× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

নতুনরূপে সেজেছে শেরপুরের গজনী অবকাশ কেন্দ্র

শেরপুর প্রতিনিধি

০৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০২:১০ এএম

শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার গজনী অবকাশ বিনোদন কেন্দ্রটি চলতি শীত মৌসুমে দর্শনার্থীদের আগমনের অপেক্ষায় মনোরম পরিবেশে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। প্রতিবছর শীত মৌসুমে ওই বিনোদন কেন্দ্রটি দর্শনার্থীদের ভীড়ে মুখরিত হয়ে উঠে। সারাদেশ থেকে প্রতিদিন শতশত ভ্রমনপিপাষুদের আগমন ঘটে এ বিনোদন কেন্দ্রটিতে। তবে করোনাকালীন সময়ে পর্যটন কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় পর্যটকের আনাগোনা ছিল না। এতে গত ২ বছর পর্যটন কেন্দ্রের ইজারাদার ও ব্যবসায়ীদের লোকসান গুণতে হয়েছে।

আর তাই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চলতি বছর শীত মৌসুমে দর্শনার্থীদের আগমনের অপেক্ষায় আগেভাগে মনোরম পরিবেশে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিনোদন কেন্দ্রটি। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে নেয়া হয়েছে করা পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

জানা গেছে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি গারো পাহাড়ের পাদদেশে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলা। এ সৌন্দর্যকে ঘিরে ১৯৯৩ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক আতাউর রহমান মজুমদার উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গজনী এলাকায় গড়ে তুলেন একটি পিকনিক স্পট। মৌজার নামানুসারে কেন্দ্রটির নাম রাখা হয় গজনী অবকাশ বিনোদন কেন্দ্র। ৫০ একর পাহাড়ি জমিতে এ পিকনিক স্পটটি গড়ে তোলা হয়।

পিকনিক স্পটটি গড়ে উঠার পর থেকেই সারাদেশ থেকে ভ্রমণপিপাসু ও পর্যটকদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠে গজনী অবকাশ কেন্দ্রটি। এ কেন্দ্র থেকে প্রতিবছর সরকারের ঘরে আসে বিপুল পরিমাণের রাজস্ব। এ কারণে জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রনাধীন গজনী অবকাশ পিকনিক স্পটটির প্রতি আরো মনোযোগী হয়ে উঠে জেলা প্রশাসন। শুরু হয় কেন্দ্রটির সম্প্রসারণের কাজ। নানা দিক থেকে কেন্দ্রটির সম্প্রসারণ করে সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে।

এ বিনোদন কেন্দ্রটির চারপাশে সারি সারি শালগজারীসহ বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরাজী, উচুনিচু পাহাড়, ঝর্ণা, লেক, পাহাড়ের চূড়ার চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গড়ে উঠেছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী (আদিবাসী) সম্প্রদায়ের লোকদের আবাস। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী-পুরুষ, শিশুরা তাদের নিজেদের হাতে তৈরী বাহারী রঙের পোষাক পরিধান করে থাকে। এ যেন বিনোদন কেন্দ্রের আলাদা আরো একটি আকর্ষণ।

এ পাহাড়ের টিলায় দাঁড়িয়ে উত্তর দিকে তাকালে চোখে পড়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরার পাহাড় ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ক্যাম্প। এছাড়া এ বিনোদন কেন্দ্রে কৃত্রিম এসব কিছুর পাশাপাশি অকৃত্রিম আকর্ষণীয় আকর্ষণীয় নানা রঙের ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে। যা দেখলে ভ্রমণপিপাসুদের মন আনন্দে দোল খায়।

এ গজনী অবকাশ বিনোদন কেন্দ্রে একবার এলে আর কিছুতেই মন ফিরে যেতে চাইবে না যেকোন ভ্রমণপিপাসুদের। এ বিনোদন কেন্দ্রে রয়েছে মিনি চিরিয়াখানা, মনোরম পরিবেশে নির্মাণ করা হয়েছে লেক। লেকে রয়েছে ভাসমান প্যাডেল বোর্ড, এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যেতে নির্মাণ করা হয়েছে ঝুলন্ত সেতু। শিশু পার্কে মিনি ট্রেনসহ নানা ধরনের খেলাধূলার ব্যবস্থাও রয়েছে।

জিরাফ, ডাইনোসর, হাতি, বানর, বাঘ, হরিণের ভাস্কর্য, রয়েছে গারো মা ভাস্কর্য, বাঘের মুখ দিয়ে এক পাহাড়ের নিচ দিয়ে অন্য পাহাড়ে যেতে নির্মাণ করা হয়েছে পাতালপুরী রাস্তা। পানির ফোয়ারা, কেবলকার, ওয়াচ টাওয়ারসহ নানা রঙবেরঙের ভাস্কর্য নির্মাণ করে মনোরম পরিবেশে সাজানো হয়েছে পর্যটন কেন্দ্রটি। ঢাকা মহাখালী বাসটার্মিনাল থেকে গজনী অবকাশ বিনোদন কেন্দ্রের দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার বাসে আসতে সময় লাগে ৪ থেকে সাড়ে চার ঘন্টা।

শেরপুর জেলা সদর থেকে বিনোদন কেন্দ্রের দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। শেরপুর থেকে বিনোদন কেন্দ্র আসতে সময় লাগে ৪০ মিনিট। ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর পাড়ি দিয়ে নকশী বিজিবি সীমান্ত ফাঁড়ি পাড়ি দেয়ার পর বিনোদন কেন্দ্রে প্রবেশের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত গাড়িতে বসে মনে হবে রাস্তার দু’পাশে সারি সারি শালগজারি বাগানের সুরঙ্গের মধ্যে প্রবেশ করছেন। শেরপুর জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণাধীন বিনোদন কেন্দ্রে পৌছার পর রেস্ট হাউজে বিশ্রামের ব্যবস্থা আছে ।

রেস্ট হাউজের ভাড়া দিতে হবে ৫০০ টাকা। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে এ রেস্ট হাউজে রাত্রিযাপনের অনুমতি নেই দর্শনার্থীদের। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত দর্শনার্থীদের রাত যাপনের সুবিধার জন্য জরুরি ভিত্তিতে রেস্ট হাউজের ব্যবস্থা করা হবে। ইতিমধ্যেই কাজ শুরুর প্রস্তুতিও হাতে নেয়া হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।

বিনোদন কেন্দ্রের ইজারাদার ফরিদ আহমেদ বলেন, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কেন্দ্রটির অনেকগুলো উন্নয়ন হয়েছে। বর্তমানেও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত আছে। এরপরেও কিছু কাজ জরুরীভাবে করা প্রয়োজন। তন্মধ্যে কেন্দ্রের মাঝখান দিয়ে যাতায়াতের রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী। এতে কেন্দ্রে আগত দর্শনার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কেন্দ্রে প্রবেশপথে গেইট ও টোল আদায়ের ঘর নেই। ফলে দর্শনার্থীদের কাছ থেকে টোল আদায়ের ক্ষেত্রে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়। তার দাবি, কাজগুলো যেন দ্রুত করে দেন প্রশাসন।

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুক আল মাসুদ বলেন, সমস্যাগুলো সমাধানের বিষয়ে এলজিইডির সাথে কথা হয়েছে রাস্তাটি সংস্কার করে দেয়ার জন্য। জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে গেইটটি করে দেয়ার আশ্বাস পাওয়া গেছে। অন্যান্য সমস্যাগুলো পর্যায়ক্রমে দ্রুতই সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার বলেন, করোনাকালীন সময়ে পর্যটন কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় ভ্রমণপিপাসুদের আগমন ঘটেনি। এতে সরকারসহ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চলতি বছর শীত মৌসুমে দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে পর্যটন কেন্দ্রের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করা হয়েছে। বর্তমানেও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলমান রয়েছে। আগামীতে পর্যটন কেন্দ্রটি আরো সৌন্দর্য ও আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলা হবে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, চলতি শীত মৌসুমে দর্শনার্থীদের আগমন ঘটবে বিনোদন কেন্দ্রটিতে। তারা যেন পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা ও আনন্দ উপভোগ করতে পারেন এটাই আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।



Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.