে একসাথে খেলতে পারে। সমাজে যা অচিন্তনীয়, মাঠে তা স্বাভাবিক।”
তবে ক্রিকেট মাঠের বাইরে জীবন এখনও কঠিন। শাতিলার ছোট ফ্ল্যাটে অনেক সময় ১৪ জন একসঙ্গে থাকতে হয়। বিদ্যুৎ ও পানির অনিশ্চয়তা নিত্যসঙ্গী। ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ সংঘাতের সময় আবারও অনেককে সিরিয়ায় পালিয়ে যেতে হয়। তবুও ক্রিকেট তাঁদের টেনে এনেছে ফিরিয়ে। উইসসাল নিজের সিদ্ধান্তে একাই ফিরে এসেছেন বৈরুতে। কারণ স্কুল আর ক্রিকেট ছাড়া তিনি থাকতে পারতেন না।
আজ আলসামায় প্রায় হাজার ছেলে-মেয়ে ক্রিকেট খেলছে। তাঁদের কোচিং দিচ্ছেন মোহাম্মদ খায়ের। যিনি নিজেও একসময় শরণার্থী ছিলেন। আন্তর্জাতিক সংস্থা এমসিসি ফাউন্ডেশনসহ নানা জায়গা থেকে সহায়তাও আসছে। এখন তাদের বড় স্বপ্ন একটি সিরীয় জাতীয় ক্রিকেট দল গঠন করা। যারা একদিন আইসিসি টুর্নামেন্টে খেলবে। রিচার্ড ভেরিটি বলেন, ‘প্রথমে শরণার্থী শিশুদের ক্রিকেট শেখানোই ছিল স্বপ্ন। সেটা সম্ভব হয়েছে, তাহলে জাতীয় দল কেন সম্ভব হবে না?’
স্বপ্নই তাদের এতদূর এনেছে। ক্রিকেট এখন শুধু খেলা নয়। বরং সংগ্রামের মধ্যে জন্ম নেওয়া মুক্তি ও নতুন সম্ভাবনার প্রতীক।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh