বৃহস্পতিবার রাত। জেমিমা রদ্রিগেজের ব্যাটিং দর্শকদের মন মাতিয়ে রাখল। প্রতিটি শটে ফুটে উঠছিল তার আত্মবিশ্বাস। শক্তি আর দক্ষতা। অপরাজিত ১২৭ রানের ইনিংস খেলেই তিনি ভারতের জয়কে রঙিন করে দিলেন। ডি ওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামের আলো সেই রাতকে আরও ঝলমলে প্রাণবন্ত করে তুলছিল।
৩৫ হাজার দর্শক। লাখো চোখ টেলিভিশনের পর্দায়। সবাই দেখল সেই মুহূর্ত। যখন ভারতের জয় নিশ্চিত হতেই জেমিমা হাঁটু গেড়ে বসে পড়লেন। চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল অশ্রু। আনন্দের। স্বস্তির। মুক্তির অশ্রু। এই জয় কেবল একটি ম্যাচ জেতা নয়। এ ছিল নিজের হারানো গল্পকে নতুন করে লেখার জয়গান।
২০১৭ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে মুম্বাই বিমানবন্দরে পতাকা হাতে স্বাগত জানিয়েছিলেন রানার্সআপ ভারতীয় নারী দলকে। তখনই স্থির করেছিলেন একদিন তিনি ভারতের হাতে তুলে দেবেন বিশ্বকাপ। কিন্তু সেই পথ সহজ ছিল না। ২০২২ সালের কমনওয়েলথ ফাইনালের হারের বেদনা। ২০২৩ বিশ্বকাপে হরমনপ্রীতের রানআউটের হতাশা। ২০২৪ সালের বিশ্বকাপে আবারও পরাজয়। প্রতিবারই পাশে ছিলেন জেমিমা। কিন্তু সুখের অধ্যায় তার ভাগ্যে জোটেনি।
২০২৫ সালের সেমিফাইনালের সন্ধ্যা তাই ছিল ভিন্ন। হরমনপ্রীত কৌর আউট হতেই চোখে ফিরে এলো অতীতের সব দুঃস্বপ্ন। ৩৩৮ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভারত অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিল। শরীর ক্লান্ত। তবু মন স্থির। জেমিমা জানতেন এবারই তার সময়। পাশে দাঁড়ালেন দীপ্তি শর্মা, ঋচা ঘোষ, অমনজোত কৌর। প্রতিটি শটে বোঝা যাচ্ছিল জেমিমা থামবেন না।
শেষ বলের আগে অমনজোতের ব্যাট থেকে এলো জয়সূচক বাউন্ডারি। মাঠজুড়ে উৎসব। আর জেমিমা হাঁটু গেড়ে বসে পড়লেন। সতীর্থদের আলিঙ্গনে মিলিয়ে গেল সব ক্লান্তি। সব কষ্ট। পরে বললেন, “টুর্নামেন্টের শুরুতে ভয়ানক উদ্বেগে ভুগেছিলাম। মাকে ফোন করে কেঁদেছি। কিন্তু সতীর্থরা পাশে ছিল।”
শতরান পূর্ণ করেও উদযাপন না করার কারণ জানালেন, “এটা আমার জন্য নয়। এটা ভারতের জন্য। আগেও হেরেছি, আজ শুধু চেয়েছিলাম দলকে জেতাতে।” শেষ দিকে দীপ্তি প্রতিটি বলে সাহস জুগিয়েছেন। সতীর্থদের সমর্থন। নিজের বিশ্বাস আর ঈশ্বরের প্রতি আস্থা মিশিয়ে গড়ে উঠল এক অবিশ্বাস্য ইনিংস।
জেমিমার চোখে অশ্রু। ঠোঁটে হাসি। একসময়ের ভাঙা স্বপ্ন আজ পূর্ণতার প্রতীক। অশ্রু থেকে জয়। হতাশা থেকে উল্লাস। জেমিমা রদ্রিগেজ আজ ভারতের নতুন অনুপ্রেরণা।