প্রতিবারই আশার মাদল বাজিয়ে বাংলাদেশ যখন সিরিজ বা টুর্নামেন্ট খেলতে বিদেশ বিভুঁইয়ে যায়। তখন দেশের ২০ কোটি মানুষও স্বপ্নের জাল বুনতে থাকে। কিন্তু ঘুরে ফিরে সেই স্বপ্নই ভেসে যায়। অসহায়তা আর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে। দুবাইয়ের মাঠ আলোর ছটা ছড়িয়ে। গ্যালারির উল্লাস ভেসে যায় আকাশে। কিন্তু ড্রেসিংরুমে নেমে আসে নিস্তব্ধতা, যেন সময় থমকে গেছে। ১৩৬ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমেও টাইগাররা থেমে যায় ১২৪ রানে। পাকিস্তানের কাছে ১১ রানে হার এবং শেষ হলো বাংলাদেশের সুপার ফোরের যাত্রা।
খেলা শুরুর আগে ওয়াসিম আকরাম বলেছিলেন, বাংলাদেশ যদি মৌলিক ক্রিকেট খেলে, সহজেই জিতবে। কিন্তু মাঠে ব্যাটসম্যানদের খেয়ালিপনা ও দায়িত্বজ্ঞানহীন খেলার কারণে দল হোঁচট খেল। ওপেনিং ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ। মাঝের সারির ব্যাটসম্যানরা সহজ রান না নিয়ে বড় শট খেলতে গিয়ে উইকেট হারালেন।
অন্যদিকে ভারতের জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার ও বিশ্লেষক হার্শা ভোগলে সরাসরি বলেছেন, ‘আমি বাংলাদেশের কাছ থেকে যা প্রত্যাশা করেছিলাম, তারা তা করতে পারেনি। তারা দীর্ঘদিন ধরে একই ভুল বারবার করছে।’
ব্যর্থতার দায় শুধু টেকনিকে নয়। পরিকল্পনাতেও আছে ভুল। চার নম্বরে পাঠানো হলো মেহেদী হাসানকে। তিনি আসলে টি–টোয়েন্টির জন্য প্রস্তুত নন। অথচ নির্দিষ্ট কাজের জন্য অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ব্যবহার করা যেত।
দলের ভরসা ছিলেন কেবল ওপেনার সাইফ হাসান। চার ইনিংসে ১২টি ছক্কা মেরেছেন তিনি। কিন্তু একা একজন ব্যাটসম্যানের ব্যাটে দল এগোতে পারে না। জাকের আলী ছয় ম্যাচে একটি ছক্কাও মারতে পারলেন না। তাঁর দায়িত্ব দ্রুত রান আনা। ওপেনার তানজিদ ও পারভেজও নিয়মিত ব্যর্থ।
তবে হতাশার মাঝেও কেউ কেউ বলছেন, উন্নতি অবশ্যই আছে। ২০১১ সালে একই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ তুলেছিল ৮৫ রান, আর এবার সেই লক্ষ্য পূরণ হলো ১২৪ রানে। ১৪ বছরে উন্নতি ৩৯ রানের।
শেষ পর্যন্ত আলোচনায় ঘুরেফিরে এক জায়গাই উঠে আসে। টেকনিকের অভাব। মানসিক দুর্বলতা। উদাসীনতা ও দায়বিমুখতা। যত দিন না এসব কাটানো যাবে, তত দিন বড় মঞ্চে বাংলাদেশ শুধু কাছাকাছি গিয়ে হেরে ফিরবে। “ঘাটে পৌঁছে নৌকা ডুবি” এটাই যেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রতিচ্ছবি।