২০১১ সালের নভেম্বরের সেই রাতটি তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনায় ভেঙে চূর্ণ হয় পেলভিস, সরে যায় হিপ, ফেটে যায় ব্লাডার। এক মুহূর্তেই থেমে যায় স্বপ্নের গতি।
অলিম্পিকে জ্যাভলিন হাতে নামার স্বপ্নটা সেদিনই শেষ হয়ে যায়। তিন মাস হাসপাতালে কাটে, তারপর হুইলচেয়ারে বন্দি জীবন। সাত মাস পর হাঁটতে পারলেও আর ফিরে পাননি আগের সেই তাজমিনকে। স্বপ্ন, আশা, সবকিছু যেন হারিয়ে যায় একসঙ্গে।
এক সময় তিনি কাজ নেন রেস্টুরেন্ট আর মুদি দোকানে। মানুষ চিনে ফেলত, বলত আপনি তো সেই জ্যাভলিন গার্ল। পুরোনো পরিচয় তখন মনে কাঁটার মতো বিঁধত। মনোবিজ্ঞানীর কাছেও শান্তি পাননি। জীবনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন। তারপর ২০১৮ সালের এক সকালে ফিরে যান নিজের পুরোনো স্কুলে। ধুলোমাখা জ্যাভলিনটা হাতে তুলে নেন আবার। আর সেদিনই যেন ফিরে পান নিজের সাহস।
সেখান থেকেই শুরু নতুন গল্পের ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশ। প্রাদেশিক ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স তাঁকে পৌঁছে দিল জাতীয় দলে। সময়টা যেন আবারও তাঁকে বলল, “জীবন থেমে নেই।” আর আজ, দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সিতে বিশ্বকাপে শতরান করে তিনি প্রমাণ করেছেন। দুর্ঘটনা, হতাশা, হার কিছুই শেষ নয়। তাজমিন ব্রিটসের কণ্ঠে যেন প্রতিধ্বনিত হয় একটাই কথা “আমি বেঁচে আছি, আমি পেরেছি।”
সোমবার ইন্দোরের রোদে ঝলমল করছিল সেই বেঁচে ওঠা মেয়েটির ব্যাট। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে রান তাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনার খেললেন এক অনবদ্য ১০১ রানের ইনিংস। মাত্র ৮৯ বলে, ১৫টি চার ও এক ছক্কায় সাজানো। প্রথম ম্যাচে অল্প রানে আউট হলেও পরের ম্যাচেই নিজের রূপে ফিরলেন তিনি। বছরে এটি ছিল তাঁর দ্বিতীয় শতরান। নাম তুললেন দক্ষিণ আফ্রিকার রেকর্ড বইয়েও।
তাজমিন ব্রিটসের শতরানেই হাসি ফিরেছে প্রোটিয়া শিবিরে। তাঁর ১০১ রানের ঝলমলে ইনিংসের ওপর ভর করে সহজ জয় পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। চলতি বছর ওয়ানডেতে এটি তাঁর পঞ্চম সেঞ্চুরি। এক পঞ্জিকাবর্ষে পাঁচ শতরানের কীর্তি গড়ে ইতিহাস গড়লেন তিনি।
৩৪ বছর বয়সি ব্রিটস ভেঙে দিলেন ভারতীয় ওপেনার স্মৃতি মান্ধানার রেকর্ড। মান্ধানা এর আগে এক পঞ্জিকাবর্ষে চারটি শতরানের মালিক ছিলেন। যদিও চলমান বিশ্বকাপে তাঁর হাতেও আছে সেই রেকর্ড ছোঁয়ার সুযোগ।