সম্প্রতি বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক অনুচিত আচরণের অভিযোগ তোলার পর দেশের ক্রীড়াঙ্গন উত্তাল। এবার মুখ খুলেছেন নারী শুটার তাসমায়াতি এমা আলী। জাহানারা আলমের উদাহরণই তাকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার সাহস জুগিয়েছে। অকপটে তিনি বলেছেন, তাকে অপমান-অপদস্থ করা, সাসপেন্ড করার হুমকি দেওয়া এবং তার পরিবারের প্রতি অশ্লীল মন্তব্য করার দুঃস্মৃতি। এসব অভিযোগ তিনি ফেডারেশনের জয়েন্ট সেক্রেটারির বিরুদ্ধে তুলেছেন। তার কথা শুনেছেন মনিরুল ইসলাম-
সংবাদ সারাবেলা: আপনি কখন থেকে এবং কীভাবে শ্যুটিং খেলায় যুক্ত হলেন? জাতীয় দলে জায়গা পাওয়া আপনার জন্য কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
তাসমায়াতি এমা আলী: আমি ২০২২ সালে শুটিংয়ে পথচলা শুরু করি। প্রথম প্রতিযোগিতা ছিল ইন্ডিপেনডেন্স গোল্ডেন জুবিলি এয়ারগান চ্যাম্পিয়নশিপ। এরপর ক্যাম্পে যোগ দিয়ে স্বর্ণপদক ও ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ পদক জিতি। সিভিল ক্লাব থেকে আসায় শুরুটা ছিল চ্যালেঞ্জিং। তবে নিয়মিত ব্যায়াম, যোগব্যায়াম ও কোয়ান্টাম প্র্যাকটিসের মাধ্যমে নিজেকে শৃঙ্খলিত করেছি। পরিবারের নিঃস্বার্থ সমর্থনই আমাকে এগিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা দিয়েছে।
সংবাদ সারাবেলা : সার্চ কমিটির সঙ্গে দেখা করার সময় আপনি ঠিক কী বিষয় নিয়ে কথা বলতে চেয়েছিলেন?
এমা: আমি নারী অ্যাথলেটদের প্রতিনিধি হিসেবে সার্চ কমিটিতে গিয়েছিলাম। সঙ্গে ছিলেন কয়েকজন পুরুষ শুটার ও পুরোনো-নতুন কমিটির সদস্যরা। সেখানে আমি শুধু বলেছিলাম যে, কমিটিই আসুক। তাতে আমাদের আপত্তি নেই। তবে যেন এমন কেউ না থাকে। যিনি নারী অ্যাথলেটদের জন্য অনিরাপদ। আর শুধু এই কথার কারণেই আমাকে এমন পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে।
সংবাদ সারাবেলা: সেই ঘটনার পর আপনি যে অপমান আর অশোভন আচরণের মুখোমুখি হয়েছেন। একটু বিস্তারিত বলুন তো...
এমা : আমি যখন ফেডারেশনে কথা বলতে যাই। জয়েন্ট সেক্রেটারি প্রথমেই আমার পরিবার নিয়ে কটূ মন্তব্য করেন। মনে হয়েছিল, তিনি ভেবেছেন আমি আগের কমিটির সঙ্গে যুক্ত। সবচেয়ে ঘৃণিত মুহূর্ত ছিল যখন তিনি বলেন, “তুমি যদি কমিটিতে আস। ক্যাম্পে গেলে ধর্ষিত হতে পার। কমিটিতে এমনও শুনতে পাওয়া গিয়েছে। এরপর আমার ক্লাবের মেয়েদের নিয়ে বলেন, “তোমাদের ক্লাবের মেয়েরা সবাই পতিতা। শেষে হুমকি দিয়ে বলেন, “তুমি যা করছ, তার জন্য তোমাকে সাসপেন্ড করা হয়নি। এটাও অনেক।” পুরো সময় তিনি অশোভন, অপমানজনক ও হুমকিমূলক আচরণ করেছেন।
সংবাদ সারাবেলা: আপনি বলেছিলেন, রাত এগারোটার পর কল দিতেন। এই বিষয়টা কেমন ছিল? আপনি তখন কীভাবে প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন?
এমা: রাত ১১টার পর কল দেওয়া বিষয়টি অস্বাভাবিক ছিল। আমি বিকেল তিনটা-চারটার দিকে ফোন দিয়েছিলাম। তিনি কলব্যাক করেন রাত ১১টার দিকে। ফেডারেশনে ১০টার পর ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ। তাই ওই সময় কল দেওয়া অনুচিত। যদিও তিনি অশালীন কিছু বলেননি। বলেছিলেন, আমাকে আমার ক্লাব ছাড়তে হবে। না হলে ক্যাম্পে অংশ নিতে পারব না। তিনি বলেন, “তুমি ক্লাব ছাড়ো, আমরা অন্য ক্লাব থেকে সুযোগ করে দেব।” কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো ক্লাবের নাম বলেননি, শুধু বলেছিলেন, “আগে ছাড়ো, পরে দেখা যাবে।”
সংবাদ সারাবেলা: এই ঘটনার মানসিক প্রভাব আপনার জীবনে কতটা গভীর ছিল?
এমা: ঘটনার পর আমার ওপর মানসিক প্রভাব পড়ে। আমি তখন প্রায় এক বছর ধরে নিয়মিত ট্রেনিংয়ে ছিলাম। একজন অ্যাথলেটের জীবন ট্রেনিংয়ের সময় সম্পূর্ণ শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকে। খাওয়া, ঘুম, সবকিছুই নিয়মের মধ্যে। হঠাৎ করে যখন বাসায় ফিরে এলাম। পুরো জীবনটা যেন ভেঙে গেল। ভবিষ্যৎ তখন কেবল ধূসর মনে হচ্ছিল। আমি প্রায়ই অকারণে কাঁদতাম। বন্ধুবান্ধব যারা আমাকে সবসময় হাসিখুশি মেয়ে হিসেবে চিনত। তারা হঠাৎ আমাকে চুপচাপ ও ভেতরে ভাঙা মানুষ হিসেবে দেখতে পেল। তবে এখন আমি অনেকটা স্বাভাবিক ও নির্ভার হয়ে উঠেছি।
সংবাদ সারাবেলা: আপনি বলেছেন, “আমি ন্যায় চাই, ভয় নয়।” এই কথার মাধ্যমে আপনি ঠিক কী বার্তা দিতে চান?
এমা: আমি সবসময় বলেছি আমি ন্যায় চাই, ভয় নয়। আমি বিকেএসপির শিক্ষার্থী ছিলাম না। সম্পূর্ণ বাইরে থেকে শুটিংয়ের ভেতরে প্রবেশ করেছি। তাই বুঝে উঠতে পারতাম না কোন সময় কী বলা উচিত। কোন কথায় উল্টো ক্ষতি হতে পারে। এই ভয় থেকেই আমি অনেক সময় চুপ থাকতাম। কম কথা বলতাম। পরবর্তীতে এনওসিতে মেয়েদের প্রতিনিধি হিসেবে কথা বলতে গিয়ে আজ আমার ক্যারিয়ার এমন অবস্থায় নেমে এসেছে। তখন বুঝতে পারছিলাম না আমি বলব, না বলব। এতটাই বিভ্রান্ত ছিলাম যে কথা বলার সাহস হারিয়ে ফেলেছিলাম। সেই কারণেই বলেছিলাম আমি ন্যায় চাই, ভয় নয়।
সংবাদ সারাবেলা: বাংলাদেশের নারী খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা ও সম্মান নিশ্চিত করতে আপনার মতে কী পরিবর্তন দরকার?
এমা: দেশ যেমন আমাদের সম্পদ, আমরাও নারী হিসেবে এই দেশের সম্পদ। সে বিবেচনায় দেশের উচিত নারী খেলোয়াড়দের যথাযথ সম্মান দেওয়া। নারী-পুরুষের মধ্যে কোনো ধরনের বৈষম্য রাখা উচিত নয়। পাশাপাশি নারীদের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি।
সংবাদ সারাবেলা: সম্প্রতি নারী ক্রিকেটার জাহানারা আলমও যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন। আপনি কি মনে করেন, নারী ক্রীড়াবিদরা এখন ভয় ভেঙে নিজেদের অভিজ্ঞতা প্রকাশের সাহস পাচ্ছেন? এই পদক্ষেপগুলো কি ভবিষ্যতে ক্রীড়াঙ্গনের সংস্কারে বাস্তব পরিবর্তন আনতে পারবে?
এমা: উনার অকপট কথা আমাকে সাহস জুগিয়েছে। যা আমার সঙ্গে হয়েছে, তারপর আমি একেবারে শুটিং ছেড়ে দিয়েছি। এমন নোংরা পরিবেশে দেশের প্রতিনিধিত্ব করা সম্ভব নয়। আমি চাই, যাদের সঙ্গে এমন হয়েছে, তারাও সামনে আসুক। আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কেউ এমন পরিস্থিতির শিকার না হয়। ক্রীড়া উপদেষ্টা যেন নারীদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দেন এবং যারা এ ধরনের কাজ করছে। তাদের অপসারণ করা হয়। শেষ পর্যন্ত আমাদের লড়াই নিজেদের জন্য, দেশের জন্য-ঋরমযঃ ভড়ৎ ুড়ঁৎংবষভ ধহফ ভড়ৎ ঃযব ঘধঃরড়হ, ঃরষষ ঃযব ষধংঃ নঁষষবঃ মবঃং ড়ঁঃ ড়ভ ঃযব নধৎৎবষ.
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
