× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

আলোচনায় তরুণ হরজাস সিংহ

মনিরুল ইসলাম

০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:৩৭ পিএম

ছবি: সংগৃহীত।

কখনো কখনো ক্রিকেটে এমন সব ইনিংস দেখা যায়। যা কেবল স্কোরবোর্ডে লেখা সংখ্যাই নয়। সেগুলো হয়ে ওঠে ইতিহাসের গল্প, স্মৃতির অমূল্য অংশ। শনিবার সিডনির প্র্যাটেন পার্কে তেমনই এক গল্প লিখলেন তরুণ ব্যাটসম্যান হরজাস সিংহ। তার ব্যাট থেকে ঝরে পড়ল এমন এক চোখধাঁধানো ইনিংস। যা একদিকে মনকাড়া সেঞ্চুরির রূপকথা, অন্যদিকে প্রতিপক্ষের জন্য দুঃস্বপ্ন। মাত্র ১৪১ বলে তিনি করলেন ৩১৪ রান। যেখানে ছক্কার সংখ্যা ৩৫!

প্রথম দিকে ছিলেন শান্ত, ধীরস্থির। ৭৪ বলে শতক ছুঁয়ে ফেললেন সহজেই। কিন্তু এর পর যেন ব্যাটে নেমে এল আগুন। প্রতিটি বলকে ছক্কার মতো করে আকাশে ভাসাতে লাগলেন। মাত্র ৬৭ বলে করলেন আরও ২১৪ রান। তিনশ পূর্ণ হলো বাঁহাতি স্পিনার টম মুলেনকে বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে। তখন প্র্যাটেন পার্কে দর্শকরা উঠে দাঁড়িয়ে তালি দিচ্ছিলেন। যেন চোখের সামনে এক মহাকাব্য রচিত হচ্ছে।

৩১৪ রান তাকে জায়গা করে দিল নিউ সাউথ ওয়েলস প্রিমিয়ার ফার্স্ট গ্রেড ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ ইনিংসের তালিকায়। তার ওপরে আছেন শুধু কিংবদন্তি ভিক্টর ট্রাম্পার (৩৩৫ রান, ১৯০৩) এবং ফিল জ্যাকস (৩২১ রান, ২০০৭)। তবে লিমিটেড-ওভারের ক্রিকেটে এটি অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। একক ক্যামেরায় ইউটিউবে সম্প্রচারিত ম্যাচে যে দৃশ্যের সাক্ষী হলো দর্শকরা। তা হয়তো দীর্ঘদিন মনে রাখবে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটপাড়া।

এই ঝড়ো ইনিংস শেষে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে হরজাস বলেন, “এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে পরিষ্কার ব্যাটিং। অফ-সিজনে পাওয়ার হিটিং নিয়ে অনেক খেটেছি। আজ সেই পরিশ্রমের ফল পেলাম। এটা আমার জন্য বিশেষ এক দিন।” তার কণ্ঠে শোনা যাচ্ছিল এক তরুণের গর্ব, আত্মবিশ্বাস আর নতুন স্বপ্নের ইশারা।

হরজাসের ক্রিকেটযাত্রা শুরু শৈশবেই। ২০০৫ সালে সিডনিতে জন্ম নেওয়া এই ক্রিকেটার ভারতীয় বংশোদ্ভূত পরিবারে বড় হন। তার বাবা ইন্দ্রজিৎ সিং ছিলেন পাঞ্জাবের প্রাক্তন বক্সিং চ্যাম্পিয়ন এবং মা আভিন্দার কৌর জাতীয় লং জাম্পার। খেলাধুলার সেই উত্তরাধিকার ছোটবেলা থেকেই তার ভেতরে প্রতিফলিত হতে থাকে।

আট বছর বয়সে হাতে তুলে নেন ক্রিকেট ব্যাট। আদর্শ হিসেবে বেছে নেন উসমান খাওয়াজাকে। বেড়ে ওঠেন অস্ট্রেলিয়ার প্রখ্যাত কোচ নিল ডি’কস্টার তত্ত্বাবধানে। যার ছায়ায় গড়ে উঠেছেন মাইকেল ক্লার্ক, ফিল হিউজ, মিচেল স্টার্ক আর মার্নাস লাবুশেনের মতো তারকারা। সেই একই হাতের ছোঁয়াতেই ধীরে ধীরে উঠে আসেন হরজাস।

যদিও তার পথচলা ছিল উত্থান-পতনের। ২০২৩ সালে ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে টেস্টে সেঞ্চুরি করলেও নিউ সাউথ ওয়েলস তাকে রুকি কন্ট্রাক্ট দেয়নি। অনেক সতীর্থ স্টেট ক্রিকেটে জায়গা করে নিয়েছে। তিনি থেকে গেছেন উপেক্ষিত। কিন্তু হরজাস হাল ছাড়েননি। নিজের ভাষায় তিনি বলেছিলেন, “গত এক-দুই মৌসুমে বাইরে থাকা, অন্য বিষয় নিয়ে ভাবা—সবকিছু ভুলে গেছি। এখন আমি শুধু নিজের খেলা নিয়েই ভাবছি।”

হয়তো এই ৩১৪ রানের ঝড়ই হবে সেই প্রতীক্ষিত মোড় ঘোরানো মুহূর্ত। বাদ পড়া চুক্তি, হারানো সুযোগ—সবকিছুর জবাব তিনি দিলেন ব্যাট দিয়ে। সিডনির আকাশে যে ছক্কার বৃষ্টি নামিয়েছেন হরজাস সিংহ, সেটি কেবল একটি ইনিংস নয়, বরং ভবিষ্যতের এক উজ্জ্বল সম্ভাবনার ইঙ্গিত। তরুণ এই ব্যাটসম্যানের নাম এখন আলোয় ঝলমল করছে। আর ক্রিকেট দুনিয়া তাকিয়ে আছে তার পরের অধ্যায়ের দিকে।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.