ছবি:সংগৃহীত।
গাজায় চলমান যুদ্ধ ও অবরোধের মধ্যেই বডিবিল্ডার তারেক আবু ইউসেফের জীবন ব্যাপকভাবে বদলে গেছে। একসময় তিনি সপ্তাহে পাঁচ-ছয় দিন ওজন তুলেই গড়তেন শরীর। কিন্তু এখন অনুশীলনের দিন সীমিত করে রেখেছেন মাত্র এক বা দুই দিনে। মার্চ থেকে তার ওজন কমেছে ১৪ কেজি। ৭২ কেজি থেকে ৫৮ কেজিতে। গাজায় খাওয়া-দাওয়া এখন এক ধরনের অস্বাভাবিকতা হয়ে উঠেছে। তিনি কাতারের সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে বলেন, ‘তবুও ব্যায়াম আমাদের একমাত্র আশ্রয়। যা দিয়ে আমরা স্বাভাবিকতার ছোঁয়া ধরে রাখতে পারি।’
গাজার ৩৬৫ বর্গকিলোমিটারে ২.১ মিলিয়ন মানুষ প্রাণঘাতী খাদ্যসংকটে ভুগছে। বিশেষ করে উত্তর গাজায় পরিস্থিতি যেন দুর্ভিক্ষের মতো। লাখ লাখ টন খাদ্য ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত সীমান্তে আটকে রয়েছে। শিশুর চোখে হাহাকার। মানুষের মুখে অসহায়তার ছাপ। এমএসএফ ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি সতর্ক করেছে। অবিলম্বে সাহায্য পৌঁছানো না গেলে মানবিক বিপর্যয় আরও প্রকট হবে।
মানবিক সংকটের মাঝেও গাজার ক্রীড়াবিদরা থেমে থাকেনি। আল-মাওয়াসির তাঁবু জিমে কোচ আদলি আল-আসার বাঁচানো কয়েকটি যন্ত্র দিয়ে তারা অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন। ধ্বংসপ্রাপ্ত সরঞ্জামের মধ্যে মাত্র ১০টি বাকি। তবু সাহস থামে না। আদলি বলেন, “অনুশীলন ৩০ মিনিট, বিশ্রাম পাঁচ মিনিট। ক্ষুধার্ত শরীরকে অতিরিক্ত চাপ না দেওয়াই এখন মূল লক্ষ্য।”
২০ বছর বয়সী আলী আল-আজরাকের ওজন ৭৯ কেজি থেকে ৬৮ কেজি কমেছে। তার পেশিই এখন ক্ষয়প্রাপ্ত। বেন্চ প্রেস ১০০ কেজি থেকে ৩০ কেজি। ব্যাক লিফট ১৫০ কেজি থেকে ৬০ কেজি। কাঁধের শক্তি অর্ধেকেরও কম। আলী আল-আজরাক বলেন, “আমাদের জন্য খাদ্য মানে শুধু বেঁচে থাকা। সঠিক পুষ্টি ছাড়া খেলাধুলা আর সম্ভব নয়।”
এই তাঁবু জিম কেবল শারীরিক অনুশীলনের স্থান নয়। এটি মানসিক পুনর্জীবনের এক প্রাণকেন্দ্র। খালেদ আল-বাহাবসা, যিনি এপ্রিলের ইসরায়েলি হামলায় আহত হয়েছেন। আল-জাজিরাকে বলেন, “ক্রীড়া আমাকে জীবনের আলো দেখায়। মানসিক শান্তি দেয়। অনুশীলনে ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে জীবন প্রতীক্ষার আলো ফিরে পেল।”
যুদ্ধের তীব্রতা। বিমান হামলার ভয়। কিন্তু ক্রীড়াবিদরা থেমে থাকেনি। আবু ইউসেফ জানান, ক্ষুধার্ত শরীর হলেও অনুশীলন আমাকে শক্তি ফিরিয়ে দেয়। কোচ আল-আসার মতে, তাঁবু জিম গাজার ধ্বংস। স্থানান্তর এবং সহিংসতার মাঝে এক প্রেরণার প্রতীক। তিনি বলেন, 'আমরা যে জীবন শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে কাটাতে চাই, ক্রীড়া তার এক প্রকাশ।'
গাজায় দীর্ঘ ২২ মাসের যুদ্ধ, অসংখ্য প্রাণহানি। ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো এবং স্থানান্তরিত মানুষের জীবন। সবই ক্রীড়াবিদদের দৃঢ়তার সামনে কিছুই নয়। এই সংকটের মাঝে তাদের সংগ্রাম শুধু শারীরিক নয়। এটি মনকে সচল রাখার এক সাহসী গল্প। তাদের সংগ্রাম কেবল ব্যক্তিগত নয়। এটি গাজার জনগণের টিকে থাকার, প্রতিরোধের এবং আশা বজায় রাখার জীবন্ত প্রতীক।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh