টাঙ্গাইলের মধুপুরে রয়েছে শালবন। ইতিহাস আর ঐতিহ্য ঘেরা এই মধুপুর শালবন। বংশাই নদীর তীর ঘেঁষে এই উপজেলা অবস্থিত। ঐতিহাসিক মধুপুর গঢ়, জয়তেঁতুল গ্রামের ঝরনা, হরিণ ও বানরের আনাগোনা, চালা ও বাইদের চিত্রপট, সেই সাথে খাল-বিল। সব কিছু মিলি এক অপরূপ সুন্দর পরিবেশ। যা আপনাকে নিয়ে যাবে এক স্বপ্নের রাজ্যে।
দূর-দূরন্ত থেকে ভ্রমণকারীরা এখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ও বনভোজনের জন্য আসে। তবে শীত মৌসুমে বেশি পর্যটক ভীড় করে। এখানকার উঁচু-নিচু পাহাড়ি রাস্তা, ঘন অরণ্য ভ্রমণপিপাসুদের মুহূর্তেই প্রফুল্ল করে তোলে। দোখলা ওয়াচ টাওয়ার থেকে বনের সৌন্দর্য সকলকে বিমোহিত করে। দেখা মেলে বিরল প্রজাতির রক্ত চন্দন গাছ। বানর ও হনুমানের আনাগোনা ও পাখির কিচিরমিচির এ যেন এক জাদুকরী পরিবেশ।
১৯৬৬ সালে ৩০ একর জায়গা নিয়ে মধুপুর জাতীয় উদ্যানে স্থাপন করা হয় লহরিয়া হরিণ প্রজনন কেন্দ্র। এখানে বন্যপ্রাণী ও তরুলতা আর শাল গাছ দেখে মনে হবে কোনো শিল্পীর আকাঁ ছবি। দোখলা পিকনিক স্পট থেকে কিছু দূর সামনে গেলেই দেখা মেলে চিত্রা হরিণের। বানরের আনাগোনা দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। এছাড়া ময়ূর ও কচ্ছপ দেখা যায়। রয়েছে চোখ জুড়ানো সারিবদ্ধ সুউচ্চ রাবার গাছ। সহস্রাধিক গাছ নিয়ে প্রায় ৩ হাজার ১০ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত পীরগাছা রাবার বাগান। এখান থেকে আপনি রাবার সংগ্রহের ধাপগুলো সম্পর্কে ধারণা পাবেন। সুশীতল ছায়াতলে আবৃৎ পীরগাছা রাবার বাগান মধুপুর বনের সৌন্দর্য বহুগুণে বৃদ্ধি করেছে।
মধুপুর মায়াবী প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্য ও মধুপুর জাতীয় উদ্যানের জন্য সুপরিচিত। সৌন্দর্যে মোড়ানো বিএডিসির সুদীর্ঘ ক্যাম্পাস শহরের ইট-পাথরের জঞ্জাল থেকে আপনাকে এক চিলতে ফুরসত দেবে। আনারসের রাজধানী খ্যাত মধুপুর বাসস্ট্যান্ডে আনারসের ভাস্কর্য দেখতে পাবেন।
আনারসের জন্য প্রসিদ্ধ মধুপুরের আনারস বেচাকেনার বড় হাট অনুষ্ঠিত হয় জলছত্র নামক এলাকায়। এখানেই অবস্থিত বৃহত্তর কুষ্ঠ ব্যাধি হাসপাতাল। আছে সুবিশাল ভেষজ বনায়ন। কারিতাস সিল্ক ফ্যাক্টরি ও শোরুম। দুর্গাপুর গ্রামের পঞ্চপীরের মাজার এবং আম্বাড়িয়া গ্রামের জমিদার বাড়ি মধুপুরের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম।
মধুপুর শুধু প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে নয় বরং ইতিহাস ও ঐতিহ্যে আপনাকে মুগ্ধ করবে। ভিন্ন মাত্রার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা পেতে চাইলে লাল মাটি সমৃদ্ধ ও চালা ও বাইদের মন ভোলানো লুকোচুরির মধুপুর আদর্শ জায়গা। রাজধানী থেকে ১৩৭ কিলোমিটার সড়ক দূরত্বে অবস্থিত এটি। মধুপুরে সড়কপথে যোগাযোগের সুব্যবস্থা আছে। তাই এখনই পরিকল্পনা করুন ঘুরে আসার।