মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার উত্তর পূর্বাঞ্চল ও ভারতের আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জ জেলার পাথারকান্দি ঘেসে অবস্থিত পাথারিয়া হিলস্ রিজার্ভ ফরেস্ট। ভারত-বাংলাদেশের যৌথ এই মিশ্র চির সবুজ বন প্রাকৃতিক নিয়মে সৃষ্ট এক অপরুপ দৃশ্যপট। উঁচু-নিচু সারি সারি টিলার মধ্যে দিয়ে বয়ে গেছে আঁকাবাঁকা ঝিরিপথ।
এর মধ্যে রয়েছে ছোট বড় বেশ কয়েকটি ঝর্ণা। স্থানীয় লোকজন এই ঝর্ণা গুলোর অবস্থান জানলেও নেই নির্দিষ্ট কোন নাম। স্থানীয়ভাবে অনেকেই ঝর্ণাগুলোকে কুরুং, কুন্ড বা ঝেরঝেরি নামে চিনে। এ পাহাড়ের আরেক অংশে রয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ জলপ্রপাত মাধবকুণ্ড।
সম্প্রতি পাথারিয়া হিলস রিজার্ভ ফরেস্টের জুড়ী উপজেলার লাঠিটিলা বনবিটে তিনটি ঝর্ণার সন্ধান মিলেছে। স্থানীয় পরিবেশকর্মী খোর্শেদ আলম ঝর্ণাগুলোর সন্ধান পান। পরিবেশকর্মী খোর্শেদ আলম ও গণমাধ্যমকর্মী ওমর ফারুক নাঈম দুজনে মিলে ঝর্ণাগুলোর নামকরণ করেন। এগুলো হচ্ছে মায়াবন, মায়াকানন ও সন্ধানী।
স্থানীয় পরিবেশকর্মীরা বলেন, জুড়ী উপজেলার লাঠিটিলা বনবিটের কয়েক কিলোমিটার ভেতরে ঢুকলেই ঝর্ণাগুলো পাওয়া যায়। পাথুরে পিচ্ছিল পথ মাড়িয়ে প্রায় ৪৫ মিনিট হাঁটলেই পৌঁছা যায় মায়াবন ঝর্ণায়। আর মায়াবনের পাশেই অবস্থিত মায়াকানন ঝর্ণাটি। মায়াবন ও মায়াকানন ঝর্ণাদ্বয়ের উচ্চতা যথাক্রমে প্রায় ২৫ ফুট ও ৩৫ ফুট। তবে সন্ধানী ঝর্ণায় পোঁছা কিছুটা কষ্টসাধ্য বটে। মায়াবন বা মায়াকানন ঝর্ণা থেকে আরোও ঘন্টা দুয়েক হাঁটলে দেখা মিলে সন্ধানী ঝর্ণার। সন্ধানীর উচ্চতা প্রায় ৬০ ফুট।
পরিবেশকর্মী খোর্শেদ আলম বলেন, সংরক্ষিত বনের প্রাণ-প্রকৃতি নিয়ে গবেষণার কাজ করতে বনের ভেতর ঘুরতে ঘুরতে ঝর্ণাগুলোর সন্ধান পাই। উঁচু পাহাড় বেয়ে পানির ধারা নিচে নেমে আসার দৃশ্য আমাকে বরাবরই মুগ্ধ করে। ঝর্ণাগুলোর কথা জানলে পর্যটকরা ভিড় জমাবে এখানে।
গণমাধ্যমকর্মী ওমর ফারুক নাঈম বলেন, পরিবেশকর্মী খোর্শেদ আলমের মাধ্যমে আমি ঝর্ণাগুলোর কথা জানতে পারি। খোর্শেদ আলম মায়াবনের নামকরণ করেন। মায়াবনের পাশেই অবস্থিত বলে আমরা দুজন মিলে আরেকটির নাম দেই মায়াকানন। আর সন্ধানী ঝর্ণাটি অনেক অনুসন্ধান করে বের করতে হয়েছে তাই নাম সন্ধানী।
সরেজমিনে দেখা যায়, লাঠিটিলা বনবিটের ভেতরে অবস্থিত ঝর্ণাগুলো দেখতে বেশ মনোমুগ্ধকর। মায়াবন ও মায়াকানন ঝর্ণায় যাওয়া কিছুটা সহজ হলেও সন্ধানী ঝর্ণায় পৌঁছার পথটা বেশ দূর্গম। তাছাড়া ঝর্ণাগুলো সংরক্ষিত বন এলাকায় থাকায় পর্যটকরা সহজে যেতে পারেন না বন বিভাগের অনুমতি ছাড়া।
পাথারিয়ায় এমন জানা-অজানা আরো অনেক ঝর্ণা রয়েছে। লাঠিটিলা বিটের রয়েছে ছোট বড় ৮-১০ টি ঝর্ণা। বিষকরম, তিগাঙ্গা, ময়নাছড়া ও হাটুভাঙ্গা সহ নাম না জানা আরো বেশ কয়েকটি ঝর্ণা। এবং বড়লেখার অংশে রয়েছে জোড়কুন্ড, সীতাকুন্ড, শুভাকাঙ্ক্ষীসহ ছোট বড় অনেক ঝর্ণা।
এগুলো মূলত মৌসুমী ঝর্ণা। বর্ষায় বৃষ্টির পানিতে ঝর্ণাগুলো স্বরূপে ফিরে আসে। তবে শীতে পানির প্রবাহ কমে আসে। কোন কোন ঝর্ণা আবার পানিশূন্যও হয়ে যায় শীতে।
স্থানীয় কয়েকজন বলেন, বনের গভীরে ঢুকলে আরো অনেক সুন্দর সুন্দর ঝর্ণা দেখা যায়। কিন্তু বনে ঢুকার জন্য তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। পাহাড়ী পথ খুব কষ্ট করে যেতে হয়। যাতায়াত ব্যবস্থা যদি সুন্দর হত তাহলে অনেক দূর থেকেও পর্যটকরা ঝর্ণাগুলো দেখতে আসতো।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ মৌলভীবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জুড়ীর লাঠিটিলা বনবিটের জানা-অজানা ঝর্ণা এবং সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হবে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে পর্যটন স্পটগুলোতে সার্বিক ব্যবস্থাপনা, যোগাযোগ, পর্যটকদের সার্বিক সুবিধা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে ট্রেনে কুলাউড়ায় নামবেন। কুলাউড়া থেকে জুড়ীতে যাবেন। অথবা বাসে ঢাকা টু বিয়ানীবাজারের গাড়ীতে উঠলে জুড়ী বীর মুক্তিযোদ্ধা এম.এ মুমিত আসুক চত্ত্বরে নামবেন। জুড়ী থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশা যোগে সরাসরি লাঠিটিলা বিজিবি ক্যাম্পে পৌঁছাবেন। সেখান থেকে স্থানীয় ট্যুরিস্ট গাইড নিয়ে যেতে পারবেন গন্তব্য স্থানে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh