কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপের বিচ্ছিন্ন ছোট আকারে আরেকটি দ্বীপ ছেঁড়াদিয়া নামে পরিচিত। তবে এই ছেঁড়াদিয়া দ্বীপে দিন দিন পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়ছে।
জীববৈচিত্র্যে ভরপুর দ্বীপটির সংকটাপন্ন অবস্থা বিবেচনা করে পর্যটকের যাতায়াত নিষিদ্ধ করে পরিবেশ অধিদপ্তর। তিন বছর ধরে ছেঁড়াদিয়াসহ সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও দ্বীপের সুরক্ষায় ১৪ দফা বিধিনিষেধ আরোপ করে প্রচারণা চালিয়ে আসছে সরকারি এই দপ্তর। দ্বীপে লোকসমাগম সীমিত করে এক হাজারের নিচে নিয়ে আসার ঘোষণা দেওয়া হলেও বাস্তব চিত্র তার উল্টো বলে জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা।
এখন ছেঁড়াদিয়ায় পর্যটকে গিজগিজ অবস্থা। ৫০টির বেশি নৌযানে (স্পিডবোট ও কাঠের ট্রলার) সমুদ্র পাড়ি দিয়ে কিংবা সৈকতের বালুচর ডিঙিয়ে তিন শতাধিক ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে (টমটম) চড়ে শত শত পর্যটক ছেঁড়াদিয়াতে যাতায়াত করছেন। তাতে ধ্বংস হচ্ছে বালুচরে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, প্রবাল-শৈবালসহ জীববৈচিত্র্য।
সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ রক্ষায় গণমাধ্যমে ১৪ দফা বিধিনিষেধ জারি করা ছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অভিযান, সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড চোখে পড়ে না। সৈকত দখল করে স্থাপন করা হয়েছে শতাধিক দোকানপাট। প্লাস্টিক বর্জ্যসহ ময়লা–আবর্জনায় ভরপুর দ্বীপের সৈকত, হাটবাজার, রাস্তাঘাট। এসব বর্জ্য চলে যাচ্ছে সাগরে।
দেখা গেছে, সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পশ্চিম সৈকত ধরে ১০-১২টি টমটম দক্ষিণ দিকে ছুটে চলেছে। প্রতিটি টমটমে চার থেকে ছয়জন নারী–পুরুষ। দ্বীপের একেবারে দক্ষিণ অংশে গিয়ে পর্যটকেরা নৌকা কিংবা পায়ে হেঁটে ছেঁড়াদিয়ায় যাচ্ছেন। সৈকত দিয়ে টমটম চলার সময় চাপা পড়ছে হাজারো শামুক-ঝিনুক, লাল কাঁকড়া, সামুদ্রিক প্রাণী; ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য।
বর্জ্য নিক্ষেপ, গলাচিপা থেকে দ্বীপের দক্ষিণ দিকে পর্যটকের যাতায়াত; মোটরসাইকেল, টমটম কিংবা বাইসাইকেলের চলাচল, দ্বীপের চারপাশে নৌভ্রমণ, সামুদ্রিক কাছিমের ডিম পাড়ার স্থানে চলাচল, রাতের বেলায় সৈকতে আলো জ্বালানো এবং ফ্লাশলাইট ব্যবহার করে ছবি ও ভিডিও চিত্র ধারণ নিষিদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে এর কোনোটি সেখানে মানা হচ্ছে না। তিন শতাধিক মোটরসাইকেল ও এক হাজারের বেশি বাইসাইকেলের দৌড়ঝাঁপে ঠিকমতো হাঁটাও যায় না।
সৈকতে হইচই, উচ্চ স্বরে গানবাজনা, বারবিকিউ পার্টি নিষিদ্ধ করা হলেও প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে ৪০-৭০টি রেস্তোরাঁতে ভাজা মাছ বেচাবিক্রির ধুম। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বাতির আলোয় আলোকিত থাকে পুরো সৈকত। দ্বীপের সৈকত থেকে প্রবাল, শামুক, ঝিনুক, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, তারা মাছ, রাজ কাঁকড়া, সামুদ্রিক শৈবাল এবং কেয়া ফল সংগ্রহ ও কেনাবেচা নিষিদ্ধ করা হলেও কোনোটি বন্ধ নেই।
জানাগেছে, দ্বীপের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় জেলা পুলিশের সদস্য আছেন ১২ জন। দ্বীপের লোকসংখ্যা সাড়ে ১০ হাজার। সেন্ট মার্টিন পুলিশ ফাঁড়ির এক কর্মকর্তা বলেন, ছেঁড়াদিয়ায় পর্যটক যাতায়াতের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পুলিশের একার পক্ষে তা বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
পরিবেশ অধিদপ্তর সেন্ট মার্টিন কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন সেখানে (সেন্ট মার্টিনে) পর্যটক যাচ্ছেন। স্পিডবোট, ট্রলার ও টমটমে তাঁরা ছেঁড়াদিয়াতে যাচ্ছেন-আসছেন। সবকিছু চলছে আগের মতোই। পরিবেশ অধিদপ্তরের সেন্ট মার্টিন কার্যালয়ে তিনি ছাড়া আর কেউ নেই। এ কারণে দ্বীপে অভিযানও পরিচালনা করা যাচ্ছে না বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh