পাকিস্তান ক্রিকেটের ইতিহাসে ইমরান খান এক কিংবদন্তি নাম। সফল অলরাউন্ডার হিসেবে যেমন তার কৃতিত্ব। তেমনি অধিনায়ক হিসেবেও তিনি ছিলেন অসাধারণ। ক্রিকেট মাঠের সাফল্য ও রাজনীতির সংগ্রাম। দুই জগতেই ইমরান খান নিজেকে প্রমাণ করেছেন সত্যিকারের নেতা হিসেবে।
লাহোরের নরম আলোয় ১৯৫২ সালের ৫ অক্টোবর জন্ম নেন ইমরান আহমেদ খান নিজামী—এক সম্ভ্রান্ত পশতু বংশের সন্তান। প্রকৌশলী পিতার দৃঢ়তা আর মায়ের মমতা মিলেমিশে তৈরি করেছিল তার চরিত্রের ভিত। শিশুকালের সেই অনুশাসন, আত্মবিশ্বাস আর স্থিরতা-ই তাকে গড়ে তোলে একদিন সেই মানুষে। যিনি পরবর্তীতে বদলে দেন পাকিস্তানের ইতিহাসের দিকচিত্র।
ইমরান খান এক নামেই মিশে আছে ক্রিকেটের গৌরব, নেতৃত্বের প্রতীক আর জাতির অনুপ্রেরণার গল্প। দুই দশকেরও বেশি সময়জুড়ে বিস্তৃত তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে তিনি ছিলেন এক অদ্বিতীয় অলরাউন্ডার, এক অনুপ্রেরণার নাম। ৮৮টি টেস্টে ৩৮০৭ রান ও ৩৬২ উইকেট। আর ১৭৫টি ওয়ানডেতে ৩৭০৯ রান ও ১৮২ উইকেট। সংখ্যাগুলোই বলে তার কীর্তির কথা। ব্যাট হাতে নির্ভরযোগ্য, বল হাতে ভয়ংকর আর নেতৃত্বে অবিচল।
১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে সেই নেতৃত্বই নিয়ে যায় পাকিস্তানকে প্রথম ও একমাত্রবারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের গৌরবে। “Play like a cornered tiger”—তার সেই বিখ্যাত উক্তি আজও প্রতিধ্বনিত হয় পাকিস্তান ক্রিকেটের ইতিহাসে।
ক্রিকেট ছাড়ার পর শুরু হয় ইমরানের জীবনের নতুন অধ্যায় রাজনীতি। ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (PTI)। যার অর্থ “ন্যায়বিচারের আন্দোলন।” দীর্ঘ দুই দশকের সংগ্রাম, সমালোচনা ও প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে ২০১৮ সালে হন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে সংস্কার, আর জাতীয় স্বার্থে দৃঢ় নীতির জন্য তিনি পরিচিতি পান এক দৃঢ়চেতা নেতারূপে।
মায়ের স্মৃতিতে গড়ে তোলা শওকত খানম ক্যানসার হাসপাতাল আজও হাজারো মানুষের জীবন বাঁচাচ্ছে। তার মানবিকতার জীবন্ত প্রতীক হিসেবে।
ইমরান খান এমন এক ব্যক্তিত্ব, যিনি এক হাতে ক্রিকেট ব্যাট ধরেছিলেন। আরেক হাতে নেতৃত্বের পতাকা। তার জীবন প্রমাণ করে দৃঢ়তা, সততা আর বিশ্বাস থাকলে মানুষ অসম্ভবকেও সম্ভব করতে পারে।
আজ তার জন্মদিনে বিশ্বজুড়ে ভক্তরা স্মরণ করছে সেই কিংবদন্তিকে। যিনি একসময় মাঠে ছিলেন পাকিস্তানের বাঘ। আর এখন ইতিহাসে এক অমর নাম ইমরান খান।