× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

সাদা টুপির কিংবদন্তি অনন্তলোকে পাড়ি জমালেন

মনিরুল ইসলাম

২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০৩ পিএম

ছবি: সংগৃহীত।

ডিকি বার্ড। সাদা টুপি আর উজ্জ্বল স্মৃতির সঙ্গে চিরবিদায়। তিনি কেবল একজন আম্পায়ারই ছিলেন না। তার জীবন ও অন্তর্দৃষ্টি সবসময় ক্রিকেটের আলোকে সজ্জিত ছিল।

১৯৩৩ সালের ১৯ এপ্রিল ইয়র্কশায়ারের বার্ডসলে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবা খনি শ্রমিক ছিলেন। ছোটবেলায় মারা যান। ছোটবেলায় তার ডাকনাম ছিল “ডেনিস।” তার জীবন ছিল আটপৌরে। চ্যালেঞ্জ ও সংগ্রামের মধ্য দিয়েই এগিয়েছিল। তরুণ বয়সে তিনি ইয়র্কশায়ার এবং পরে লেস্টারশায়ারের হয়ে কিছু ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছেন। দুটি সেঞ্চুরি করেছিলেন। হাঁটুর চোট এবং ধারাবাহিকতার কারণে খেলোয়াড় হিসেবে বড় সাফল্য পাননি। গড় ছিল মাত্র ২০-এর কিছু বেশি। ৩২ বছর বয়সে পেশাদার ক্রিকেট থেকে সরে আসেন। কিন্তু ক্রিকেট ছাড়েননি। বরং নতুন ভূমিকায় মাঠে ফেরেন।

১৯৭০ সালে জন ওয়ারের সঙ্গে এক আড্ডায় হঠাৎই সিদ্ধান্ত নেন আম্পায়ার হওয়ার। মাত্র তিন বছরের মধ্যেই টেস্ট আম্পায়ার হয়ে যান তিনি। সেখানেই শুরু হয় নতুন এক যাত্রা। ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বজুড়ে ক্রিকেট ম্যাচ পরিচালনা করেছেন। মোট ৬৬টি টেস্ট ও ৭৬টি ওয়ানডে পরিচালনা করেছেন তিনি। টানা তিনটি বিশ্বকাপ ফাইনালে দায়িত্ব পালন করা তার ক্যারিয়ারের বড় অর্জন।

ডিকি বার্ড ছিলেন আম্পায়ারদের মধ্যে একেবারেই আলাদা। নিখুঁত সিদ্ধান্তের জন্য যেমন সম্মান কুড়িয়েছেন। তেমনি তার হাস্যরস, খামখেয়ালি ভঙ্গি আর নাটকীয় আচরণ মাঠকে করে তুলত প্রাণবন্ত। কখনও খেলোয়াড়দের সঙ্গে রসিকতা, কখনও বা পকেট থেকে মার্বেল ফেলে চিৎকার করে বলা—“আমি আমার মার্বেল হারিয়েছি।" এসব মুহূর্ত তাকে বানিয়েছে কিংবদন্তি। খেলোয়াড়রাও তাকে আপন করে নিয়েছিলেন। অ্যালান ল্যাম্ব, ইয়ান বোথাম বা ডেনিস লিলির দুষ্টুমিও তিনি হাসিমুখে সামলেছেন।

তবে এই খামখেয়ালিপনার আড়ালে তিনি ছিলেন অতি সৎ ও সংবেদনশীল মানুষ। একবার বৃষ্টিতে খেলা নষ্ট হওয়ায় দর্শকদের গালাগালিতে তিনি কেঁদেও ফেলেছিলেন। এলবিডব্লিউ সিদ্ধান্তে তিনি বরাবরই সতর্ক ছিলেন। তবুও ১৯৯৩ সালের এক টেস্টে তার আম্পায়ারিংয়েই রেকর্ড ১৭টি এলবিডব্লিউ হয়। ১৯৯৬ সালের লর্ডস টেস্টে বিদায় নেওয়ার সময় খেলোয়াড় আর দর্শকরা দাঁড়িয়ে তাকে সম্মান জানিয়েছিলেন। সেটিই ছিল সৌরভ গাঙ্গুলি ও রাহুল দ্রাবিড়ের অভিষেক টেস্ট। যেখানে ইতিহাস আর আবেগ মিলেমিশে এক হয়েছিল।

অবসরের পরও ক্রিকেট থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখেননি। আত্মজীবনী “ডিকি বার্ড: মাই অটোবায়োগ্রাফি” প্রকাশের পর সেটি যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া ক্রীড়া স্মৃতিকথা হয়। ইয়র্কশায়ারের বার্নসলেতে তার ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছে। নিজস্ব ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দরিদ্র পরিবারের প্রতিভাবান কিশোরদের খেলাধুলায় সুযোগ করে দিয়েছেন।

ব্যক্তিগত জীবনে সংসার গড়েননি। তার ভাষায়, “আমি ক্রিকেটকেই বিয়ে করেছি। ক্রিকেটই আমার স্ত্রী।” হয়তো সংসার গড়ার সুযোগ মিস করেছেন। কিন্তু ক্রিকেট তাকে দিয়েছে অসাধারণ এক জীবন।

ডিকি বার্ডের মৃত্যুর পর ইয়র্কশায়ার ক্রিকেট বোর্ড তাকে আখ্যা দিয়েছে “জাতীয় সম্পদ” হিসেবে। সাংবাদিক মাইকেল পারকিনসন লিখেছিলেন—“শুধু শেক্সপিয়ারই হয়তো এমন চরিত্র রচনা করতে পারতেন।”

ডিকি বার্ড ছিলেন ক্রিকেটের নীরব নায়ক। মাঠে তার সততা, হাসিতে তার মানবিকতা। আর ভঙ্গিতে তার সরলতা ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.