ঢাকা থেকে ১০৫ কিলোমিটারের দূরত্বে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার গলর বিল। প্রায় ৭৫ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এই বিলে রয়েছে প্রচুর লাল শাপলা। ত্রিশাল বাজার থেকে মাত্র ২০ মিনিটে পৌঁছে যাওয়া যায় প্রকৃতির এই নৈসর্গের মাঝে। নয়নাভিরাম গ্রামের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে যেতে হবে গলর বিলের খেয়াঘাটে। ডিঙি নৌকা চড়ে চলে যাওয়া যাবে এই বিলে। বিলের চারদিক যেন লালের সমুদ্র। মাঝেমধ্যে হঠাৎ চোখে পড়ে ফুটে থাকা সাদা শাপলার ওপর। এক অপার্থিব সৌন্দর্য বিলজুড়ে ভর করে আছে -যা অবর্ণনীয়।
পানির ওপর ভেসে থাকা শাপলাগাছ দুদিকে সরিয়ে এগিয়ে চলেছে আমাদের নৌকা। যতই এগিয়ে যাই, ততই মুগ্ধতা ভর করে। গলর বিলের শাপলার সৌন্দর্য ভিন্নমাত্রার। লাল শাপলার ফাঁকফোকর দিয়ে জেলেদের মাছ শিকারের দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। জগতের কি লীলাখেলা?
গলর বিলে প্রায় গলা পর্যন্ত পানি। এর চারপাশে ফুটন্ত লাল শাপলা। এর আদি নিবাস কারও জানা না থাকলেও, লাল শাপলা দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন প্রাকৃতিক জলাশয়ে পাওয়া যায়। দেশের বরিশাল, সিলেট, টাঙ্গাইল, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ জেলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের জলাশয়ে ফুটতে দেখা যায় লাল শাপলা। বরিশালের সাতলা এবং সিলেটের ডিবির হাওর বর্তমানে ভ্রমণপিয়াসিদের কাছে রীতিমতো যেন ভাইরাল। খুব শীগ্রই গলর বিলও লাল শাপলাপ্রেমীদের অন্যতম পছন্দের জায়গা হয়ে যাবে, এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।
গলর বিলে লাল শাপলার দেখা মেলে কার্তিক মাসের প্রায় মাঝামাঝি পর্যন্ত। নয়নাভিরাম গলর বিলে ভাসতে ভাসতে পুরো বিলে লাল আভার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে থাকে খুবই মৃদু এক সুগন্ধ। তাজা শাপলা নাকের কাছে ধরলেই শুধু সেই গন্ধ পাওয়া যায়। আমরা শাপলার সেই অতিমৃদু সুবাস নিয়ে ডিঙি ছেড়ে ডাঙ্গায় উঠতে কারো মন চাইবে না, আশা করি।
এই বিলের পাশেই বীররামপুর ভাটিপাড়া গ্রাম। এই গ্রামটিও সৌন্দর্যের দিক থেকে কম যায় না। স্থানীয়দের জীবনযাত্রায় এখনো সেই গ্রামীণ বিষয়টি আছে। তারা বন্ধুবৎসলও বটে। গ্রামে ঢোকার সময় চোখ আটকাবে লাল শাপলায়। দূর থেকে দেখলে মনে হবে লাল কাঁকড়ার বিশাল সমাবেশ। ঘাট পর্যন্ত খেতের আল ধরে যেতে যেতে একরাশ মুগ্ধতা ভর করবে। সব মিলিয়ে ময়মনসিংহের ত্রিশালের গলর বিল ভ্রমণ হতে পারে আপনার কিংবা আপনার পুরো পরিবারের জন্য অনন্য ভালো লাগার স্মৃতি।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে চলাচল করা বিভিন্ন পরিবহনের বাসে চড়ে নেমে যেতে হবে ত্রিশাল বাজার। পরে সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চেপে গলর বিল। এরপর ডিঙি নৌকা চড়ে বিলে ঘুরে বেড়ানো। যেকোনো শুক্রবারেই পরিবার নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন অসাধারণ এই জায়গাটিতে। যেখানের প্রাকৃতিক সৌর্ন্দয আপনার মনকে ভালো করে তুলবে অনায়াসে।