ফুটবল মোছা. নার্গিস খাতুনের কাছে শুধুই একটি খেলা নয়। এটি তার জীবনের প্রতিশ্রুতি, তার স্বপ্নপথের অন্য নাম। গ্রামের এক সাধারণ আটপৌরে পরিবারে জন্ম নেওয়া এই মেয়েটি আজ দেশের শীর্ষস্থানীয় নারী ফুটবলারদের কাতারে। ছোটবেলায় ক্লাসরুমে ছেলেদের পুরোনো, ছেঁড়া ফুটবল দিয়ে খেলতে খেলতেই শুরু হয়েছিল তার যাত্রা। সমাজের কটু কথা, প্রতিবেশীদের ঠাট্টা কিছুই থামাতে পারেনি তাকে। নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তি, সাহস আর অবিচল পরিশ্রমই তাকে টেনে নিয়েছে ফুটবল মাঠের আলোয়। যেখানে এখন তার পদচারণা অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে অসংখ্য স্বপ্নবতী তরুণীর জন্য।
ছোটবেলায় স্কুলের মাঠে প্রথম ফুটবল খেলার সাহস দেখানোর মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে নার্গিস দেশের মহিলা ফুটবলের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় লিখেছেন। ২০১৪ সালের অনূর্ধ্ব-১৪ এএফসি ফুটবল টুর্নামেন্টে ফাইনালে নেপালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। এরপর তিনি অনূর্ধ্ব-১৬, ১৭, ১৯ দল এবং জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন। জাপান, কোরিয়া, চীনসহ ১০টির বেশি দেশের বাইরে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং ২০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ছাত্রী হিসেবে ভর্তি হওয়ার পর নার্গিস ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবলসহ নানা ক্রীড়া ইভেন্টে অংশ নিয়েছেন। খেলোয়াড় হিসেবে তিনি মাঠের অবকাঠামো, পতাকা বোঝা এবং সহপাঠী খেলোয়াড়দের সমস্যাগুলো ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। তার অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে, ক্রীড়ার উন্নয়ন শুধু খেলার চর্চা নয়। শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশেরও মূল চাবিকাঠি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল থেকে ক্রীড়া সম্পাদক পদে প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন নার্গিস খাতুন। নির্বাচিত হলে তার লক্ষ্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের জন্য খেলাধুলার সুযোগ ও সুবিধা নিশ্চিত করা।
নির্বাচিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলাধুলায় প্রতিনিধিত্ব করানোর পরিকল্পনা সম্পর্কে নার্গিস বলেন, “আমার লক্ষ্য শুধু প্রতিযোগিতা নয়। মেয়েদের শারীরিক সুস্থতা ও মানসিক প্রশান্তির জন্য ক্রীড়া অপরিহার্য। তাই আন্তঃহল ও আন্তঃটুর্নামেন্টগুলো বেশি করে আয়োজন করা হবে। বাইরে থেকে দক্ষ কোচ ও ট্রেইনার আনা হবে। যাতে শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলতে সক্ষম হয়।”
নার্গিসের চোখে প্রতিটি ম্যাচ কেবল খেলা নয়। দেশের মানুষের আশা, দায়িত্ব ও জাতীয় পতাকার মর্যাদার প্রতিফলন। তিনি বলেন, “যখন আমরা দেশের পতাকা বুকে নিয়ে মাঠে নামি। দেশের মানুষের জয়ের আনন্দ আমাদের উপর নির্ভর করছে।”